রুবাইয়া, আলিপুরদুয়ার: নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, শিক্ষা হল এমন এক হাতিয়ার যার সাহায্যে পৃথিবীকে পাল্টে ফেলা সম্ভব। সেই মহৎ কর্মযজ্ঞই শুরু হয়েছে বই গ্রামে। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীনে আর পাঁচটা আদিবাসী গ্রামের মতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোট্ট গ্রাম পানিঝোড়া। এই পানিঝোড়া গ্রামেই গড়ে উঠেছে বাংলার প্রথম বইগ্রাম। ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন পানিঝোড়া গ্রামকে বইগ্রাম হিসাবে ঘোষণা করেছে। আলিপুরদুয়ার সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে মূলত নেপালি, দুকপা, গারো, মেচ, রাভা, মুন্ডা, ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। গ্রামে ৭২টি পরিবারের ৩২০ জন বাসিন্দা বাস করেন। পানিঝোড়া দেশের মধ্যে গড়ে ওঠা তৃতীয় বইগ্রাম। এরআগে কেরলের পেরুমকালাম, মহারাষ্ট্রের ভিলারেও একইভাবে গড়ে উঠেছে বইগ্রাম। গ্রামের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে ১৫টি ছোটো গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছে। একটি বড়ো কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছে মাঝেরডাবরি চা বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধরের তত্ত্বাবধানে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘আপনকথা’ নামক একটি সংগঠন এবং আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন এই গ্রামটিকেই বেছে নিয়েছে বইগ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। গ্রামের ১০ জন বাসিন্দা গ্রন্থাগারের দেখাশোনা করেন, কাকে কোন বই পড়তে দেওয়া হয়েছে তার রেকর্ড রাখেন। প্রতিমাসে একবার করে কম্পিউটার ক্লাস ও নাচ, গান, কবিতার ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গ্রামের ৫০টি বাড়ির দেওয়ালে আঁকা শিক্ষা সংক্রান্ত নানা বার্তা। বক্সা, জয়ন্তী ও আলিপুরদুয়ারের ইতিহাস সংক্রান্ত বইও আছে গ্রন্থাগারে।
তবে বর্তমানে এই বই গ্রাম দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন। এমনকি উত্তরবঙ্গে ঘুরতে আসা পর্যটকেরাও বই গ্রাম দেখার আগ্রহে চলে আসেন এখানে। ফলে এখানকার পর্যটনশিল্পও বাড়ছে। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে আশেপাশে গড়ে উঠেছে অনেক দোকানপাটও। দিন দিন যেমন বাড়ছে বইগ্রামের চাহিদা তেমনি আবার বই পড়ার আগ্রহও তৈরি হচ্ছে এখানকার আশেপাশের গ্রামের ছেলে-মেয়েদেরও। বলা চলে বইকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এক প্রান্তিক এলাকা। যেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছাচ্ছে, পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। এমনকি পর্যটন ব্যবসা উজ্জীবিত হচ্ছে। মানুষের অর্থের সংস্থান হচ্ছে। স্কুলছুট আর মানবপাচারের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসছে পানিঝোড়া।