BREAKING:
রাজ্যসভায় পেশ ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত জেপিসি রিপোর্ট সিটু-র অ্যাপ ক্যাব ধর্মঘট আজ বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি, জারি কমলা সতর্কতা রমজানে মসজিদে ক্যামেরার ব্যবহার নিষিদ্ধ করল সউদি আরব হাইটেক টুকলি! মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষায় এআইয়ের ব্যবহার, হাতেনাতে ধরা পড়ল পরীক্ষার্থী ভাষার জন্য তামিলরা প্রাণ দিয়েছে, ভাষার সঙ্গে খেললে ফল ভালো হবে না, হুঙ্কার কমল হাসানের সলমন রুশদির হামলাকারী দোষী সাব্যস্ত, ন্যূনতম ৩০ বছর কারাদণ্ডের সম্ভাবনা ৬ ইসরাইলি জিম্মিকে ছাড়ল হামাস, জেলমুক্তির অপেক্ষায় ৬০০ ফিলিস্তিনি কুম্ভমেলায় যাওয়ার পথে দূর্ঘটনায় মৃত পশ্চিমবঙ্গের ৬, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর  ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা, আদালতে পিটিআই বিবিসি ইন্ডিয়াকে ৩.৪৪ কোটি টাকা জরিমানা করল ইডি

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ভর্তি প্যানেলে নেই ‘ওবিসি-এ’ সংরক্ষণ, শিক্ষামহলে উঠছে বহু প্রশ্ন

রিপোর্টার:
  • শেষ আপডেট: বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৫

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ফের পিএইচডি ভর্তিতে ওবিসি-এ সংরক্ষণ নিয়ে বিতর্ক কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি-র আবেদনপত্র নেওয়া শুরু হয় গতবছরের ১৪ মে থেকে। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২০২৪-এর ১৯ মে। ইন্টারভিউ শেষে প্রার্থীদের ফাইনাল পিএইচডি প্যানেল প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত পিএইচডি তালিকায় সমস্ত ক্যাটেগরি থাকলেও ছিল না ‘ওবিসি-এ’। আনরিজার্ভ, ওবিসি-বি, এসসি, এসটি ইত্যাদি ক্যাটেগরিতে ছাত্রভর্তি নেওয়া হয়েছে। বৈষম্য শুধু ওবিসি-এ-র ক্ষেত্রে। পড়ুয়া ও শিক্ষক মহলে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, ঠিক কী কারণে বার বার ওবিসি-এ-কে বাদ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের ওবিসি-এ তালিকায় সাধারণত মুসলিমরাই বেশি। তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ খানিকটা এগিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও এ ব্যাপারে আন্তরিক। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার অধিকাংশ কলেজ রয়েছে। প্রচুর সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী এখানে পড়াশোনা করে। কিন্তু কোনও একটি অদৃশ্য শক্তিশালী মহলের অঙ্গুলি হেলনে বার বার কল্যাণীতে এডুকেশন বিভাগে পিএইচডি ভর্তির সময় ওবিসি-এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। গত কয়েকবারই এমনটা ঘটেছে বলে সেখানকার পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের একাংশের অভিযোগ। অন্যান্য বিভাগেও ওবিসি-এ সংরক্ষণ মানছে না কর্তৃপক্ষ। শেষবার এডুকেশন বিভাগে পিএইচডি স্কলার হিসেবে ১১ জনকে নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল। কিন্তু মেধা যাচাই-বাছাইয়ের পর ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। রোস্টারে ওবিসি-এ-র জন্য ভ্যাকেন্সি থাকলেও তা অগ্রাহ্য করেছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন কমিটি। এ বিষয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন কমিটির চেয়ারম্যান কেকা সরকারের সঙ্গে পুবের কলম-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওবিসি বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই আমরা উচ্চশিক্ষা দফতরের আদেশ মেনে ওবিসি-এ প্রার্থী প্যানেলে রাখিনি। পুবের কলম প্রতিবেদক পালটা প্রশ্ন করেন, ওবিসি বিষয়টি বিচারাধীন হলে যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া, গৌড়বঙ্গ বা বারাসত স্টেট ইউনিভার্সিটি কীভাবে ওবিসি-এ ক্যান্ডিডেটকে পিএইচডিতে ভর্তি নিচ্ছে? তাদেরকে কি উচ্চশিক্ষা দফতর কোনও নির্দেশিকা দেয়নি? এর কোনও জবাব দিতে না পেরে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। যা বলার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অফিসার বলবেন।

এরপর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অফিসার সত্যম বৈদ্যকে ফোনে ধরা হলে তিনি প্রথমেই বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কোনও ওবিসি প্রার্থীকেই ভর্তি নেওয়া হয়নি পিএইচডিতে। সত্যমবাবুকে পিএইচডি মেরিট লিস্ট পাঠালে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন এডুকেশনের পিএইচডি মেধাতালিকায় ‘ওবিসি-বি’ ক্যান্ডিডেট রয়েছে। তবে ‘ওবিসি-এ’ নেই। বাদ গেলে সব ওবিসিই বাদ যাবে। শুধু ওবিসি-এ-র উপর কোপ কেন? ওবিসি-এ এর কি কোনও যোগ্য প্রার্থী ছিল না? তখন তিনি জানান, আমি এ বিষয়ে এখন আর কিছু বলতে পারছি না। আমাকে ফাইল দেখে বলতে হবে। আমরা জানি না, ফাইল দেখে তিনি কী বলবেন! তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন বিভাগের হেড ও ডিপার্টমেন্টাল রিসার্চ কমিটির প্রধান অধ্যাপক তারিণী হালদার পুবের কলমকে জানান, আমরা নিয়ম মেনে চূড়ান্ত ১১ জনের নামের তালিকাই অ্যাডমিশন বিভাগে পাঠিয়েছি নোটিফিকেশনের জন্য। সেই তালিকায় একজন ‘ওবিসি-এ’ ক্যান্ডিডেটের নামও ছিল। তাহলে ওবিসি-এ-র উপর খড়্গহস্ত হল কে বা কারা— অ্যাডমিশন ডিপার্টমেন্ট, নাকি আইনি বিভাগ, এই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য কল্লোল পাল এবং রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগে তৎকালীন উপাচার্য অমলেন্দু ভুঁইয়াকে ২৭/০৯/২৪ তারিখে পড়ুয়ারা লিখিত চিঠি দিলেও ওবিসি-এ-র লিস্ট নিয়ে কোনও উপযুক্ত উত্তর পাওয়া যায়নি। জবাব না পাওয়ায় পড়ুয়ারা এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও একটি চিঠি দেন ওবিসি-এ রেখে প্যানেল প্রকাশ করার জন্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায় ছাড়া ওবিসি-এ-র পড়ুয়া নিতে পারবে না। সেই প্যানেল প্রকাশ না করে পুনরায় আরও একবার পিএইচডি ভর্তির নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২৫ নভেম্বর ২০২৪ সালে। এরপর একইভাবে আবারও পরপর দু’টি চিঠি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে দেওয়া হয় ২৯/১২/২৪ এবং ৬/০১/২৫ তারিখে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পর্যন্ত ওবিসি-এ-র প্যানেল প্রকাশ করছে না বা, এ নিয়ে কোনও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না কর্তৃপক্ষের কাছে।

এখন শিক্ষামহলে প্রশ্ন উঠছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এ বিষয়ে লিখিত ক্ল্যারিফিকেশন দিচ্ছে না। হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রায়ের আগে পর্যন্ত যেসব প্রক্রিয়া চলছিল, সেই ক্ষেত্রে সুবিধাগুলো দিতে হবে। তবুও কল্যাণী ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সেই সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। বাংলার প্রায় সমস্ত প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডিতে সংরক্ষণ মেনে ওবিসি-এ প্রার্থী ভর্তি নিচ্ছে। তাহলে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় নিচ্ছে না কেন?

গতবছরের ২২ মে পশ্চিমবঙ্গের মোট ১৮০টি অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে ১১৪টি সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকা থেকে বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এতে এই ১১৪টি জাতের শংসাপত্র নিয়ে যারা চাকরি পেয়েছেন বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পড়ছেন, তাদের চাকরি যাবে না বা পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না। কিন্তু এই শংসাপত্র নিয়ে ভবিষ্যতে শিক্ষা বা চাকরি ক্ষেত্রে আর কোনও সংরক্ষণের সুযোগ পাওয়া যাবে না। হাইকোর্টের এই রায়ে পশ্চিমবঙ্গে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ ১৭ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এই ৭ শতাংশের মধ্যে ৬৬টি সম্প্রদায় আছে যেগুলি ২০১০ সালের আগে চালু হয়েছিল। এমন পুরনো ওবিসি-এ প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডির মেরিট লিস্টে তাদের কারও নাম রাখেনি। তা হলে কেন ওবিসি-বি প্রার্থী পিএইচডিতে সুযোগ পাচ্ছে? এটা কি বৈষম্য নয়? কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা বা ইউজিসির নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ওবিসি-এ সংরক্ষণ আটকাবে কেন? এই প্রশ্ন আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষামহলে।

 

এই সংক্রান্ত আরও খবর
Copyright © 2025 Puber Kalom All rights reserved.
Developed By eTech Builder