কিবরিয়া আনসারী: পেটে অসহ্য যন্ত্রণা, সঙ্গে রক্তক্ষরণ। জটিল রোগ নিয়ে ভুগছিলেন গার্ডেনরিচের মহেশতলার বাসিন্দা আলিয়া পারভিন। জীবন হারাতে বসেছিলেন বছর ঊনচল্লিশের মহিলা। প্রথমে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করান ওই মহিলা। বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করার পর মহিলার পেটে বড় আকারের টিউমার ধরা পড়ে। তারপরই চিকিৎসকরা জানান, দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে রোগীর। কিন্তু অস্ত্রোপচারে খরচ শুনে মাথায় হাত পড়ে যায় সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবারটির। যদিও রোগীর স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থাকলেও তাতে কোনও লাভ হয়নি। রোগীর এক আত্মীয় জানায়, স্বাস্থ্যসাথীতে সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার সম্ভব নয় বলে জানায় বেসরকারি হাসপাতাল। অন্তত ৫০ শতাংশ টাকা জমা করতে বলা হয়। বাকি ৫০ শতাংশ টাকা স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে নেওয়া হবে। বিপুল অঙ্কের টাকা দিতে না পারায় ওই হাসপাতাল আর চিকিৎসা করেনি।
জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতাল মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর কলকাতার নবনির্মিত ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন আলিয়া পারভিন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। পেটে যে বড় আকারের টিউমার দেখা দেয় তা দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। অন্যথায় রোগীর প্রাণের ঝুঁকি বাড়বে বলেই মনে করেন চিকিৎসকরা। আর সময় নষ্ট করেনি ইসলামিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দ্রুত চার সদস্যের এক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়। টিমের নেতৃত্বে ছিলেন স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাইকা আহমেদ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মেডিক্যাল টিমের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় সফলভাবে রোগীর অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ হয়। রোগীর পেট থেকে সাড়ে চার কিলো ওজনের টিউমার বের করা হয়। চিকিৎসক সাইকা আহমেদ জানিয়েছেন, ‘এ ধরনের রোগ বিরল। পারভিনের পেটে যে সাইজের টিউমার ছিল তাও বিরল। তবে দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হত না। এ ধরনের বড় অস্ত্রোপচার সব সময়ই চ্যালেঞ্জের। আমাদের হাতে সময় খুব কম ছিল। আমরা সময় নষ্ট না করে রোগীকে বাঁচাতে কঠিন অস্ত্রোপচার করি।’বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন কর্তৃপক্ষ। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন ইসলামিয়া হাসপাতালের কার্যকরী সভাপতি সাহাবুদ্দিন হায়দার, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার রুহিল আলম, চিকিৎসক সাইকা আহমেদ। রুহিল আলম বলেন, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষা করে বড় আকারের টিউমার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা জানান রোগীর দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। আমরা সময় নষ্ট না করে দ্রুত মেডিক্যাল টিম গঠন করি। ১৭ ফেব্রুয়ারি সফলভাবে রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। আলমের কথায়, ‘সব রকমের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য আমরা তৈরি। অর্থের জন্য যারা চিকিৎসা করাতে পারছেন না, তারা ইসলামিয়াতে আসুন। এখানে সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।’
কার্যকরী সভাপতি সাহাবুদ্দিন হায়দার অবশ্য বলেছেন, ‘এর আগে বিহারের এক রোগীর হার্টের সফল অস্ত্রোপচার করেছে ইসলামিয়া। এমন আরও উদাহরণ রয়েছে। মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে ইসলামিয়া। আল্লাহর অশেষ রহমতে একের পর জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য মিলছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইসলামিয়া মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা। সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছি।’
এ দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ-সহ চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন রোগীর পরিবার। পারভিনের বোন নাজিয়া খাতুন জানান, ‘প্রথমে যে হাসপাতালে দিদিকে নিয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে প্রচুর টাকা খরচ হত। আমরা অত টাকা দিতে পারিনি। ফলে সেখানে আর চিকিৎসা হয়নি। পরে ইসলামিয়াতে দিদিকে ভর্তি করি। এখানে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আমাদের এক পয়সাও দিতে হয়নি। দিদিকে নতুন জীবন দেওয়ার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন আগেও রেকর্ড গড়ে শহরের অন্যতম সুপার স্পেশালিটি ইসলামিয়া হাসপাতাল। বিহারের এক রোগীর জটিল অস্ত্রোপচার করে নতুন জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিল ইসলামিয়ার চিকিৎসকরা। নতুন রূপে গড়ে ওঠা শহরের এই হাসপাতাল যেভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছে, তাতে অনেকেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। সবমিলিয়ে ফের জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য নতুন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলেই মনে করছেন অনেকেই।