১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ৪০ জন যাত্রীর মৃত্যু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, বিবৃতি দিল রেল পুলিশ

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৭ জুন ২০২৩, বুধবার
  • / 14

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনা বহু মানুষের প্রাণ কেড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, কারণ দেহগুলিতে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এই রকম প্রায় ৪০টি দেহকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের দেহে ক্ষত, আঘাতের চিহ্ন নেই। মঙ্গলবার বালেশ্বর রাজ্যের রেল পুলিশ এমনই বিবৃতি দিয়েছে। বালেশ্বরে সরকারি রেলওয়ে থানায় দায়ের করা একটি এফআইআর অনুসারে, ট্রেন দুর্ঘটনার সময় ওভারহেড তারগুলি ছিঁড়ে কোচের উপর পড়ে। তখন সেই কোচে থাকা যাত্রীদের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়।
সাব ইন্সপেক্টর পি কুমার নায়েক জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় বিদ্যুতের লো টেনশন তারের সংস্পর্শে আসার পর বহু যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় বৈদ্যুতিক মাস্ট উল্টে গিয়ে ওভারহেড তারগুলি ছিঁড়ে কোচের উপর পড়ে। ফলে যাত্রীদের বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু হয়।

দক্ষিণপূর্ব শাখার সিপিআরও আদিত্য কুমার চৌধুরী জানিয়েছে, ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫৩১ জন যাত্রীকে এখনও পর্যন্ত ১৫ কোটি ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। যে সকল পরিবারগুলি তাদের পরিজন বা সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের কটক, মেদিনীপুর, ভুবনেশ্বর ও বালেশ্বরের হেল্প ডেস্ককে যোগাযোগ করতে বলেন সিপিআরও চৌধুরী।

উল্লেখ্য, শুক্রবারের অভিশপ্ত ট্রেন দুর্ঘটনার পরেই ভারতীয় রেলের তরফ থেকে নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ, গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ, স্বল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করে। সোমবার, রেলওয়ে ঘোষণা করেছে যে দুর্ঘটনায় জড়িত দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের টিকিটবিহীন যাত্রীদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার ওড়িশার কটকে এসে গত শুক্রবারের ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কটকের এসসিবি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় দিনের ওড়িশা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার একসঙ্গে কাজ করছে। তাঁরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের ১০৩টি মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে এবং ৯৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং ৩১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। সত্য প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা গিয়েছেন, সত্য প্রকাশ্যে আসা দরকার।”

এদিকে বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। রেলের তরফে জানানো হয়েছিল, ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার পরে আরও তিনজন আহতের মৃত্যুর পর, মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৮।

এদিকে তথ্য খতিয়ে দেখে ওড়িশা সরকার জানায়, মৃতের সংখ্যা ২৮৮। মঙ্গলবার ট্যুইট করে এই সংখ্যা জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে ২০৫ জনের দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। এবং দেহগুলি পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর ৮৩ জনের দেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তবে ওই দেহগুলিতে যাতে পচন না ধরে, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কার্যত মৃত্যুপুরীর রূপ নিয়েছে বালেশ্বর। বালেশ্বরের স্কুলে এখনও পড়ে শয়ে শয়ে লাশ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল থেকে মর্গের সামনে প্রিয়জনের ছবি হাতে নিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পরিজনেরা।

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ৪০ জন যাত্রীর মৃত্যু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, বিবৃতি দিল রেল পুলিশ

আপডেট : ৭ জুন ২০২৩, বুধবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনা বহু মানুষের প্রাণ কেড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, কারণ দেহগুলিতে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এই রকম প্রায় ৪০টি দেহকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের দেহে ক্ষত, আঘাতের চিহ্ন নেই। মঙ্গলবার বালেশ্বর রাজ্যের রেল পুলিশ এমনই বিবৃতি দিয়েছে। বালেশ্বরে সরকারি রেলওয়ে থানায় দায়ের করা একটি এফআইআর অনুসারে, ট্রেন দুর্ঘটনার সময় ওভারহেড তারগুলি ছিঁড়ে কোচের উপর পড়ে। তখন সেই কোচে থাকা যাত্রীদের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়।
সাব ইন্সপেক্টর পি কুমার নায়েক জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় বিদ্যুতের লো টেনশন তারের সংস্পর্শে আসার পর বহু যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় বৈদ্যুতিক মাস্ট উল্টে গিয়ে ওভারহেড তারগুলি ছিঁড়ে কোচের উপর পড়ে। ফলে যাত্রীদের বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু হয়।

দক্ষিণপূর্ব শাখার সিপিআরও আদিত্য কুমার চৌধুরী জানিয়েছে, ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫৩১ জন যাত্রীকে এখনও পর্যন্ত ১৫ কোটি ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। যে সকল পরিবারগুলি তাদের পরিজন বা সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের কটক, মেদিনীপুর, ভুবনেশ্বর ও বালেশ্বরের হেল্প ডেস্ককে যোগাযোগ করতে বলেন সিপিআরও চৌধুরী।

উল্লেখ্য, শুক্রবারের অভিশপ্ত ট্রেন দুর্ঘটনার পরেই ভারতীয় রেলের তরফ থেকে নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ, গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ, স্বল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করে। সোমবার, রেলওয়ে ঘোষণা করেছে যে দুর্ঘটনায় জড়িত দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের টিকিটবিহীন যাত্রীদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার ওড়িশার কটকে এসে গত শুক্রবারের ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কটকের এসসিবি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় দিনের ওড়িশা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার একসঙ্গে কাজ করছে। তাঁরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের ১০৩টি মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে এবং ৯৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং ৩১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। সত্য প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা গিয়েছেন, সত্য প্রকাশ্যে আসা দরকার।”

এদিকে বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। রেলের তরফে জানানো হয়েছিল, ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার পরে আরও তিনজন আহতের মৃত্যুর পর, মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৮।

এদিকে তথ্য খতিয়ে দেখে ওড়িশা সরকার জানায়, মৃতের সংখ্যা ২৮৮। মঙ্গলবার ট্যুইট করে এই সংখ্যা জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে ২০৫ জনের দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। এবং দেহগুলি পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর ৮৩ জনের দেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তবে ওই দেহগুলিতে যাতে পচন না ধরে, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কার্যত মৃত্যুপুরীর রূপ নিয়েছে বালেশ্বর। বালেশ্বরের স্কুলে এখনও পড়ে শয়ে শয়ে লাশ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল থেকে মর্গের সামনে প্রিয়জনের ছবি হাতে নিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পরিজনেরা।