সামিম আহমেদ, কুলপি: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছ থেকে বিশিষ্ট চাষি হিসাবে পুরষ্কার পেতে চলেছেন বর্ণালী ধাড়া। এবার সারা দেশ থেকে মোট ১০ জন বিশিষ্ট চাষির পুরস্কার পেতে চলেছে। তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একমাত্র বর্ণালী ধাড়াই সেই পুরস্কার পাচ্ছেন। আগামী ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে তিনি এই পুরস্কার নেবেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাবা-মা শিক্ষকতা করলেও বাড়িতে কিন্তু চাষবাসের চলন ছিল। স্বামী একসময় কৃষিকাজ ও সার কীটনাশকের ব্যবসা করতেন। কুলপির নিশ্চিন্তপুর বাজারে তার একটি সার ও কীটনাশকের দোকান ছিল। পরে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পান। সেইসময়ে পারিবারিক ব্যবসা ও চাষবাস দুটোরই হাল ধরেন বর্ণালী। ২০০৫ সালে এলাকার জনা দশেক মহিলাকে নিয়ে প্রথমে তিনি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী শুরু করেন। নানাকাজের মাধ্যমে তাদের আয়ের ব্যবস্থা করেন। আসতে আসতে দলে মহিলাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাদের নিয়ে তিনি তৈরি করেন অশ্বত্থতলা মহিলা জনকল্যাণ সমিতি। ২০১৭ সালে জয়নগরের নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে তিনি সার, কীটনাশক বিক্রির প্রশিক্ষণ নেন। তারপর থেকে তাঁর সামনে খুলে যায় নতুন দিগন্ত। পরে হাইব্রিড সূর্যমুখী বীজ চাষের সরকারি প্রকল্পে মহিলাদের যুক্ত করে তিনি প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে চাষ করেন। পরে সরকারের দেওয়া নারকেল চারা নিয়ে কয়েকশো মহিলারকে দিয়ে নারকেল চাষ করান। আসতে আসতে গ্রামের মহিলারা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে শুরু করেন। এরপর গ্রামের মহিলাদের কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন তিনি। আবার কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের এলাকায় নিয়ে যান বর্ণালী। জেলা প্রশাসন ও বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাষের নানা প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসা শুরু করেন তিনি। এরপর হাঁস-মুরগি থেকে শুরু করে ছাগল পালনেও যুক্ত করেন বহু মহিলাকে। এইভাবেই বর্তমানে প্রায় ২ হাজার মহিলা তাঁর নেতৃত্বে চাষবাদের ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছেন। এলাকার অনেক পুরুষও এইসব প্রকল্পে চাষ করছেন।
বর্ণালীর কথায়, ‘সামান্য গৃহবধূ হয়ে দেশের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেব একথা ভাবলেই গর্ববোধ করছি।’ নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান ও কৃষিবিজ্ঞানী চন্দন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের কাছে এটা বড় স্বীকৃতি।’