হাদিসে বর্ণিত যে ৮টি স্বভাব মানুষের ধ্বংসের কারণ

- আপডেট : ১৮ জানুয়ারী ২০২৪, বৃহস্পতিবার
- / 7
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম:
হিংসা
হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক ধ্বংসাত্মক ব্যাধির নাম ‘হিংসা’। হিংসা মানুষকে তিলে তিলে ক্ষয় নিঃশেষ করে দেয়। হিংসুক, দুনিয়ায় ও পরকালে উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সা. বলেছেন , ‘তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ তালাশ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা পোষণ করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (বুখারী, হাদিস: ৬০৬৪)
অহংকার ও দাম্ভিকতা
অহংকার এটি শুধু আল্লাহর গর্ব। কোনো বান্দাহর অহংকার করার অধিকার নেই। কী নিয়ে অহংকার করবে? তার সবকিছুই আল্লাহর দান। আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত নিয়ে অহংকার করা, অন্যকেও দুর্বল মনে করা, সত্যকে অস্বীকার করা, মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা এগুলো সব অহংকারের বহির্প্রকাশ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেন, ‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘মানুষ চায় যে তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতো সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার?’ রাসূল সা. বলেন, ‘আল্লাহ্ সুন্দর, তিনি সুন্দর ভালোবাসেন।’ অহংকারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রাসূল সা, বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা’।’’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬৬)
আত্মতৃপ্তি
আত্মতৃপ্তি মানুষকে শেষ করে দেয়। একজন মানুষের ব্যর্থতার পেছনে আত্মতৃপ্তির অবদান সবচাইতে বেশি। যে ব্যক্তি নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করে, তার কোনও ভুল হয় না, এমনটা বিশ্বাস করে, সে ক্ষতির মধ্যে আছে।
আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘বস্তুত আল্লাহ্ বহু ক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করেছেন এবং (বিশেষ করে) হুনায়নের দিন, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের আত্মপ্রসাদে লিপ্ত করেছিল। কিন্তু সে সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোনও কাজে আসেনি এবং জমিন তার প্রশস্ততা সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) পলায়ন করেছিলে।’ (সূর: তাওবা, আয়াত : ২৫)
লৌকিকতা
লৌকিকতা মানুষের সবচেয়ে খারাপ স্বভাবগুলোর মধ্যে একটি। লোকদেখানো ইবাদাত এটি অত্যন্ত ঘৃণিত। আরবিতে এটিকে ‘রিয়া’ বলে। শয়তান মানুষের ভেতরে, ছলে-বলে-কৌশলে এই লৌকিকতা ঢুকিয়ে দেয়।
আল্লাহ্তায়ালা লৌকিকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অতএব, দুর্ভোগ সেসব নামাযীর জন্য, যারা তাদের নামায সম্পর্কে উদাসীন। যারা লোকদেখানোর জন্য তা করে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যকে দেয় না।’ (সূরা মাউন, আয়াত : ৪-৮)
কৃপণতা
ইসলাম অমিতব্যয়িতাকেও যেমন প্রশ্রয় দেয় না, তেমনি কৃপণতাকেও নয়। কৃপণতা মানুষের এক মন্দ স্বভাব। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে কৃপণ মানুষের ব্যাপারে অনেক নিন্দা এসেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, ‘আল্লাহ্-প্রদত্ত অনুগ্রহে (সম্পদে) যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে, এটা তাদের জন্য ভালো কিছু; বরং এটা তাদের পক্ষে অতি মন্দ। যে সম্পদের ভেতর তারা কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তাকে তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেয়া হবে। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মিরাস কেবল আল্লাহরই জন্য। তোমরা যা কিছুই করো আল্লাহ্ সেই সম্পর্কে সম্যক অবগত।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)
যশ-খ্যাতির আকর্ষণ
ভাইরাল হওয়ার নেশা, খ্যাতির আকর্ষণ এক ভয়ংকর ব্যাধি। যা মানুষের ভেতরকে অন্তঃসারশূন্য করে দেয়। তখন তার ইবাদাতে মন বসে না। ভালো কাজগুলো হয়ে যায় একদম প্রাণশূন্য।
হযরত কাব ইবনে মালিক আল-আনসারি রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, ‘দুইটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারও সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৭৬)
অনিয়ন্ত্রিত রাগ
রাগ মানুষের স্বভাবজাত একটি বিষয়। তবে অতিরিক্ত রাগ ক্ষতিকর নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এমনকি সমাজের জন্য। অনেক মানুষ আছে সামান্য কিছুতেই প্রচণ্ড রেগে যায়। এই রাগ তার শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাগের মাধ্যমে অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু ঘটে যায়।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবীজি সা.-এর কাছে একজন লোক এসে বলল, ‘আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, তবে আমাকে বেশি বলবেন না, যাতে আমি তা মুখস্থ করতে পারি।’ তিনি (সা.) বললেন, ‘ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না।’ লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলে প্রতিবারই তিনি (সা.) বললেন, ‘ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২০২০)
সম্পদের লোভ
পৃথিবীতে আল্লাহ্তায়ালা যা কিছু আমাদের দিয়েছেন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ধন-সম্পদ আল্লাহ্-প্রদত্ত অনেক বড় নিয়ামত। তবে ধন-সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত লোভ-লালসা কল্যাণকর নয়। এই সম্পদের লোভ অনেক সময় তাকে পাপের পথে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। মানুষ সম্পদের লোভে পড়ে নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে। অর্থের প্রতি অতিরিক্ত লালসা মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে আনে।
রাসুলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রতার আশঙ্কা করি না; বরং আমি আশঙ্কা করি যে তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য আসবে যেমন তোমাদের আগের লোকদের কাছে এসেছিল, তখন তোমরা সেটা পাওয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করবে যেমন তারা করেছিল। আর তা তাদের যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরও ধ্বংস করে দেবে।’ (বুখারী, হাদিস: ৪০১৫)