পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ আত্মহত্যা নয়, ট্যাংরায় একই পরিবারের তিন মহিলাকে খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই গৃহবধূকে হাত ও গলার নলি কেটে খুন করা হয়। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে কিশোরীর।
ট্যাংরার অতুল শূর রোডে ব্যবসায়ী প্রণয় ও প্রসূন দে-র বাড়ি চিত্তনিবাস ঘিরে রহস্যের জট। ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন? বৃহস্পতিবার এনআরএস হাসপাতালে তিন মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। তাতেই খুনের সম্ভাবনায় সিলমোহর দিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “পরিবারের ছোট বউ রোমির দু’হাতের কব্জিতে কাটা দাগ ও গলায় ক্ষতচিহ্ন। গলার বাঁ দিক থেকে ডান দিকে টানা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র। খাওয়ার ৩ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে খুন, ময়নাতদন্তের ৩৬-৪৮ ঘণ্টা আগে মৃত্যু। কিশোরীর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। পরিবারের বড় বউ সুদেষ্ণারও ডান হাতের কব্জি কাটা, গলায় ক্ষতচিহ্ন। অতিরিক্ত রক্তপাতের জেরেই মৃত্যু, কিশোরীর পাকস্থলীতে মেলা খাবারে ওষুধের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে।”
ট্যাংরার ব্যবসায়ী পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু ও পথ দুর্ঘটনায় ৩ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় পরতে পরতে রহস্য। আহতদের দাবি, সোমবার রাতে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ ও প্রেশারের ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়েছিলেন পরিবারের ৬ সদস্য। মঙ্গলবার সকালে ছোট ভাই প্রসূনের মেয়ে প্রিয়ম্বদা বমি করে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। তাকে মৃত ভেবে পরিবারের বাকি সদস্যরা নিজেদের হাতের শিরা কেটে ফেলে। এরপর বড় ভাই প্রণয়, ছোট ভাই প্রসূন ও বড় ভাইয়ের নাবালক ছেলে, ৩ জন ছাদে গিয়ে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় বলে দাবি। মঙ্গলবার গভীর রাতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান প্রণয়, তাঁর ছেলে ও ছোট ভাই প্রসূন। দুই ভাইয়ের বয়ানের সত্যতা যাচাই করছে পুলিশ।
কিন্তু হাসিখুশি এই পরিবারে নিমেষে অন্ধকার নেমে এল কীভাবে? পুলিশ সূত্রে খবর, ব্যবসা ছাড়াও পার্সোনাল লোন ছিল দুই ভাই প্রণয় ও প্রসূনের। আহতদের বয়ান অনুযায়ী, ট্যাংরার ২১/সি অতুল শূর রোডের চারতলা বসতবাড়ি বন্ধক রাখার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। ব্যাঙ্কের সঙ্গেও কথা বলা শুরু করেছিলেন। ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। এর পাশাপাশি কয়েকজন পাওনাদারেরও সন্ধান মিলেছে। তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর পুলিশকে পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার কথা জানিয়েছেন দুই ভাই প্রণয় ও প্রসূন দে। ট্যাংরাকাণ্ডের নেপথ্যে আর্থিক অনটন? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।