২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভালো নম্বর পেলেও ইন্টারভিউতে সংখ্যালঘুরা বাদ যাচ্ছে: জাভেদ খান

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার
  • / 6

বৈদ্যুতিন প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেছেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি, জাভেদ আহমেদ খান, মমতাজ সংঘমিতা। পাশে রয়েছেন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি, সাবিনা ইয়াসমিন। (ছবি-সন্দীপ সাহা)

পুবের কলম প্রতিবেদক: রবিবার ছিল ৩০তম আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু অধিকার দিবস। এই দিবস স্মরণে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের উদ্যোগে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এদিন কলকাতার খাদ্য ভবন অডিটোরিয়ামে উপস্থিত বিশিষ্টরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে সরব হন।

সেমিনারে গ্রন্থাগার ও জনশিক্ষা প্রসার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বিভাজন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সংখ্যালঘু একজোট হয়ে থাকতে চায়। তাদের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। তবে কেউ কেউ বিভাজনের চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই চেষ্টা রুখবে সংখ্যালঘুরা।

স্বাধীনতা আন্দোলনে সংখ্যালঘুদের ভূমিকা রয়েছে। দেশের একটি গোষ্ঠীর লক্ষ্য মানুষের মনোবল ভেঙে দেওয়া। কিন্তু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মনোবল কেউ ভাঙতে পারবে না। এর জন্য প্রয়োজন সংখ্যালঘু মানুষদের মধ্যে সমন্বয়। তাঁর বক্তব্য, শিক্ষাক্ষেত্রে এ’ন সংখ্যালঘুরা ভালো ফল করছে।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এখন খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। মানুষকে হয়রানির মধ্যে ফেলতে এনআরসি চালু করার কথা বলা হচ্ছে।  কিন্তু আমাদের অধিকার সংবিধান দিয়েছে।

তাই এই অধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত হবে না। এদিন শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে জাভেদ খান বলেন, ‘শিক্ষা ও চাকরির লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভালো ফল করছেন সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী, গবেষক ও চাকরীপ্রার্থীরা। কিন্তু ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করলেও ইন্টারভিউয়ের সময় সংখ্যালঘুদের বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

রাজ্যের সংখ্যালঘুদের বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি এ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৭০ শতাংশ কাজ হয়েছে। সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা দেশ ও বিদেশের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাচ্ছেন। এডুকেশন ও ব্যাঙ্ক লোন পেয়ে বহু ছাত্রছাত্রী ও গবেষক উপকৃত হচ্ছেন। এ’ন গ্রামবাংলার বহু ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে সুযোগ পাচ্ছেন।

অধিকার পেতে নিজেদেরই এগিয়ে আসার বার্তা দেন সেচ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, কেউ অধিকার দেয় না। প্রতিটি মানুষ যাতে অধিকার পায়, সেটা লক্ষ রাখা উচিত। সারা বছরের শুধুমাত্র একদিন ‘অধিকার দিবস’ হিসেবে পালন করলেই হবে না। অধিকার পেতে প্রতিদিনই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারপার্সন ডা. মমতাজ সঙ্ঘমিতা বলেন, কমিশনের লক্ষ্য সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো। ধর্ম, ভাষা, খাদ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অধিকার রক্ষা ও দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে কমিশন।
এ রাজ্যে সংখ্যালঘু মানুষদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নতির বিষয়গুলি নজর দিতে মাইনোরিটি কমিশন জেলায় জেলায় কাজ করছে। আগামী দিনেও এই কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে।

এদিনের সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ নাদিমুল হক, সংখ্যালঘু দফতরের সচিব গুলাম আলি আনসারি, সংখ্যালঘু কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান মাইকেল কালভার্ট, কমিশনের সেক্রেটারি আইএএস সাকিল আহমেদ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আবু তাহের কমরুদ্দিন, ক্যাথলিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাঞ্জেলিনা ম্যানটস জাসনানি, আমানত ফাউন্ডেশনের কর্ণধার মুহাম্মদ শাহ আলম, অরুণজ্যোতি ভিক্ষু সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যরা।

এদিন সংখ্যালঘু দিবস পালন উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অধিকার ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন জেলার স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
৩০তম বিশ্ব সংখ্যালঘু দিবস সেমিনারে ‘দ্য মাইনোরিটিজ ইন ইন্ডিয়া আর বিউটি অফ সেকুলারিজম অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ শীর্ষক একটি স্মরণিকার উদ্বোধন করেন উপস্থিত বিশিষ্টরা।

এদিন বিকেলে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করে কমিশন। ওই আলোচনাচক্রে সংখ্যালঘুদের সমস্যা ও অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকরা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ভালো নম্বর পেলেও ইন্টারভিউতে সংখ্যালঘুরা বাদ যাচ্ছে: জাভেদ খান

আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: রবিবার ছিল ৩০তম আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু অধিকার দিবস। এই দিবস স্মরণে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের উদ্যোগে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এদিন কলকাতার খাদ্য ভবন অডিটোরিয়ামে উপস্থিত বিশিষ্টরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে সরব হন।

সেমিনারে গ্রন্থাগার ও জনশিক্ষা প্রসার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বিভাজন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সংখ্যালঘু একজোট হয়ে থাকতে চায়। তাদের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। তবে কেউ কেউ বিভাজনের চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই চেষ্টা রুখবে সংখ্যালঘুরা।

স্বাধীনতা আন্দোলনে সংখ্যালঘুদের ভূমিকা রয়েছে। দেশের একটি গোষ্ঠীর লক্ষ্য মানুষের মনোবল ভেঙে দেওয়া। কিন্তু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মনোবল কেউ ভাঙতে পারবে না। এর জন্য প্রয়োজন সংখ্যালঘু মানুষদের মধ্যে সমন্বয়। তাঁর বক্তব্য, শিক্ষাক্ষেত্রে এ’ন সংখ্যালঘুরা ভালো ফল করছে।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এখন খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। মানুষকে হয়রানির মধ্যে ফেলতে এনআরসি চালু করার কথা বলা হচ্ছে।  কিন্তু আমাদের অধিকার সংবিধান দিয়েছে।

তাই এই অধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত হবে না। এদিন শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে জাভেদ খান বলেন, ‘শিক্ষা ও চাকরির লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভালো ফল করছেন সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী, গবেষক ও চাকরীপ্রার্থীরা। কিন্তু ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করলেও ইন্টারভিউয়ের সময় সংখ্যালঘুদের বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

রাজ্যের সংখ্যালঘুদের বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি এ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৭০ শতাংশ কাজ হয়েছে। সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা দেশ ও বিদেশের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাচ্ছেন। এডুকেশন ও ব্যাঙ্ক লোন পেয়ে বহু ছাত্রছাত্রী ও গবেষক উপকৃত হচ্ছেন। এ’ন গ্রামবাংলার বহু ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে সুযোগ পাচ্ছেন।

অধিকার পেতে নিজেদেরই এগিয়ে আসার বার্তা দেন সেচ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, কেউ অধিকার দেয় না। প্রতিটি মানুষ যাতে অধিকার পায়, সেটা লক্ষ রাখা উচিত। সারা বছরের শুধুমাত্র একদিন ‘অধিকার দিবস’ হিসেবে পালন করলেই হবে না। অধিকার পেতে প্রতিদিনই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারপার্সন ডা. মমতাজ সঙ্ঘমিতা বলেন, কমিশনের লক্ষ্য সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো। ধর্ম, ভাষা, খাদ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অধিকার রক্ষা ও দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে কমিশন।
এ রাজ্যে সংখ্যালঘু মানুষদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নতির বিষয়গুলি নজর দিতে মাইনোরিটি কমিশন জেলায় জেলায় কাজ করছে। আগামী দিনেও এই কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে।

এদিনের সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ নাদিমুল হক, সংখ্যালঘু দফতরের সচিব গুলাম আলি আনসারি, সংখ্যালঘু কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান মাইকেল কালভার্ট, কমিশনের সেক্রেটারি আইএএস সাকিল আহমেদ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আবু তাহের কমরুদ্দিন, ক্যাথলিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাঞ্জেলিনা ম্যানটস জাসনানি, আমানত ফাউন্ডেশনের কর্ণধার মুহাম্মদ শাহ আলম, অরুণজ্যোতি ভিক্ষু সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যরা।

এদিন সংখ্যালঘু দিবস পালন উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অধিকার ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন জেলার স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
৩০তম বিশ্ব সংখ্যালঘু দিবস সেমিনারে ‘দ্য মাইনোরিটিজ ইন ইন্ডিয়া আর বিউটি অফ সেকুলারিজম অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ শীর্ষক একটি স্মরণিকার উদ্বোধন করেন উপস্থিত বিশিষ্টরা।

এদিন বিকেলে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করে কমিশন। ওই আলোচনাচক্রে সংখ্যালঘুদের সমস্যা ও অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকরা।