সেখ কুতুবউদ্দিন: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনাও নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর। বিশেষ করে বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠক্রমের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য প্রয়াস শুরু হয়েছে। এবার তা কার্যকর করার উদ্যোগ নিল সংশ্লিষ্ট দফতর। ডিরেক্টরেট অব মাদ্রাসা এডুকেশন (ডিএমই) আবিদ হোসেন পুবের কলমকে বলেন, মাদ্রাসাগুলির উন্নয়ন করোনা পরিস্থিতির আগে থেকেই চলছে। আরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই উদ্যোগ এবার কার্যকর করতে চলেছে দফতর। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ১০০টি উচ্চ মাধ্যমিক মাদ্রাসায় কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা হবে। এক একটি মাদ্রাসায় দেওয়া হবে ২১টি কম্পিউটার সহ অন্যান্য সরঞ্জাম। এক একটি মাদ্রাসাকে দেওয়া হবে ২০ লক্ষ টাকা করে।
অন্যদিকে, সদ্য মাদ্রাসায় নিযুক্ত কম্পিউটার শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতির আগে অর্থাৎ ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ৩০০ মাদ্রাসায় স্মার্ট ক্লাসরুম দেওয়া হয়েছে। আরও ৩০০ মাদ্রাসায় দুটি করে মোট ৬০টি স্মার্ট ক্লাসরুম দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিরেক্টরেট অব মাদ্রাসা এডুকেশন (ডিএমই)। এই বিষয়ে ডিএমই আবিদ হোসেন জানান, স্মার্ট ক্লাসরুম গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি মাদ্রাসাকে ৬.৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। মার্চ মাসের মধ্যেই আরও ৩০০ মাদ্রাসায় স্মার্ট ক্লাসরুম গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
পড়ুয়াদের নিরাপত্তার স্বার্থে নেওয়া হচ্ছে একাধিক ব্যবস্থা। মাদ্রাসায় স্বয়ংক্রিয় অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম-নিয়েও কোনও কোনও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রয়াস নিয়েছে। অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে পড়াশোনার ব্যবস্থা, পড়ুয়াদের আইটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যবস্থার পাশাপাশি ডিজিটাল পরিচয়পত্রও ডিজিটেলাইজেশনের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে অনেক মাদ্রাসা। সংখ্যালঘু দফতর জানিয়েছে, অনেক মাদ্রাসায় স্মার্ট ক্লাস রুম থাকলেও কিছু মাদ্রাসায় বাকী রয়েছে। সেগুলিতেও যাতে এই ব্যবস্থা চালু হয়, তার উদ্যোগ নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতর। চলতি শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর।
মাদ্রাসার শিক্ষকদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অধিকাংশ মাদ্রাসায় স্মার্ট ক্লাস রুম চালু হয়েছে। সব মাদ্রাসায় যাতে স্মার্ট ক্লাসের সুযোগ পায়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিএমই আবিদ হোসেন বলেন, আলোচনা চলছে। তবে কীভাবে চালু করা হবে, আলোচনার মাধ্যমেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, স্মার্ট ক্লাস রুম, পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন ভাবে মাদ্রাসাগুলি সহযোগিতা পাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে মাদ্রাসার এক প্রধান শিক্ষক বলেন, রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ ভালো। তবে বহু মাদ্রাসায় অপারেটরের অভাবে মেশিনগুলি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বলেও অভিযোগ। পড়ুয়ারা সুবিধা পায়, তার জন্য শিক্ষকদের আইটি, স্মার্ট ক্লাস রুমের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়েছে একাধিক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরাও পাচ্ছে ট্যাব। করোনা পরিস্থিতির পর সাধারণত দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা ট্যাব পেত। এবার থেকে স্কুলের মতো মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাও ট্যাব পাবে। ট্যাব বা স্মার্টফোন কিনতে একাদশ শ্রেণিতে উঠলেই পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। বলা হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-সহ অত্যাধুনিক পাঠক্রম প্রণয়নের মাধ্যমে ধাপে ধাপে মাদ্রাসাগুলোকে উন্নত করা হবে।রাজ্য সরকার অনুমোদিত ৬১৪টি মাদ্রাসা মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক রয়েছে ৩৪৪টি মাদ্রাসায়। তার মধ্যে বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত ৮০টিতে। এই মাদ্রাসাগুলিতে ছাত্র ভর্তির সংখ্যা আগে থেকে বেড়েছে।