২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জল পর্যন্ত খেতে পাইনি এখন আর গোলাপ দিয়ে কী হবে?

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৪ মার্চ ২০২২, শুক্রবার
  • / 9

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ইউক্রেন থেকে দিল্লির বিমান বন্দরে পা রেখেছিলেন তাঁরা। স্বাগত জানাতে তাঁদের দিকে গিয়ে দেওয়া হল গোলাপ। সেই গোলাপ অবশ্য ফেরাননি তাঁরা। কিন্তু পালটা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, ‘এখন আর গোলাপ দিয়ে কী হবে?’ ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়ারা অকপট জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। মোদি সরকার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ করলে তাঁদের এই ভয়ংকর বিপদের মধ্যে পড়তে হত না।

‘এখন গোলাপ দিয়ে কি হবে? আমি এটা নিয়ে কি করব? ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ নিলে আমাদের এই দুর্দশার মধ্যে পড়তেই হত না।’ দেশে ফিরে এই ভাষাতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিলেন ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা পড়ুয়ারা । মতিহারি বিহারের বাসিন্দা দিব্যাংশু সিং ইউক্রেন থেকে হাঙ্গেরি হয়ে ভারতে পৌঁছেছেন বৃহস্পতিবার সকালে। মৃত্যু যে কতটা ভয়ংকর সেটা সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন এই কয়েকদিন। চোখে মুখে যুদ্ধের সেই আতঙ্ক স্পষ্ট। সেই ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লি বিমানবন্দরে পা রাখেন তিনি।

 

এয়ারপোর্টে নামতেই যখন তাঁকে গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানানো হয় তখন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি তিনি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন ‘এখন আমরা এখানে আছি। আমাদের এটি (গোলাপ) দেওয়া হচ্ছে। কী লাভ? আমরা এটি দিয়ে কী করব? কিছু হয়ে গেলে আমাদের পরিবার কী করত? সেখানে আমাদের কি হয়েছে সেই বিষয়ে কেউ কোনও খোঁজ নেয়নি। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এই ধরনের প্রদর্শনের (গোলাপ দেওয়া) কোনও প্রয়োজনই হত না। আমাদের পরিবার সদস্যেরা এই কয়েকদিন কতটা উদ্বেগে দিন কাটিয়েছে সে সম্পর্কে কারও কোনও ধারণাই নেই। আমরা সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরিতে যাওয়ার পরেই সাহায্য পেয়েছি।

 

এর আগে কেউ কোনও সাহায্য করেনি। আমরা যা কিছু করেছি সব নিজেরাই করেছি। আমরা দশজনের একটি দল একসাথে হাঙ্গেরি যাওয়ার জন্য ট্রেনে চড়েছিলাম। সেই ট্রেনে রীতিমতো তিলধারণের জায়গা ছিল না।’ পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ ইউক্রেনে থাকাকালীন ভারতীয় দূতাবাস কোনও সাহায্য করেনি। ইউক্রেনে যাঁরা প্রাণ হাতে করে আটকে রয়েছেন তাঁদের নিজেদেরই কোনও না কোনও উপায়ে হাঙ্গেরি পৌঁছতে হচ্ছে।

 

হাঙ্গেরিতে পৌঁছানোর পরে তাঁদের সাহায্য করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছেন। এই প্রসঙ্গে দিব্যাংশুর বক্তব্য, ‘স্থানীয় লোকজন আমাদের সাহায্য করেছে। কেউ আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার ব্যবহার করেনি। এটা সত্য যে পোল্যান্ড সীমান্তে কিছু ছাত্রকে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে এর জন্য আমাদের সরকারই (কেন্দ্র) দায়ী। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে আমাদের এত বিপদের মুখে পড়তে হত না। আমেরিকা সবার আগে তাঁদের নাগরিকদের চলে যেতে বলে কিন্তু সেই সময়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

চরম দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন দুই বাঙালি পড়ুয়ারা । তাঁরা লাভিভ মেডিক্যাল মিশন ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে ফিরতে তাঁদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। মাইনাস তাপমাত্রায় প্রবল ঠান্ডার মধ্যে পায়ে হেঁটে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছতে হয়েছে তাঁদের। ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড হয়ে কোনওক্রমে ভারতে ফেরার বিমান ধরতে পারেন দার্জিলিংয়ের দুই পড়ুয়া। তাঁরা জানাচ্ছেন ইউক্রেনে গোলাগুলির মাঝেই মাইনাস ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কখনও জঙ্গল, কখনও গ্রামের রাস্তা ধরে ৪৫ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছেছিলেন পোল্যান্ড সীমান্তে।

 

সেখান থেকে দেশে ফেরার বিমান ধরেন। ইউক্রেন থেকে দেশে ফেরা একাধিক পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তাঁদের এক সপ্তাহ খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়েছে। কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। প্রবল ঠান্ডায় জঙ্গল, গ্রাম্য পথ ধরে পৌঁছে যান পোল্যান্ড সীমান্তে। সেখানে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের পর দেশে ফেরার বিমানে ওঠেন তাঁরা। তাঁরা বলেছেন, ইউক্রেন পেরিয়ে বর্ডার পয়েন্টে আসাটা ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ। পোল্যান্ডে পৌঁছানোর পর ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর পেয়েছেন আশ্রয় খাওয়া-দাওয়া। তারপর বিমানে নিজের দেশ ভারতে ফিরতে পেরেছেন।

 

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বুখারেস্ট থেকে ৮টি উড়ান রোমানিয়ার সুসেভা থেকে ২টি স্লোভাকিয়ার কোসিস থেকে ১টি হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট থেকে ৫টি ও পোল্যান্ডের রেজেসো থেকে ৩টি বিমানে ৩৭২৬ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হবে। আজ শুক্রবার আরও ৪৮০০ জন ভারতীয়কে ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে দাবি সিন্ধিয়ার।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

জল পর্যন্ত খেতে পাইনি এখন আর গোলাপ দিয়ে কী হবে?

আপডেট : ৪ মার্চ ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ইউক্রেন থেকে দিল্লির বিমান বন্দরে পা রেখেছিলেন তাঁরা। স্বাগত জানাতে তাঁদের দিকে গিয়ে দেওয়া হল গোলাপ। সেই গোলাপ অবশ্য ফেরাননি তাঁরা। কিন্তু পালটা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, ‘এখন আর গোলাপ দিয়ে কী হবে?’ ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়ারা অকপট জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। মোদি সরকার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ করলে তাঁদের এই ভয়ংকর বিপদের মধ্যে পড়তে হত না।

‘এখন গোলাপ দিয়ে কি হবে? আমি এটা নিয়ে কি করব? ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ নিলে আমাদের এই দুর্দশার মধ্যে পড়তেই হত না।’ দেশে ফিরে এই ভাষাতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিলেন ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা পড়ুয়ারা । মতিহারি বিহারের বাসিন্দা দিব্যাংশু সিং ইউক্রেন থেকে হাঙ্গেরি হয়ে ভারতে পৌঁছেছেন বৃহস্পতিবার সকালে। মৃত্যু যে কতটা ভয়ংকর সেটা সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন এই কয়েকদিন। চোখে মুখে যুদ্ধের সেই আতঙ্ক স্পষ্ট। সেই ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লি বিমানবন্দরে পা রাখেন তিনি।

 

এয়ারপোর্টে নামতেই যখন তাঁকে গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানানো হয় তখন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি তিনি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন ‘এখন আমরা এখানে আছি। আমাদের এটি (গোলাপ) দেওয়া হচ্ছে। কী লাভ? আমরা এটি দিয়ে কী করব? কিছু হয়ে গেলে আমাদের পরিবার কী করত? সেখানে আমাদের কি হয়েছে সেই বিষয়ে কেউ কোনও খোঁজ নেয়নি। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এই ধরনের প্রদর্শনের (গোলাপ দেওয়া) কোনও প্রয়োজনই হত না। আমাদের পরিবার সদস্যেরা এই কয়েকদিন কতটা উদ্বেগে দিন কাটিয়েছে সে সম্পর্কে কারও কোনও ধারণাই নেই। আমরা সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরিতে যাওয়ার পরেই সাহায্য পেয়েছি।

 

এর আগে কেউ কোনও সাহায্য করেনি। আমরা যা কিছু করেছি সব নিজেরাই করেছি। আমরা দশজনের একটি দল একসাথে হাঙ্গেরি যাওয়ার জন্য ট্রেনে চড়েছিলাম। সেই ট্রেনে রীতিমতো তিলধারণের জায়গা ছিল না।’ পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ ইউক্রেনে থাকাকালীন ভারতীয় দূতাবাস কোনও সাহায্য করেনি। ইউক্রেনে যাঁরা প্রাণ হাতে করে আটকে রয়েছেন তাঁদের নিজেদেরই কোনও না কোনও উপায়ে হাঙ্গেরি পৌঁছতে হচ্ছে।

 

হাঙ্গেরিতে পৌঁছানোর পরে তাঁদের সাহায্য করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছেন। এই প্রসঙ্গে দিব্যাংশুর বক্তব্য, ‘স্থানীয় লোকজন আমাদের সাহায্য করেছে। কেউ আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার ব্যবহার করেনি। এটা সত্য যে পোল্যান্ড সীমান্তে কিছু ছাত্রকে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে এর জন্য আমাদের সরকারই (কেন্দ্র) দায়ী। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে আমাদের এত বিপদের মুখে পড়তে হত না। আমেরিকা সবার আগে তাঁদের নাগরিকদের চলে যেতে বলে কিন্তু সেই সময়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

চরম দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন দুই বাঙালি পড়ুয়ারা । তাঁরা লাভিভ মেডিক্যাল মিশন ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে ফিরতে তাঁদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। মাইনাস তাপমাত্রায় প্রবল ঠান্ডার মধ্যে পায়ে হেঁটে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছতে হয়েছে তাঁদের। ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড হয়ে কোনওক্রমে ভারতে ফেরার বিমান ধরতে পারেন দার্জিলিংয়ের দুই পড়ুয়া। তাঁরা জানাচ্ছেন ইউক্রেনে গোলাগুলির মাঝেই মাইনাস ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কখনও জঙ্গল, কখনও গ্রামের রাস্তা ধরে ৪৫ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছেছিলেন পোল্যান্ড সীমান্তে।

 

সেখান থেকে দেশে ফেরার বিমান ধরেন। ইউক্রেন থেকে দেশে ফেরা একাধিক পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তাঁদের এক সপ্তাহ খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়েছে। কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। প্রবল ঠান্ডায় জঙ্গল, গ্রাম্য পথ ধরে পৌঁছে যান পোল্যান্ড সীমান্তে। সেখানে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের পর দেশে ফেরার বিমানে ওঠেন তাঁরা। তাঁরা বলেছেন, ইউক্রেন পেরিয়ে বর্ডার পয়েন্টে আসাটা ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ। পোল্যান্ডে পৌঁছানোর পর ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর পেয়েছেন আশ্রয় খাওয়া-দাওয়া। তারপর বিমানে নিজের দেশ ভারতে ফিরতে পেরেছেন।

 

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বুখারেস্ট থেকে ৮টি উড়ান রোমানিয়ার সুসেভা থেকে ২টি স্লোভাকিয়ার কোসিস থেকে ১টি হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট থেকে ৫টি ও পোল্যান্ডের রেজেসো থেকে ৩টি বিমানে ৩৭২৬ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হবে। আজ শুক্রবার আরও ৪৮০০ জন ভারতীয়কে ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে দাবি সিন্ধিয়ার।