পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: অনেকেই আধুনিক নার্সিং বা রোগীসেবার জনক হিসেবে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে চিনে। ১৮৫০ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন তিনি। নার্সদের প্রশিক্ষণ-সহ নানা রকম সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে বিখ্যাত হয়ে উঠেন। মানবসেবায় অমর হন তিনি। কিন্তু তাঁরও হাজার বছর আগে মদিনার আনসারদের মধ্যে এক নারী রোগীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
তিনি হলেন- প্রখ্যাত নারী সাহাবি হযরত রুফাইদা আল আসলামিয়া রা.। যুদ্ধের প্রাঙ্গণে আহতদের সেবায় নিজ তাঁবুতে ‘খিমাতু রুফাইদা’ নামে তৈরি করেন একটি অস্থায়ী হাসপাতাল। খাজরাজ গোত্রের শাখা আসলাম গোত্রের সন্তান রুফাইদা আল আসলামিয়া। তিনি ছিলেন মদিনায় প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। রাসূল সা.-এর সঙ্গে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তাঁর পিতা হযরত আসলাম রা. চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। আর তাঁর থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন রুফাইদা। প্রথম মুসলিম চিকিৎসাসেবিকা হিসেবে মনে করা হয় তাঁকে। চিকিৎসাবিদ্যায় অধিক ব্যুৎপত্তি অর্জন করায় রাসূল সা. আহত সৈনিকদের তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য পাঠাতেন।
মাহমুদ ইবনে লাবিদ রহ. থেকে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধের দিন হযরত সা’আদ বিন মুআজ রা.-এর চোখ আঘাত লেগে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে রুফাইদা নামক এক নারীর কাছে পাঠানো হয়। তিনি আহতের চিকিৎসা করতেন। নবী সা. সকাল-সন্ধ্যায় হযরত সাআদ রা.-এর কাছ দিয়ে যেতে জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোমার দিন কেমন কাটল, তোমার রাত কেমন কাটল?’ তিনি তাঁকে (নিজ অবস্থা) অবহিত করতেন।’ (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৩৯)
খায়বার যুদ্ধে আহত মুসলিম যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর এই অবিস্মরণীয় ত্যাগ এবং সেবা-শুশ্রূষার স্বীকৃতিস্বরূপ রাসূল সা. পুরুষ মুজাহিদদের মতো তাঁকেও গণিমতের সম্পদের অংশ দেন। শুধুমাত্র যুদ্ধাহতদের সেবায় তিনি নিজেকে নিমগ্ন রাখেননি। বরং স্বাভাবিক পরিস্থিতির সময়ও তিনি অসহায়, অভাবী ও রোগীদের সেবা করতেন। নিজের সম্পদ ও অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা সেবা দিতেন সবাইকে। চিকিৎসা ও রোগীর সেবায় তিনি ছিলেন অনন্য মর্যাদার একজন মহীয়ষী নারী। তাঁকে দেখে অনেক নারী সাহাবিও চিকিৎসাবিদ্যায় পাণ্ডিত্য অর্জন করে।
হযরত রুফাইদা আল আসলামি রা.-এর সম্মানে বাহরাইনের রয়েল কলেজ অব সার্জন ইন আয়ারল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের ‘রুফাইদা আল আসলামিয়া প্রাইজ ইন নার্সিং’ প্রদান করা হয়। নার্সিং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের রোগীসেবার ওপর ভিত্তি করে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। হযরত রুফাইদা রা.-এর মতো আরও অনেক নারী সাহাবী জিহাদের কঠিন মুহূর্তে আহতদের সেবা করতেন। বিশেষত আসলাম গোত্রের নারীরা। এই গোত্রেরই আরেক নারী হলেন উম্মে সিনান আসলামী। নবী সা.-এর কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন; আহতদের ঘায়ে মলম, পিপাসার্তের মুখে পানি—এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য।
নবীজি সা. অনুমতি দিলেন এবং বললেন, ‘আল্লাহর বরকত নিয়ে বের হও। তোমার কওমের আরও অনেক নারী আছে, আমি যাদেরকে অনুমতি দিয়েছি, তুমি চাইলে তাদের সঙ্গে থাকতে পার। যুদ্ধ ছাড়াও সাধারণ সময়েও মানুষের কাছে তার তাঁবু ছিল বাতিঘরের মতো। অসুস্থ মানুষের আস্থার ঠিকানা।’ মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘খাইমাতু রুফাইদা’র নাম।