২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্কুলের নিয়ম বনাম হিজাবের ধর্মীয় স্বাধীনতা

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 12

এ হাসানঃ হিজাব নিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে ফের শুনানি হবে। ইতিমধ্যে যে শুনানি হয়েছে তাতে সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, কোনও ছাত্রীকেই নিজের ইচ্ছেমতো মিনি, মিডি বা যা ইচ্ছে তাই পরে কলেজে আসতে পারে? কারও ধর্মীয় অধিকার থাকলেই সে কি তা কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেখানে ইউনিফর্ম নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সেখানে সেই অধিকার প্রয়োগ করতে পারে?

কর্নাটকে বেশকিছু মুসলিম মেয়ে চিরাচরিতভাবে মাথায় ওড়না কিংবা হিজাব পরিধান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে থাকলে তাতে কিছুদিন আগে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয়, হিজাব পরে আসা যাবে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরে আসতে হবে।

যদিও কলেজে সাধারণত নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম থাকে না, সেখানেও মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরে আসতে বাধা দেওয়া হয়। এই ধরনের বাধার মুখে বেশকিছু মুসলিম ছাত্রী নিজেদের ধর্মীয় মর্যাদাসম্পন্ন পোশাক হিজাব পরতে না পারায় কলেজ, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

 

বিষয়টি হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়। আর বর্তমানে এরই শুনানি চলছে। সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা মন্তব্য করেছেন, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে ধর্মীয় চাহিদাসম্পন্ন পোশাক পরিধান করা সঠিক নয়।

 

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সত্যি কি তাই? যারা প্রতিষ্ঠানে অশালীন পোশাক যেমন মিনি, মিডি বা হটপ্যান্ট পরে আসবে তাদের সঙ্গে হিজাবের তুলনা করা বোধহয় সঠিক নয়। আর অনেক স্কুলে মেয়েদের যে স্কার্টের ইউনিফর্ম আছে তা হাঁটুর উপরে তোলা। এক্ষেত্রে মুসলিম এবং আরও দু-একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এবং ক্ষেত্রে বিশেষে তা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে। তারা কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ওই নির্দেশকে পালন করবে?

এছাড়া ভারতে তো কিছু সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মীয় পোশাক পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি সেনাবাহিনীতেও যোগ দেওয়ার ছাড় রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ শিখ সম্প্রদায়ের পুরুষদের লম্বা চুল, দাড়ি ও মাথায় পাগড়ি পরিধানের উল্লেখ করা যেতে পারে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের শিখ বিচারপতিরাও দাড়ি, লম্বা চুল ও পাগড়ি পরেই বিচারকের আসনে বসেন। এক্ষেত্রে কেউ আপত্তি তুলেছে বলে জানা যায়নি।

 

সম্প্রতি কর্নাটকেই একজন শিখ ছাত্রী তাদের ধর্মীয় পাগড়ি পরিধান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসেন। কর্তৃপক্ষ আদালতের কথা তুলে তাতে বাধা দিলে তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেন। ওই শিখ ছাত্রীকে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদান করেন।

 

আর একটি কথা উল্লেখযোগ্য। আদালতে বলা হয়েছে, ইসলামে নাকি হিজাব পরিধান করা বাধ্যতামূলক নয়। এই ধরনের ফতোয়া বিচারপতিরা দিতে পারেন না। কারণ, মুসলিম মেয়েদের মাথা ও বুক আবৃত করার প্রায় ১৫০০ বছরের ট্র্যাডিশন রয়েছে।

 

অন্যদিকে শিখ পুরুষ ও নারীদের ধর্মীয় পোশাক এবং ‘পাঁচ কে’ যেমন অকর্তিত কেশ, কৃপাণ, লোহার বালা (কাদা)- এগুলি শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরুনানক কখনই বলে যাননি। গুরুনানকের প্রায় ২০০ বছর পরে এগুলি শিখ ধর্মে গুরু গোবি¨ সিংয়ের সময় প্রবেশ করে। কাজেই একে শিখ ধর্মের অপরিহার্য অংশ হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু কোনও আইন-আদালতই বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিখদের উপর পাগড়ি ধারণ না করার নিদান দিতে পারবে না। অবশ্য ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় মুসলিমদের ক্ষেত্রে ইদানিং যেকোনও কারণেই হোক ভিন্ন মত প্রধান্য পাচ্ছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

স্কুলের নিয়ম বনাম হিজাবের ধর্মীয় স্বাধীনতা

আপডেট : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার

এ হাসানঃ হিজাব নিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে ফের শুনানি হবে। ইতিমধ্যে যে শুনানি হয়েছে তাতে সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, কোনও ছাত্রীকেই নিজের ইচ্ছেমতো মিনি, মিডি বা যা ইচ্ছে তাই পরে কলেজে আসতে পারে? কারও ধর্মীয় অধিকার থাকলেই সে কি তা কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেখানে ইউনিফর্ম নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সেখানে সেই অধিকার প্রয়োগ করতে পারে?

কর্নাটকে বেশকিছু মুসলিম মেয়ে চিরাচরিতভাবে মাথায় ওড়না কিংবা হিজাব পরিধান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে থাকলে তাতে কিছুদিন আগে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয়, হিজাব পরে আসা যাবে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরে আসতে হবে।

যদিও কলেজে সাধারণত নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম থাকে না, সেখানেও মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরে আসতে বাধা দেওয়া হয়। এই ধরনের বাধার মুখে বেশকিছু মুসলিম ছাত্রী নিজেদের ধর্মীয় মর্যাদাসম্পন্ন পোশাক হিজাব পরতে না পারায় কলেজ, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

 

বিষয়টি হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়। আর বর্তমানে এরই শুনানি চলছে। সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা মন্তব্য করেছেন, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে ধর্মীয় চাহিদাসম্পন্ন পোশাক পরিধান করা সঠিক নয়।

 

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সত্যি কি তাই? যারা প্রতিষ্ঠানে অশালীন পোশাক যেমন মিনি, মিডি বা হটপ্যান্ট পরে আসবে তাদের সঙ্গে হিজাবের তুলনা করা বোধহয় সঠিক নয়। আর অনেক স্কুলে মেয়েদের যে স্কার্টের ইউনিফর্ম আছে তা হাঁটুর উপরে তোলা। এক্ষেত্রে মুসলিম এবং আরও দু-একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এবং ক্ষেত্রে বিশেষে তা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে। তারা কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ওই নির্দেশকে পালন করবে?

এছাড়া ভারতে তো কিছু সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মীয় পোশাক পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি সেনাবাহিনীতেও যোগ দেওয়ার ছাড় রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ শিখ সম্প্রদায়ের পুরুষদের লম্বা চুল, দাড়ি ও মাথায় পাগড়ি পরিধানের উল্লেখ করা যেতে পারে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের শিখ বিচারপতিরাও দাড়ি, লম্বা চুল ও পাগড়ি পরেই বিচারকের আসনে বসেন। এক্ষেত্রে কেউ আপত্তি তুলেছে বলে জানা যায়নি।

 

সম্প্রতি কর্নাটকেই একজন শিখ ছাত্রী তাদের ধর্মীয় পাগড়ি পরিধান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসেন। কর্তৃপক্ষ আদালতের কথা তুলে তাতে বাধা দিলে তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেন। ওই শিখ ছাত্রীকে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদান করেন।

 

আর একটি কথা উল্লেখযোগ্য। আদালতে বলা হয়েছে, ইসলামে নাকি হিজাব পরিধান করা বাধ্যতামূলক নয়। এই ধরনের ফতোয়া বিচারপতিরা দিতে পারেন না। কারণ, মুসলিম মেয়েদের মাথা ও বুক আবৃত করার প্রায় ১৫০০ বছরের ট্র্যাডিশন রয়েছে।

 

অন্যদিকে শিখ পুরুষ ও নারীদের ধর্মীয় পোশাক এবং ‘পাঁচ কে’ যেমন অকর্তিত কেশ, কৃপাণ, লোহার বালা (কাদা)- এগুলি শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরুনানক কখনই বলে যাননি। গুরুনানকের প্রায় ২০০ বছর পরে এগুলি শিখ ধর্মে গুরু গোবি¨ সিংয়ের সময় প্রবেশ করে। কাজেই একে শিখ ধর্মের অপরিহার্য অংশ হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু কোনও আইন-আদালতই বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিখদের উপর পাগড়ি ধারণ না করার নিদান দিতে পারবে না। অবশ্য ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় মুসলিমদের ক্ষেত্রে ইদানিং যেকোনও কারণেই হোক ভিন্ন মত প্রধান্য পাচ্ছে।