তোমরাই দুনিয়ার সেরা জীব

- আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার
- / 30
ড. আদহাম শারকাভি: ‘আর তাদের কুকুরটি ছিল গুহাদ্বারের সম্মুখে তার সামনের পা দু’টি প্রসারিত করে।’ (সূরা কাহাফ, আয়াত : ১৮)
একটি কুকুর। চির অমর হল তার আলোচনা। কারণ সে নেককারদের সাহচর্য গ্রহণ করেছিল। একটি মাছের আলোচনাও চির অমর হয়েছে। কারণ সে নবী ইউনুস আ.-কে পেটে ধারণ করেছিল। চির অমর হয়ে আছে একটি পিঁপড়ার আলোচনা। কারণ সে নবী সুলাইমান আ.-এর মুচকি হাসির কারণ হয়েছিল। একটি হুদহুদ পাখির আলোচনাও চির অমর হয়ে আছে। কারণ সে নবী সুলাইমান আ.-এর জন্য সুসংবাদ বয়ে এনেছিল।
আমরা তো মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা কি পারি না ভালো কাজের মাধ্যমে চির অমর হতে? যাতে আমাদের আলোচনাও হতে থাকে যুগের পর যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে?
https://puberkalom.com/the-3-non-muslims-whom-the-prophet-peace-be-upon-him-praised/
অপরাধীরা যা চায়
‘তার জাতির এছাড়া আর কোনও জবাব ছিল না— তোমাদের জনপদ থেকে তাদের বের করে দাও। নিশ্চয়ই তারা এমন লোক, যারা খুব পবিত্র থাকতে চায়।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ৮২)
যুগ যুগ ধরে চলে আসা সমাজের বাস্তবতা এমনটাই। যখন ভালো মানুষদের বিতর্কিত করার মতো কিছু খুঁজে পায় না, তখন ভালো গুণটার অজুহাতেই তাদের সমাজচ্যুত করার পরিকল্পনা করা হয়। হযরত লুত আ.-এর দোষ ছিল একটাই- কেন তিনি নিজেকে ও নিজের অনুসারীদের সমকামিতা থেকে পবিত্র রাখেন।
অপরাধীরা সব সময় আকাঙ্ক্ষা করে সমাজের ভালো মানুষেরাও অপরাধ করুক। যাতে ম¨ কাজ করা সহজ হয়ে যায়। প্রত্যেক ব্যভিচারী চায়-সমাজটা ব্যভিচারে ভরে যাক। যেন সচ্চরিত্রের কোনও মূল্য না থাকে। প্রত্যেক চোর চায়- সমাজ চুরিতে ভরে যাক, যেন আমানতের কোনও মূল্য না থাকে। প্রত্যেক ঘুসখোর চায়- সমাজে ঘুসের সয়লাব হোক, যাতে হালালের কোনও মূল্য না থাকে।
এসবের পেছনে উদ্দেশ্য কেবল একটাই- সবাই পাপে জড়িয়ে পড়ুক, যাতে প্রতিবাদ করার মতো কেউ না থাকে। সমাজের পবিত্র ও ভালো মানুষেরাই কেবল তাদের দুশমন। কারণ তাদের কারণেই অসৎলোকেরা নিজেদের ঘৃণিত কর্মকাণ্ড সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পায় না।
এই অসৎলোকেরা পর্দানশিন নারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলে অসামাজিক। সৎ চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলে একগুঁয়ে। সত্যবাদীরর ব্যাপারে অভিযোগ- অতি পণ্ডিত। সচ্চরিত্রের ব্যাপারে অভিযোগ- ভীতু।সবশেষে বলব, নিজেকে আল্লাহ্র রাস্তায় অবিচল রাখো। সমাজ তোমার পক্ষে বলুক কিংবা বিপক্ষে, তার কোনও পরোয়া করবে না।
কল্যাণময়ী হও
‘তাদের সঙ্গে দয়া ও সততার সঙ্গে জীবনযাপন করো।’ (সূরা নিসা, আয়াত: ১৯)
স্ত্রীর সঙ্গে ভালো আচরণ করা সাদাকা। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসা সাদাকা। স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেওয়াও সাদাকা। মিষ্টি কথা বলা সাদাকা। স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরা সাদাকা। উপহার দেওয়া সাদাকা। স্ত্রীর রাগ-অভিমান ভাঙানো সাদাকা। তার অভিযোগ শোনা সাদাকা। তার সুস্থতার খেয়াল রাখা সাদাকা। তাকে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া সাদাকা। তার মতামতের মূল্যায়ন করা সাদাকা। তার ইচ্ছে পূরণ করা সাদাকা। তাকে ঘরের কাজে সাহায্য করা সাদাকা। দ্বীনের ব্যাপারে তাকে সাহায্য করা সাদাকা। তার পদস্খলন সহ্য করা সাদাকা। তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা সাদাকা। তার অসুস্থতায় সেবা করা সাদাকা। তাকে খুশি রাখা সাদাকা।
আয়াতটির দিকে ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, স্ত্রীর সঙ্গে মারুফের সঙ্গে জীবনযাপন করতে বলা হয়েছে। উরফের সঙ্গে নয়। মারুফ হল ন্যায়সঙ্গত আচরণ, সততা, ভালো ব্যবহার ইত্যাদি। আর উরফ হল প্রচলন।
বর্তমান সমাজ স্ত্রীদের ব্যাপারে অত্যন্ত জালিম। স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতিকে তারা অত্যন্ত বাঁকা চোখে দেখে। ফলে অনেক সময় একজন আদর্শ স্বামীকেও লোকমুখের বিষাক্ত তির জল্লাদ বানিয়ে দেয়। যেমন বলা হয়, অমুক তো বউপাগলা। সে বউয়ের কথায় উঠবস করে। সে কাপুরুষ, নয়তো কি আর স্ত্রীকে তোষামোদ করে?
আসলে এমন লোকেরা জানেই না- কোনটি কাপুরুষত্ব আর কোনটি বীরত্ব। নবী সা. বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম হল ওই ব্যক্তি, যে স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের কাছে সর্বোত্তম।’
নবীজি সা. ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করতেন। স্ত্রীদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতেন। তাঁদের কারও প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে তিনি (সা.) কখনও কার্পণ্য করতেন না। হযরত খাদিজা রা.-এর ব্যাপারে নবী সা. বলেছেন, ‘খাদিজার ভালোবাসা আমাকে রিযিক হিসেবে দেওয়া হয়েছে।’ জীবনের সায়াহ্নেও নবীজি সা. সাহাবিদের উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও।’
https://puberkalom.com/tell-god-about-yourself/