১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রমযান: একদিকে খোশ আমদেদ, অন্যদিকে বিধিনিষেধ

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৩ মার্চ ২০২৫, সোমবার
  • / 19

হিমন্তের অসম ও যোগীর উত্তরপ্রদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক: সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে বরকত ও কল্যাণময় মাস মাহে রমযান। পৃথিবীর সব দেশের মুসলিম এই পুরো মাসে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন হওয়ার চেষ্টা করেন। আত্মশুদ্ধির মাস হল রমযান। এই মাসে মুসলিমদের সবর (ধৈর্য্য) ও শান্তির উপর গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। তাই রোযাদারদের সঙ্গে কেউ যদি ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে রোযাদার বলেন, ‘কালু সালামা! আমি একজন রোযাদার, অযথা কোনও বিতর্কে আমি নিজেকে জড়াবো না।’ অর্থাৎ রোযার সময় আল্লাহ বিশ্বাসী মুসলিমরা কোনও অশান্তি বা বাকবিতন্ডায় না জড়িয়ে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেন। যাতে তিনি এবং অন্য সকলে আল্লাহ-র ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারেন।
রমযান মাসকে স্বাগত জানিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেস, বিশ্ব-বাদশাহ ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমন কি বিজেপির মুখ্য মুখ প্রাইমিনিস্টার নরেন্দ্র মোদিও।
কিন্তু হলে কি হবে! পবিত্র রমযান মাসকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দারুন রকম বিপদে পড়ে গেছেন। কি জানি এত বুলডোজার, এনকাউন্টার, গ্রেফতারির পরও মুসলিমরা রোযা রাখছে, বেঁচে বর্তে থাকা মসজিদগুলিতে প্রতি রাতে তারাবীহ-র নামায আর ভোরে ফজরের নামাযে ব্যাপক ভিড় হচ্ছে। যোগীজি এতে প্রমাদ গুনছেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগীজির প্রশাসন তাই এক নির্দেশনামা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, রমযান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা কি কি করতে পারবে, আর কোন কাজ থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুসলিম মহল্লাগুলির উপর পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, যখন রমযান মাস চলবে তখন সংখ্যাগুরুদের হোলি উৎসবও রয়েছে। এ সময় গন্ডগোল হতে পারে আশংকায় নাকি এই বাড়তি নজরদারি। এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে যোগীজির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, রমযানের এক জুম্মার নামায ও হোলি উৎসব ১৪ মার্চ পড়েছে। এর আগেও রমযানের সময় হোলি হয়েছে। সবাই নিজের নিজের উৎসব ও ধর্ম পালন করেছে। কিন্তু এবার উত্তরপ্রদেশে এ নিয়ে নাকি কি হয়, কি হয় অবস্থা তৈরি হয়েছে। আর তাই মুসলিম মহল্লাগুলিতে এখন থেকেই বিশেষ নজরদারি। যারা গন্ডগোল করতে পারে বলে যোগী সরকার মনে করে, তাদেরকে কড়া নজরে রাখা শুরু হয়েছে। এছাড়া পুলিশ আরও কিছু নির্দেশাবলী জারি করেছে মসজিদ ও মুসলিম মহল্লা কমিটিগুলির উপর। কিছু মসজিদ থেকে মাইক খুলে নিয়েছে যোগী-পুলিশ।
এদিকে অসমেও হিমন্ত সরকার রমযান উপলক্ষে বেশকিছু নির্দেশ জারি করেছে। যেমন, মুসলিম মহল্লাগুলিতে ভোররাতে রোযাদারদের জাগানোর জন্য যে জাগানিয়া গান গাওয়া হয় তা চলবে না। মসজিদের মাইক থেকেও ভোররাতে সেহেরির সময় জানানো হয়। তার উপরও নিষেধজ্ঞা দিয়েছে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার পুলিশ। আরও বলা হয়েছে, ইফতারের ব্যবস্থা করলে তা করতে হবে মসজিদের ভেতর, বাইরে করা যাবে না। এই ধরনের ছোট ছোট নানা বিধিনিষেধে রমযানের খুশি ও ইবাদতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে ইউপি ও অসমের বিজেপি সরকার।
অনেকে বলছেন, যোগী আদিত্যনাথ ও হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মধ্যে মুসলিমদের কে কত ভাবে হেয় করতে পারে বা উত্তপ্ত করতে পারে, তার প্রতিযোগীতা চলছে। কে জিতবেন, তা আগামীতে সময়ই বলে দেবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রমযান: একদিকে খোশ আমদেদ, অন্যদিকে বিধিনিষেধ

আপডেট : ৩ মার্চ ২০২৫, সোমবার

হিমন্তের অসম ও যোগীর উত্তরপ্রদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক: সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে বরকত ও কল্যাণময় মাস মাহে রমযান। পৃথিবীর সব দেশের মুসলিম এই পুরো মাসে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন হওয়ার চেষ্টা করেন। আত্মশুদ্ধির মাস হল রমযান। এই মাসে মুসলিমদের সবর (ধৈর্য্য) ও শান্তির উপর গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। তাই রোযাদারদের সঙ্গে কেউ যদি ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে রোযাদার বলেন, ‘কালু সালামা! আমি একজন রোযাদার, অযথা কোনও বিতর্কে আমি নিজেকে জড়াবো না।’ অর্থাৎ রোযার সময় আল্লাহ বিশ্বাসী মুসলিমরা কোনও অশান্তি বা বাকবিতন্ডায় না জড়িয়ে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেন। যাতে তিনি এবং অন্য সকলে আল্লাহ-র ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারেন।
রমযান মাসকে স্বাগত জানিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেস, বিশ্ব-বাদশাহ ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমন কি বিজেপির মুখ্য মুখ প্রাইমিনিস্টার নরেন্দ্র মোদিও।
কিন্তু হলে কি হবে! পবিত্র রমযান মাসকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দারুন রকম বিপদে পড়ে গেছেন। কি জানি এত বুলডোজার, এনকাউন্টার, গ্রেফতারির পরও মুসলিমরা রোযা রাখছে, বেঁচে বর্তে থাকা মসজিদগুলিতে প্রতি রাতে তারাবীহ-র নামায আর ভোরে ফজরের নামাযে ব্যাপক ভিড় হচ্ছে। যোগীজি এতে প্রমাদ গুনছেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগীজির প্রশাসন তাই এক নির্দেশনামা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, রমযান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা কি কি করতে পারবে, আর কোন কাজ থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুসলিম মহল্লাগুলির উপর পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, যখন রমযান মাস চলবে তখন সংখ্যাগুরুদের হোলি উৎসবও রয়েছে। এ সময় গন্ডগোল হতে পারে আশংকায় নাকি এই বাড়তি নজরদারি। এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে যোগীজির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, রমযানের এক জুম্মার নামায ও হোলি উৎসব ১৪ মার্চ পড়েছে। এর আগেও রমযানের সময় হোলি হয়েছে। সবাই নিজের নিজের উৎসব ও ধর্ম পালন করেছে। কিন্তু এবার উত্তরপ্রদেশে এ নিয়ে নাকি কি হয়, কি হয় অবস্থা তৈরি হয়েছে। আর তাই মুসলিম মহল্লাগুলিতে এখন থেকেই বিশেষ নজরদারি। যারা গন্ডগোল করতে পারে বলে যোগী সরকার মনে করে, তাদেরকে কড়া নজরে রাখা শুরু হয়েছে। এছাড়া পুলিশ আরও কিছু নির্দেশাবলী জারি করেছে মসজিদ ও মুসলিম মহল্লা কমিটিগুলির উপর। কিছু মসজিদ থেকে মাইক খুলে নিয়েছে যোগী-পুলিশ।
এদিকে অসমেও হিমন্ত সরকার রমযান উপলক্ষে বেশকিছু নির্দেশ জারি করেছে। যেমন, মুসলিম মহল্লাগুলিতে ভোররাতে রোযাদারদের জাগানোর জন্য যে জাগানিয়া গান গাওয়া হয় তা চলবে না। মসজিদের মাইক থেকেও ভোররাতে সেহেরির সময় জানানো হয়। তার উপরও নিষেধজ্ঞা দিয়েছে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার পুলিশ। আরও বলা হয়েছে, ইফতারের ব্যবস্থা করলে তা করতে হবে মসজিদের ভেতর, বাইরে করা যাবে না। এই ধরনের ছোট ছোট নানা বিধিনিষেধে রমযানের খুশি ও ইবাদতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে ইউপি ও অসমের বিজেপি সরকার।
অনেকে বলছেন, যোগী আদিত্যনাথ ও হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মধ্যে মুসলিমদের কে কত ভাবে হেয় করতে পারে বা উত্তপ্ত করতে পারে, তার প্রতিযোগীতা চলছে। কে জিতবেন, তা আগামীতে সময়ই বলে দেবে।