হাবিব মণ্ডলঃ চোখ আল্লাহর এক মহান নিয়ামত, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। এই নিয়ামতের অপব্যবহার করলে দুনিয়া এবং আখিরাত- উভয় ক্ষেত্রে ভয়াবহ ক্ষতির সামনে পড়তে হবে আমাদের। অসংযত দৃষ্টি মানুষের হৃদয়ে পাপের বীজ রোপণ করে এবং প্রবৃত্তির দাসে পরিণত করে। চোখের অসংযমী ব্যবহার গুনাহের পথ খুলে দেয় এবং নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়। চোখকে বলা হয় অন্তরের প্রতিচ্ছবি। দৃষ্টিশক্তির কল্যাণকর ও যথাযথ ব্যবহারই আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সর্বোত্তম পথ। চোখের পবিত্রতা নিশ্চিত করা মানে অন্তরের পবিত্রতাকে নিশ্চিত করা। দৃষ্টি সংযত রাখার জন্য পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের নিবন্ধের মূল বিষয়বস্তু পবিত্র কুরআনের আলোকে দৃষ্টিকে সংযত রাখার বিষয়ে।
রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন, ‘তোমরা আমাকে ছয়টি জিনিসের নিশ্চয়তা দাও, আমি তোমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব: যখন কথা বলবে সত্য বলো, অঙ্গীকার করলে পূরণ করো, আমানত রাখলে আদায় করো, লজ্জাস্থান হেফাজত করো, দৃষ্টি অবনত রাখো, হাত সংযত রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ)।
আল্লাহ্তায়ালা বলেন: ‘মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে।’ (সূরা আন নূর, আয়াত: ২৪:৩০) কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার প্রথম ও প্রধান উপায় হল দৃষ্টি সংযত রাখা। পথ চলতে, কাজ করতে কিংবা সামাজিক পরিবেশে নিজের দৃষ্টি সবসময় নিয়ন্ত্রিত রাখা প্রয়োজন। যখনই কোনও অনুচিত দৃশ্য সামনে আসবে, তখন সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে হবে এবং ইস্তেগফার পড়তে হবে। নিজেকে এমন অভ্যাসে অভ্যস্ত করতে হবে, যাতে দৃষ্টি সংযম জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়।
আল্লাহ বলেন: ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে, শয়তানের কুমন্ত্রণা যখন তাদের ঘিরে ধরে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে যায়।’ (সূরা আল আ’রাফ, আয়াত: ৭:২০১)
যিকির আল্লাহর স্মরণে মনকে প্রশান্ত রাখে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। যেখানেই থাকুন, আল্লাহর স্মরণ করতে ভুলবেন না। অন্তরে আল্লাহর নাম জপা; যিকিরের নূর অন্তরকে আলোকিত করে এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে।
আল্লাহতায়ালা বলেন: ‘সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন?’ (সূরা আল আলাক, আয়াত: ৯৬:১৪) যখনই কুদৃষ্টি করতে ইচ্ছে হবে, তখন মনে করতে হবে যে আল্লাহ সবসময় আমাদের দেখছেন। আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার অনুভূতি আমাদের কুদৃষ্টি থেকে দূরে রাখবে।
আল্লাহ বলেন: ‘যারা আমার পথে চেষ্টা করে, আমি তাদের জন্য পথ খুলে দিই।’ (সূরা আন-কাবুত, আয়াত: ২৯:৬৯) মুজাহাদা অর্থ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই। মন যখন কোনও হারাম জিনিস দেখতে চায়, তখন নিজেকে সংযত করা এবং আল্লাহর প্রেমে নিজেকে নিয়োজিত করা মুজাহাদার একটি দিক। কুদৃষ্টি থেকে বিরত থাকার জন্য মনে রাখতে হবে, সাময়িক এই কষ্ট চিরস্থায়ী আনন্দ ও আল্লাহর দর্শনের কারণ হবে।
আল্লাহ বলেন: ‘আল্লাহ্ আদেশ দেন, তোমরা আমানতসমূহ যথাযথভাবে হকদারদের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সূরা আন নিসা, আয়াত: ৪:৫৮) আমাদের দৃষ্টিশক্তি আল্লাহর দেওয়া একটি আমানত। যদি আমরা এ আমানতে খেয়ানত করি, তবে কেয়ামতের দিন হয়তো এই দৃষ্টিশক্তি আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। নবী করিম সা. বলেছেন, ‘যারা দুনিয়াতে হারামের প্রতি দৃষ্টি দেয়, তারা আল্লাহর সৌন্দর্য দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তাই দৃষ্টি সঠিকভাবে ব্যবহার করা আবশ্যক।’
আল্লাহতায়ালা বলেন: ‘যারা ঈমান এনেছে, তাদের অন্তর কি আল্লাহর স্মরণে বিগলিত হবে না?’ (সূরা আল হাদীদ, আয়াত: ৫৭:১৬)
যখনই কুদৃষ্টি করার ইচ্ছা হবে, তখন এই আয়াত স্মরণ করা উচিত। নিজেকে প্রশ্ন করুন: ‘আমার অন্তর কি এখনও আল্লাহর ভয়ে বিগলিত হয়নি?’ আল্লাহর স্মরণ এবং তার কাছে সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য পবিত্র কুরআনের এই নির্দেশনাগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা জরুরি। আল্লাহর স্মরণ, দৃষ্টি সংযত রাখা এবং বিয়ের মতো বৈধ উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আমরা আত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারি। অবশ্যই চোখের অপরাধ থেকে বাঁচতে আবশ্যকীয় অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা।