পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বাজেটে কর কাঠামোতে ছাড়, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সুদে ছাড়, জীবনদায়ী ওষুধসহ অনেক পণ্যের দাম কমিয়ে বাজটে মধ্যবিত্তের মনজয় করতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। কিন্তু রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রের মতে, এই বাজেট গভীর ষড়যন্ত্রের বাজেট।
তাঁর কথায়, শুধু তিনিই নন, অনেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবদও একই মত পোষণ করেন। শনিবারের পেশ হওয়া বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ও জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দে কাটছাঁট হয়েছে। বেকারত্ব দূর করার জন্য কোনও দিশাই নেই। তাই একে বিপর্যয়ের বাজেট বলছেন অমিত মিত্র।
কী ষড়যন্ত্র রয়েছে বাজেটে, তার ব্যাখ্যায় অমিত মিত্র বলেন, বিমা ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া বন্ধ করা হচ্ছে না। অমিত মিত্র প্রশ্ন তুলেছেন, এর ফলে কি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকেই সুবিধে করে দেওয়া হচ্ছে না? তাদের সুবিধে করে দিতেই কি এই পদক্ষেপ নেওয়া হল? প্রশ্ন তুলেছেন অমিত মিত্র। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিমাতে জিএসটি প্রত্যহারের দাবি জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
শুধু তিনিই নন, যে কোনও বিমায় জিএসটি লাগু করার বিরুদ্ধে প্রথম আপত্তি জানিয়েছিলে কেন্দ্রীয় মন্তরী নীতিন গড়কড়ি। গত বছরই গড়কড়ি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, মধ্যবিত্তরা স্বাস্থ্যের জন্য বিমা করেন, সেখানে জিএসটি থাকা উচিত নয়। কিন্তু বিমায় জিএসটি প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে স্থগিত করে রেখেছে। এই অবস্থায় বেসরকারি কোম্পানির ১০০ শতাংশ ইক্যুইটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র।
এদিন পরিসংখ্যান দিয়ে অমিত মিত্র বলেন, সামাজিক পরিষেবায় ১৬ শতাংশ, আবাসনে ৪.৩৮ শতাংশ, সমাজ কল্যাণ এবং তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য বরাদ্দে ৩ শতাংশ, সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প খাতে ৫ শতাংশ বরাদ্দ হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, খাদ্যে ভর্তুকিও ১ শতাংশ কমানো হয়েছে। এই বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে বিপর্যয় আখ্যা দিলেন অমিত মিত্র।
অমিত মিত্র প্রশ্ন তুলেছেন, দেশে এখন স্নাতক ৩০ শতাংশ। বেকারত্ব মোকাবিলায় এবং নতুন চাকরি সৃষ্টির জন্য কিছুই বলা নেই এবারের বাজটে। কম বেতনপ্রাপ্ত আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সর্বশিক্ষা কেন্দ্রের প্যারাটিচারদের বেতনবৃদ্ধির কথা বলা নেই বাজেটে। যুব, নারী, কিষাণদের জন্য এবারের বাজেটকে ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনটাই মত মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র।
এদিন তৃণমূল দলের তরফেও নির্মলা সীতারামণের পেশ করা বাজেটকে জনবিরোধী এবং গরিব বিরোধী বলা হয়েছে।