কোমরে হাড় ও ডিক্স (তরুণাস্থি) ছাড়াও থাকে অনেক মাংসপেশী ও লিগামেন্ট। এগুলোর কোন একটাই অসামঞ্জস্য তৈরি হলে বা ওই অংশের কোন একটাতে সমস্যা দেখা দিলে কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। বয়সজনিত কারণে লিগামেন্ট বা হাড়গুলোর ক্ষয় হতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ও বৃদ্ধি হতে থাকে ফলে হাড়ের যে জয়েন্টগুলো সেগুলো ক্রমশঃ ঢিলে হতে থাকে। এর ফলে ব্যথাও ক্রমশঃ বাড়তে থাকে।
এটা নির্ভর করে বয়স, কাজের ধরন, খাদ্যাভাষ ও শরীরের গঠনের ওপর। শিশুর কোমর ব্যথা জন্মগত। ১৫-১৬ বয়সে যদি কোমরে ব্যথা হয় তাহলে বুঝতে হবে টিন এজের বাচ্চাটা হঠাৎ লম্বা হয়ে যাওয়ার ফলে এধরনের ব্যথা হচ্ছে। ৩০ বছরের পর কোমরের হাড়ে ক্ষয় এর কারণে ব্যথা হতে পারে। ৫০ ঊর্দ্ধে অষ্টিওপোরেসিস এর কারণে ব্যথা হয়। তবে মাংসপেশীর টানজনিত কোমরে ব্যথা যে কোন বয়সে হতে পারে। এছাড়া যারা বেশির ভাগ সময়ই ভারী ভারী কাজ করে, যাদের দেহের ওজন খুব বেশি, কিংবা যারা সারাদিন বসে বসে কাজ করে তাদের কোমরের সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা অনেক বেশি অন্যদের তুলনায়।
মহিলাদের মধ্যেই এটা বেশি দেখা যায়।। প্রথমতঃ মহিলাদের লিগামেন্টগুলো খুব ঢিলে থাকে, দ্বিতীয়তঃ মনোপজের পর মহিলাদের হাড় ক্ষয় দ্রুত হয়। মূলতঃ এইসব কারণে ই মহিলাদের এই সমস্যা বেশি হয়।
এটা একদমই ঠিক নয়। যদি পেন কিলার খান তাহলে ব্যথা সেইদিনের জন্য কমবে, পরের দিন আবার ব্যথা হবে।আবার পেন কিলার খেতে হবে। এতে কোন সমস্যার সমাধান হয় না, মাঝখান দিয়ে পেন কিলারের সাইড এফেক্ট হিসাবে পেটে আলসার হয়ে যাবে বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।সেইজন্য আমরা পেশেন্ট কে ব্যথার ওষুধের পরিবর্তে মাসল রিলাক্সজেন গ্রুপের ওষুধ দিই এবং সঙ্গে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ব্যথাটা কমাবার চেষ্টা করা হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা ভাল কাজ করে।
ব্যথা খুব জোর হলে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া উচিত। যদি লোয়ার ব্যাকে ব্যথা থাকে তাহলে গরম সেঁক দিতে হবে। এরপরও যদি ব্যথা না কমে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ফিজিওথেরাপি রে নিলে এবং সঙ্গে মাসল রিলাক্সজেন গ্রুপের ওষুধ খেলে ১০ দিনের মধ্যে ব্যথা কমে যাবে। খুব কম ক্ষেত্রে ব্যথার ইনজেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটা জানা যায়। সাধারণতঃ হাড়ের কি অবস্থা জানতে এক্স রে করা হয়। লিগামেন্ট কিংবা ডিক্স এর সমস্যা আছে কিনা তার জন্য এম আর আই করা হয়। যাদের ব্যথা ওষুধে কমে না তাদেরকেই এক্স রে বা এম আর আই করাতে বলা হয়।
কিডনি থেকে কোমরের ব্যথার সেরকম কোন সম্পর্ক নেই। তবে যাদের ক্যান্সার থাকে এবং সেটা সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোমরেও সেটা হয়। লোয়ার অরগ্যান, পেলভিস, প্রোষ্টেট, জরায়ু ক্যান্সার থেকে কোমরে ক্যান্সার ছড়াতে পারে।
ওষুধের পরও যদি না সারে তাহলে মাইক্রোসার্জারি করতে হয়। একটু ছোট ফুটো করে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে যে জিনিসের জন্য ব্যথাটা হচ্ছে সেটা ডিক্স বা হাড়-ই হোক তা নির্ণয় করে তার উপযুক্ত চিকিৎসা করা হয়। মাইক্রোসার্জারির সব থেকে সুবিধা হচ্ছে রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে পারে। তাছাড়া এটা খুব একটা ব্যয়বহুল নয়। তবে কিছু কিছু কোমরের অপারেশন আছে যাতে কোমরে পাত বসাতে হয়। বিশেষ করে হাড় ভেঙে গেলে। সেক্ষেত্রে খরচ একটু বেশি হয়।
বেল্টের প্রয়োজনীয়তা আছে। বেল্ট পেশেন্টকে সামনের দিকে ঝুকতে দেয় না। সামনে দিকে ঝুকতে না পারার ফলে ব্যথাটা আর সেভাবে বাড়ে না। অপারেশন হওয়া রুগীদের বেল্ট পরতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
শিরদাঁড়ার পাশাপাশি ছোট ছোট নার্ভ থাকে। এই নার্ভগুলো চেপে গেলে তখন এই ধরনের সমস্যা হয়। কোমরের ব্যথা শিরশিরানি একে অপরের সাথে জড়িত। শিরশিরানির জন্য নিউরোপ্যাথি মেডিসিন দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন কোমরের ব্যথা অবহেলা করলে পায়ের পাতা অবশ হয়ে যেতে পারে, দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তার ফলে পায়ের পাতা ঘষতে ঘষতে চলতে হবে, এমনকি পায়ের উঠানামাও কষ্টদায়ক হয়ে উঠতে পারে। ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে প্রতি আধঘন্টা অন্তর চেয়ার ছেড়ে উঠুন। পাঁচ থেকে দশ মিনিট এটেবিল ও টেবিল ঘুরে তারপর আবার চেয়ারে বসে কাজ করুন। এই সময় অন্তর পরিবর্তনের ফলে কোমরের ব্যথাটা আর বাড়বে না। চেয়ারে বসার সময় চেয়ার ও পিঠের মাঝখানের ফাঁকা অংশটা পূরনের জন্য কুশন ব্যবহার করুন।
ব্যথা থাকাকালীন ব্যায়াম একদম অনুচিত। কিছু কিছু ব্যায়াম কোমরের ব্যথা সারাতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কিন্তু ব্যথা শুরু হয়ে গেলে ব্যায়ামের খুব একটা ভূমিকা থাকে না।
কোমর ভাজ করে কিংবা সামনের দিকে ঝুঁকে ভারী কিছু তুলবেন না।/রানিং, জাম্পিং, জগিং করবেন না।/টিউবকল টিপবেন না।/সিঁড়ি ভেঙে বার বার উঠানামা করবেন না।/কাজ করার সময় সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না।/কাজ করার সময় চেয়ারটা টেবিল থেকে বেশি দূরে রাখবেন না।