১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীলঙ্কায় দিনে ১৩ ঘণ্টার ‘ব্ল্যাকআউট’, হাসপাতালে বন্ধ অস্ত্রোপচার  

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার
  • / 2

বিশেষ প্রতিবেদক: আর্থিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা সরকার ঘোষণা করেছে তারা সারাদেশে প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখবে। এই ব্ল্যাকআউটের ব্যবস্থা এজন্য করা হচ্ছে যে শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে সরবরাহ করার মতো উপযুক্ত জ্বালানি নেই। এ দিকে শ্রীলঙ্কার সমস্ত হাসপাতাল অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে। এর কারণ হল শুধু বিদ্যুৎ নয়, আর্থিক সংকটে জীবনদায়ী ওষুধপত্রও হাসপাতালগুলিতে নেই। ওষুধ না মেলার কারণ বাইরে থেকে ওষুধ আমদানি কিংবা দেশে তৈরি ওষুধ কেনার মতো আর্থিক বরাদ্দ কলম্বো সরকারের হাতে নেই।

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ। ১৯৪৮ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কা যে চরম আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই রকম অবস্থা আগে কখনোই এই দ্বীপরাষ্ট্রে দেখা যায়নি। শ্রীলঙ্কায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু কথায় বলে দুর্ভাগ্য একা আসে না। শ্রীলঙ্কায় ভালো বর্ষণ হয়নি। তাই জলবিদ্যুতের জলাধারগুলিতে পানি খুবই কমে গেছে। ফলে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে চরমভাবে ব্যাহত করছে।

শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রায় ১০ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তারা যেন কার্যালয়ে না এসে বাড়ি থেকেই কাজ করার চেষ্টা করেন। এর ফলে যাতায়াতের জন্য পেট্রোল ডিজেল ও গ্যাস বাঁচবে। এ ছাড়া বেসরকারি ক্ষেত্রে রয়েছে ১৩ লক্ষ কর্মচারী। তাদেরকে আগামী ২ দিন অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয়ই এর উদ্দেশ্য।

এই সংক্রান্ত আর একটি বড় খবর হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা ও ভাণ্ডার ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আর এর ফলে শ্রীলঙ্কা সরকার অতিপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দামও পরিশোধ করতে পারছে না। এর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি খাদ্যদ্রব্য ও জীবনদায়ী ওষুধ।

এ দিকে ৩৭ হাজার টন ডিজেল নিয়ে একটি জাহাজ শ্রীলঙ্কায় আপেক্ষা করে আছে। সরকারের হাতে টাকা নেই বলে তারা এর দাম ৫২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে জাহাজটি থেকে জ্বালানি খালাস করা যাচ্ছে না। এ দিকে কর্তৃপক্ষ সাবধান করে দিয়েছে, আগামী ২ দিনে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন। হাজার হাজার নাগরিক প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। বহু জায়গায় শাসকদের উচ্ছেদ করারও দাবি শোনা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা এই অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আইএমএফ এবং ভারত ও চিনের কাছ থেকে ঋণ চেয়েছে। কিন্তু এই ঋণ কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার একটি মূল আমদানি ছিল বিদেশি ট্যুরিস্টদের আগমন। শ্রীলঙ্কার চার্চে বোমা বিস্ফোরণ ও কোভিডের জন্য এই পর্যটন ব্যবসাতেও ব্যাপক ভাটা পড়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার আমদানিও তলানিতে এসে ঠেকেছে।

এ দিকে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছেন, ভারত এই দুর্দিনে শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়াবে। আপাতত ১০০ কোটি ডলার ঋণ ও খাদ্যসামগ্রী ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করার জন্য অঙ্গীকার করেছেন। উল্লেখ্য শ্রীলঙ্কায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ভারত ও চিনের মধ্যে রেষারেষিও রয়েছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শ্রীলঙ্কায় দিনে ১৩ ঘণ্টার ‘ব্ল্যাকআউট’, হাসপাতালে বন্ধ অস্ত্রোপচার  

আপডেট : ১ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার

বিশেষ প্রতিবেদক: আর্থিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা সরকার ঘোষণা করেছে তারা সারাদেশে প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখবে। এই ব্ল্যাকআউটের ব্যবস্থা এজন্য করা হচ্ছে যে শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে সরবরাহ করার মতো উপযুক্ত জ্বালানি নেই। এ দিকে শ্রীলঙ্কার সমস্ত হাসপাতাল অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে। এর কারণ হল শুধু বিদ্যুৎ নয়, আর্থিক সংকটে জীবনদায়ী ওষুধপত্রও হাসপাতালগুলিতে নেই। ওষুধ না মেলার কারণ বাইরে থেকে ওষুধ আমদানি কিংবা দেশে তৈরি ওষুধ কেনার মতো আর্থিক বরাদ্দ কলম্বো সরকারের হাতে নেই।

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ। ১৯৪৮ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কা যে চরম আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই রকম অবস্থা আগে কখনোই এই দ্বীপরাষ্ট্রে দেখা যায়নি। শ্রীলঙ্কায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু কথায় বলে দুর্ভাগ্য একা আসে না। শ্রীলঙ্কায় ভালো বর্ষণ হয়নি। তাই জলবিদ্যুতের জলাধারগুলিতে পানি খুবই কমে গেছে। ফলে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে চরমভাবে ব্যাহত করছে।

শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রায় ১০ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তারা যেন কার্যালয়ে না এসে বাড়ি থেকেই কাজ করার চেষ্টা করেন। এর ফলে যাতায়াতের জন্য পেট্রোল ডিজেল ও গ্যাস বাঁচবে। এ ছাড়া বেসরকারি ক্ষেত্রে রয়েছে ১৩ লক্ষ কর্মচারী। তাদেরকে আগামী ২ দিন অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয়ই এর উদ্দেশ্য।

এই সংক্রান্ত আর একটি বড় খবর হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা ও ভাণ্ডার ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আর এর ফলে শ্রীলঙ্কা সরকার অতিপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দামও পরিশোধ করতে পারছে না। এর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি খাদ্যদ্রব্য ও জীবনদায়ী ওষুধ।

এ দিকে ৩৭ হাজার টন ডিজেল নিয়ে একটি জাহাজ শ্রীলঙ্কায় আপেক্ষা করে আছে। সরকারের হাতে টাকা নেই বলে তারা এর দাম ৫২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে জাহাজটি থেকে জ্বালানি খালাস করা যাচ্ছে না। এ দিকে কর্তৃপক্ষ সাবধান করে দিয়েছে, আগামী ২ দিনে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন। হাজার হাজার নাগরিক প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। বহু জায়গায় শাসকদের উচ্ছেদ করারও দাবি শোনা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা এই অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আইএমএফ এবং ভারত ও চিনের কাছ থেকে ঋণ চেয়েছে। কিন্তু এই ঋণ কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার একটি মূল আমদানি ছিল বিদেশি ট্যুরিস্টদের আগমন। শ্রীলঙ্কার চার্চে বোমা বিস্ফোরণ ও কোভিডের জন্য এই পর্যটন ব্যবসাতেও ব্যাপক ভাটা পড়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার আমদানিও তলানিতে এসে ঠেকেছে।

এ দিকে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছেন, ভারত এই দুর্দিনে শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়াবে। আপাতত ১০০ কোটি ডলার ঋণ ও খাদ্যসামগ্রী ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করার জন্য অঙ্গীকার করেছেন। উল্লেখ্য শ্রীলঙ্কায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ভারত ও চিনের মধ্যে রেষারেষিও রয়েছে।