২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২০২২ সালে মঞ্চে ছুরিকাঘাত, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন রুশদি

সুস্মিতা
  • আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 15

নিউ ইয়র্ক: আদালতে মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিয়েছেন লেখক সলমান রুশদি। তাঁর হামলাকারীর বিরুদ্ধে এদিন তিনি মুখ খোলেন।
অভিযোগ, ২৭ বছর বয়সী হাদি মাতার ২০২২ সালের আগস্ট মাসে রুশদির ওপর হামলা চালিয়েছিল। ছুরি দিয়ে একাধিকবার হামলা চালিয়েছিল সে। হামলার ফলে ৭৭ বছর বয়সী রুশদির এক চোখে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েক মাস চিকিৎসার পর অবশ্য তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সেদিনের সভায় রুশদির সঙ্গে ভাষণ দিতে আসা আরও এক বক্তাও আহত হয়েছিলেন। অভিযুক্তকে সনাক্ত করে রুশদি বলেন, ও অনেকবার আমাকে আঘাত করেছিল। আঘাতের চোটে আমি আর উঠে দাঁড়াতেই পারিনি। রুশদি দাবি করেন, তাঁকে ৫০ বার ছুরি মারা হয়েছে।
মাতারের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে মাতার দাবি করেছে সে দোষী নয়। মাতার নিউ জার্সির ফেভারভিউয়ের বাসিন্দা। সোমবার আদালতে তাকে প্রবেশ করানোর সময় মাতার শান্তভাবে “ফ্রি প্যালেস্টাইন” স্লোগান দেয়।
সোমবার পশ্চিম নিউ ইয়র্কে এই মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারকরা আদালতের ভিতরে প্রথমবার এই ঘটনা শোনেন। ট্রায়ালের প্রথম সাক্ষী ছিলেন চাটাউকুয়া ইনস্টিটিউশনের একজন প্রশাসক, যিনি বলেন, তিনি মঞ্চে ছুরিটি পেয়েছিলেন একজন রেভারেন্ডের কাছ থেকে, যিনি তাকে এটি দেন। ডেবোরাহ মুর কুশমাউল বলেন, তিনি তৎক্ষণাৎ এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন। হামলার পর মাতারকে আটক করে দর্শকরা। সে এখন পর্যন্ত আটক আছে । তবে সে নিজেকে বারবার নির্দোষ বলে দাবি করেছে। জানা গিয়েছে এই বিচার এক বা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে । বিচার চলাকালীন বিচারকরা সেই দিনকার ভিডিও এবং ছবিও দেখবেন বলে জানা গিয়েছে।

জেলা এটর্নি জেসন শ্মিড্ট বলেন, “ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটেছিল যে আক্রমণের শিকার ব্যক্তি, মি. রুশদি এবং তার পাশে বসে থাকা মি. রিসও বুঝতে পারেননি কী ঘটছে । এটা ভুল পরিচয়ের মামলা নয়। মাতারই সেই ব্যক্তি, যিনি রুশদিকে কোনো প্ররোচনা ছাড়াই আক্রমণ করেছেন।” রুশদি শেষ পর্যন্ত উঠে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, এবং মাতার তাকে তাড়া করে, অন্যরা আক্রমণকারীকে ধরে ফেলে বলে শ্মিড্ট জানান। রিস, পিটসবার্গের সিটি অফ অ্যাসাইলামের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও তার চোখে চোট পান।

চাটাউকুয়া ইনস্টিটিউশনের একজন কর্মচারী সাক্ষ্য দেন যে, তিনি যখন দেখেন মঞ্চে এক ব্যক্তি রুশদিকে আক্রমণ করছে, তখন তিনি ব্যাকস্টেজ থেকে দৌড়ে এসে ঘটনাটি থামানোর চেষ্টা করেন। “আমি যত দ্রুত পারি দৌড়ে গেলাম, যাতে ঘটনাটি থামানো যায়,” বলেন জর্ডান স্টিভস। তিনি ছিলেন সেদিনের অনুষ্ঠানের মিডিয়া রিলেশনস কো-অর্ডিনেটর ।
স্টিভস সোমবারের দুই সাক্ষীর মধ্যে একজন মাতারকে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন।

১৯৮৯ সালে তার উপন্যাস “দ্য স্যাটানিক ভার্সেস” প্রকাশের পর থেকেই রুশদি তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। কারণ, ওই বইয়ে তিনি ইসলাম ধর্মের অবমাননা করেছিলেন। তারপরেই ইরানের আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনি রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। রুশদি বছরের পর বছর গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯ সালে দেওয়া সেই ফতোয়ার ৩৬ তম বার্ষিকী। তার মধ্যেই এই ট্রায়াল শুরু হয়েছে। মাতারের পক্ষের আইনজীবী, নাথানিয়েল ব্যারোন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায়, তাই ট্রায়ালের শুরুতে উপস্থিত হতে পারেননি। বিচারক ডেভিড ফোলি, ডিফেন্সের দেরি করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ব্যারোনের সহকারীকে তার পক্ষে বক্তব্য দিতে নির্দেশ দেন। পাবলিক ডিফেন্ডার সহকারী লিন শাফার বিচারকদের বলেন যে, প্রসিকিউটররা ভিডিও এবং ছবির সাহায্যে মাতারের অপরাধ প্রমাণ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, এই মামলা ততটা সরল নয়, যেভাবে প্রসিকিউটররা তুলে ধরেছেন।

একটি আলাদা অভিযোগে, ফেডারেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, মাতার লেবাননের মিলিট্যান্ট গ্রুপ হিজবুল্লাহর সমর্থক এবং ২০০৬ সালে গ্রুপের তৎকালীন নেতা হাসান নাসরাল্লাহর একটি ভাষণে সে এমন হামলার সমর্থন পেয়েছিল। সেই মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে নির্ধারিত হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

২০২২ সালে মঞ্চে ছুরিকাঘাত, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন রুশদি

আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার

নিউ ইয়র্ক: আদালতে মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিয়েছেন লেখক সলমান রুশদি। তাঁর হামলাকারীর বিরুদ্ধে এদিন তিনি মুখ খোলেন।
অভিযোগ, ২৭ বছর বয়সী হাদি মাতার ২০২২ সালের আগস্ট মাসে রুশদির ওপর হামলা চালিয়েছিল। ছুরি দিয়ে একাধিকবার হামলা চালিয়েছিল সে। হামলার ফলে ৭৭ বছর বয়সী রুশদির এক চোখে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েক মাস চিকিৎসার পর অবশ্য তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সেদিনের সভায় রুশদির সঙ্গে ভাষণ দিতে আসা আরও এক বক্তাও আহত হয়েছিলেন। অভিযুক্তকে সনাক্ত করে রুশদি বলেন, ও অনেকবার আমাকে আঘাত করেছিল। আঘাতের চোটে আমি আর উঠে দাঁড়াতেই পারিনি। রুশদি দাবি করেন, তাঁকে ৫০ বার ছুরি মারা হয়েছে।
মাতারের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে মাতার দাবি করেছে সে দোষী নয়। মাতার নিউ জার্সির ফেভারভিউয়ের বাসিন্দা। সোমবার আদালতে তাকে প্রবেশ করানোর সময় মাতার শান্তভাবে “ফ্রি প্যালেস্টাইন” স্লোগান দেয়।
সোমবার পশ্চিম নিউ ইয়র্কে এই মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারকরা আদালতের ভিতরে প্রথমবার এই ঘটনা শোনেন। ট্রায়ালের প্রথম সাক্ষী ছিলেন চাটাউকুয়া ইনস্টিটিউশনের একজন প্রশাসক, যিনি বলেন, তিনি মঞ্চে ছুরিটি পেয়েছিলেন একজন রেভারেন্ডের কাছ থেকে, যিনি তাকে এটি দেন। ডেবোরাহ মুর কুশমাউল বলেন, তিনি তৎক্ষণাৎ এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন। হামলার পর মাতারকে আটক করে দর্শকরা। সে এখন পর্যন্ত আটক আছে । তবে সে নিজেকে বারবার নির্দোষ বলে দাবি করেছে। জানা গিয়েছে এই বিচার এক বা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে । বিচার চলাকালীন বিচারকরা সেই দিনকার ভিডিও এবং ছবিও দেখবেন বলে জানা গিয়েছে।

জেলা এটর্নি জেসন শ্মিড্ট বলেন, “ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটেছিল যে আক্রমণের শিকার ব্যক্তি, মি. রুশদি এবং তার পাশে বসে থাকা মি. রিসও বুঝতে পারেননি কী ঘটছে । এটা ভুল পরিচয়ের মামলা নয়। মাতারই সেই ব্যক্তি, যিনি রুশদিকে কোনো প্ররোচনা ছাড়াই আক্রমণ করেছেন।” রুশদি শেষ পর্যন্ত উঠে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, এবং মাতার তাকে তাড়া করে, অন্যরা আক্রমণকারীকে ধরে ফেলে বলে শ্মিড্ট জানান। রিস, পিটসবার্গের সিটি অফ অ্যাসাইলামের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও তার চোখে চোট পান।

চাটাউকুয়া ইনস্টিটিউশনের একজন কর্মচারী সাক্ষ্য দেন যে, তিনি যখন দেখেন মঞ্চে এক ব্যক্তি রুশদিকে আক্রমণ করছে, তখন তিনি ব্যাকস্টেজ থেকে দৌড়ে এসে ঘটনাটি থামানোর চেষ্টা করেন। “আমি যত দ্রুত পারি দৌড়ে গেলাম, যাতে ঘটনাটি থামানো যায়,” বলেন জর্ডান স্টিভস। তিনি ছিলেন সেদিনের অনুষ্ঠানের মিডিয়া রিলেশনস কো-অর্ডিনেটর ।
স্টিভস সোমবারের দুই সাক্ষীর মধ্যে একজন মাতারকে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন।

১৯৮৯ সালে তার উপন্যাস “দ্য স্যাটানিক ভার্সেস” প্রকাশের পর থেকেই রুশদি তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। কারণ, ওই বইয়ে তিনি ইসলাম ধর্মের অবমাননা করেছিলেন। তারপরেই ইরানের আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনি রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। রুশদি বছরের পর বছর গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯ সালে দেওয়া সেই ফতোয়ার ৩৬ তম বার্ষিকী। তার মধ্যেই এই ট্রায়াল শুরু হয়েছে। মাতারের পক্ষের আইনজীবী, নাথানিয়েল ব্যারোন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায়, তাই ট্রায়ালের শুরুতে উপস্থিত হতে পারেননি। বিচারক ডেভিড ফোলি, ডিফেন্সের দেরি করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ব্যারোনের সহকারীকে তার পক্ষে বক্তব্য দিতে নির্দেশ দেন। পাবলিক ডিফেন্ডার সহকারী লিন শাফার বিচারকদের বলেন যে, প্রসিকিউটররা ভিডিও এবং ছবির সাহায্যে মাতারের অপরাধ প্রমাণ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, এই মামলা ততটা সরল নয়, যেভাবে প্রসিকিউটররা তুলে ধরেছেন।

একটি আলাদা অভিযোগে, ফেডারেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, মাতার লেবাননের মিলিট্যান্ট গ্রুপ হিজবুল্লাহর সমর্থক এবং ২০০৬ সালে গ্রুপের তৎকালীন নেতা হাসান নাসরাল্লাহর একটি ভাষণে সে এমন হামলার সমর্থন পেয়েছিল। সেই মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে নির্ধারিত হবে।