ওয়াশিংটন: অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক আরও ১১৯ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকা। ১৫ তারিখ রাতে পাঞ্জাবের অমৃতসর বিমানবন্দরে আমেরিকার সেনা কার্গো বিমান নামার কথা রয়েছে। কিন্তু বিমান ভারতের মাটি ছোঁয়ার আগেই শুরু হয়ে গেছে শিকল নিয়ে জোর বিতর্ক। প্রথম বিমানে ৪ ফেব্রুয়ারি যে ১০৪ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের হাতে-পায়ে ছিল বেড়ি ও কোমরে ছিল শিকল বাঁধা। জঙ্গি বা আসামিদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়, এইসব ভারতীয়দের সঙ্গে তেমনই ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় বিমান নিয়ে সকলেই আশা করছিল হয়তো এবার বেড়ি পরানো হবে না ভারতীয়দের। কেন-না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’দিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মোদি ট্রাম্পকে পরম মিত্র বলে উল্লেখ করেছেন। সেজন্য কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ভারতীয় কূটনীতির সামনে কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। দেখা যাক অভিবাসীরা শিকল ছাড়া ফেরত আসেন কি না। আজ রাতেই জানা যাবে প্রকৃত অবস্থা।
উল্লেখ্য, প্রথম বিমান আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার এক সামরিক ঘাঁটি থেকে ভারতের দিকে রওনা দেওয়ার পর পরই আমেরিকার বর্ডার পেট্রোল ভিডিয়ো জারি করে দেয়। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে নারী ও মহিলা বাদে সব ভারতীয় বিমানযাত্রীর হাতে-পায়ে বেড়ি। অমৃতসরে পৌঁছে ভারতীয়রা তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের বর্ণনা দিতে থাকলে বিড়ম্বনা বাড়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের। নীরবে সমালোচনা সহ্য করতে হয় তাদের। বিদেশমন্ত্রী শুধু জানিয়েছিলেন এটা প্রথম নয়, এর আগেও আমেরিকা অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠিয়েছে। বিরোধীরা দাবি তোলে ভারত কেন নিজের দেশের বিমান পাঠাতে পারল না ফেরত আনার জন্য? ভারত কেন চেষ্টা করছে না অভিবাসীদের ফেরত আটকাতে? আরও প্রশ্ন ওঠে, আমেরিকার হিসাব অনুযায়ী ১৭ লক্ষ অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। ভারতের কাছে কেন আগাম হিসেব নেই এই সব অভিবাসী নিয়ে। কেউ ভিসা নিয়ে গিয়ে ফেরত আসেনি, আর কেউ বা সীমান্ত টপকে সে-দেশে প্রবেশ করেছে বহু পথ ঘুরে। তবুও ভারতের বিদেশমন্ত্রকের কাছে তাদের হিসাব থাকবে না কেন? এইসব প্রশ্নের একমাত্র জবাব ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি তাঁর প্রভাব খাটিয়ে বা তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয়ের মাধ্যমে অভিবাসী ফেরত আটকাতে পারতেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি বোঝা যাচ্ছে যে, মোদির ফিরে আসার পর পরই আমেরিকা থেকে দ্বিতীয় প্লেন আসছে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে। পরদিন রবিবার রাতেও নামতে পারে আরও একটি প্লেন। আর সেই প্লেনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ক্রমশই গরম হয়ে উঠছে নয়াদিল্লির রাজনীতি। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ কেন অমৃতসরকে বেছে নেওয়া হয়েছে আমেরিকার প্লেন অবতরণের জন্য। এবার যারা ফেরত আসছেন তাদের মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবের ৬৭ জন, হরিয়ানার ৩৩ জন, গুজরাতের ৮ জন। প্রথম বিমানে ছিলেন গুজরাতের ৩৩ জন, হরিয়ানার ৩৩ জন, পাঞ্জাবের ৩০ জন। বিশাল অর্থ ব্যয় করে তারা আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন। সেইসব দালাল সম্পর্কে কেন কোনও ধারণা ছিল না সরকারের, সেই প্রশ্ন করছেন বিরোধীরা। তবে দ্বিতীয় বিমান নামার পরই নতুন করে শুরু হয়ে যাবে বিতর্কের রাজনীতি। মোদি নিজেকে ট্রাম্পের বন্ধু বলে জাহির করেন। তিনি যে অভিবাসীদের ফেরত আসা আটকাতে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবেন না তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে। তবে মোদি ট্রাম্পের কাছ থেকে ফিরে আসার পরেই বিজেপি ভারতীয়দের সঙ্গে এমন ‘ব¨ি’র মতো আচরণের নি¨া জানিয়েছে। এবার মোদি তো বৈঠক করে ফিরে এলেন। এবার কি তবে শিকলছাড়াই আসবে ভারতীয়রা? নাকি বন্ধুত্বের মূল্য চুকিয়ে শিকল পরিয়েই উড়োজাহাজে ওঠানো হবে ভারতীয়দের!