পুবের কলম প্রতিবেদক: আগেই রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব¨্যােপাধ্যায়। এবার তিনি জানান দিলেন তাঁর রাজনৈতিক বোধ ও তথ্য বিশ্লেষণী ক্ষমতারও। নানান ইস্যুতে ঘরে-বাইরে বিজেপি শিবির যখন তৃণমূলকে খোঁচা মারছে, তখন তথ্য তুলে ধরে গেরুয়া শিবিরের ‘ভাঁওতা’ তুলে ধরলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। বৃহস্পতিবার তাঁর সংসদীয় এলাকায় ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচিতে যোগ দেন অভিষেক। এরই ফাঁকে কেন্দ্রেীয় বাজেট, আয়কর, দিল্লির ভোট থেকে শুরু করে রাজ্যে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন নিয়েও মুখ খোলেন তিনি।
এবারের দিল্লির ভোটে কেজরিওয়াল হেরে গিয়েছেন। এই হার নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিজেপি মানুষকে ভুল বোঝাতে সিদ্ধহস্ত। এখন বিজেপি দিল্লিবাসীকে বুঝিয়েছে, কেজরিওয়াল ২০১২-১৩ সাল থেকে তো ছিল। কিন্তু কিছু করেনি। আম আদমি পার্টির লোক ভুয়ো প্রচারকে কাউন্টার করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, বাংলার ক্ষেত্রেও বিজেপি রটিয়েছিল, কেন্দ্র থেকে টাকা পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু তৃণমূল সরকার আপনাদের দিচ্ছে না। আমরা বলেছিলাম, চার বছরে কত টাকা পাঠানো হয়েছে, তার তালিকা প্রকাশ করতে। মিথ্যা তো সামনে চলে আসে।
অন্যদিকে এবারের জাতীয় বাজেটে বছরে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কর ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে আছে ফাঁকফোকর। অভিষেক মনে করেন, কেন্দ্রীয় বাজেট সম্পূর্ণ ভাঁওতা। তাঁর বক্তব্য, যে মাসে ১ লক্ষ টাকা আয় করে, তাঁকে তো জিনিসপত্র কিনতে হয়, তাঁকে চা খেতে দুধ-চিনি-চা পাতা সবই কিনতে হয়। জল ছাড়া সবেতেই জিএসটি। তাঁকে জিএসটি বাবদে ৯৮ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এরপরও টোল ট্যাক্স, সিকিউরিটি ট্রানজাকশন ট্যাক্স রয়েছে, সার্চ চার্জ রয়েছে। মুদ্রাস্ফিতি যেভাবে বাড়ছে, বছরে ৬ শতাংশ করে বাড়লে, তিন বছরে ১৮ শতাংশ।’ অভিষেক মনে করেন, কেন্দ্রের বাজেট পুরো ফাঁকা কলসির মতো। রাজ্যে বিজেপির ১২ জন সাংসদ রয়েছেন, বিহারেও ১২ জন সাংসদ,তাহলে বিহারকে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হলেও, বাংলাকে কেন বঞ্চনা? প্রশ্ন তোলেন অভিষেক।
রাজ্যের বাজেট প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, গঙ্গাসাগরে নতুন ব্রিজের কথা বলা হয়েছে। পথশ্রীর জন্য ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। উত্তরের জেলাগুলোর জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের তরফে চা বাগানের জন্য, পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য ৭০০-৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদারকে অভিষেকের প্রশ্ন, ৪৪ হাজার কোটি টাকা পঞ্চায়েত দফতরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, এর মধ্যে কি জাত থেকে ধর্ম দেখে বরাদ্দ করা হয়েছে? মাইনোরিটি দফতরের ক্ষেত্রে বিজেপি বাজেট ১৫৭৫ কোটি টাকা থেকে ৬৮২ কোটি টাকা হয়েছে কেন? মাইনোরিটিরা ভোট দেয় না বলে? অভিষেক মনে করেন সুকান্ত মজুমদারের উচিত আত্মবিশ্লেষণ করা।
আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একুশেও একাই লড়েছি। একাই লড়ে দারুণ ফল করেছি। একাই লড়ব। বহিরাগত ভোটার ইস্যুতে বলেন, ভোটের মেশিনারি যাঁরা করেন, তাঁরা ভাল করে বুঝতে পারবেন, দিল্লিতে ভোটার তালিকায় ২০২৪-এর নির্বাচন থেকে বিধানসভা নির্বাচন, মাঝের ৮ মাসে ৪ লক্ষ লোকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। এটা গত ১৪ বছরে হয়নি। এবার যারা লড়াই করছি, দিল্লির ক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে আম আদমি পার্টি এই তথ্যও পরিবেশন করতে পারেনি। ওয়াকফ নিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য না শোনার জন্য জেপিসির উপরেও সরব হন অভিষেক।