২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাভাষা হিন্দু-মুসলিমের যৌথসাধনার ফসল: জহর সরকার

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার
  • / 12

শনিবার পুবের কলম-এর ঈদ মিলন অনুষ্ঠানে বাঁদিক থেকে জাহিরুল হাসান, জয়প্রকাশ মজুমদার, আহমদ হাসান ইমরান এবং ড. সৈয়দ নুরুস সালাম। (ছবি-সন্দীপ সাহা)

পুবের কলম প্রতিবেদক: ঈদ উপলক্ষে দৈনিক ‘পুবের কলম’ প্রতি বছর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। এপার বাংলায় ঈদসংখ্যা প্রকাশিত হয় হাতে গোনা। সেই জায়গায় পুবের কলম-এর ঈদসংখ্যা প্রকাশ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। শনিবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ঈদ মিলন অনুষ্ঠান ও ঈদ সংখ্যা পাঠ পরিক্রমার। ঈদসংখ্যাকে উপলক্ষ করে এমন মিলন ও সম্প্রীতির উৎসব কলকাতার বুকে তেমন একটা অনুষ্ঠিত হয় না বললেই চলে। এক সপ্তাহ আগে ঈদ-উল-ফিতর হয়ে গেলেও এদিনের অনুষ্ঠানে ঈদের খুশির আমেজ ছিল শুরু থেকেই।

দূরদূরান্ত থেকে আগত মানুষের শারীরিক ক্লান্তি মুছে যাচ্ছিল ‘শাওয়ালিয়া’ আনন্দে। হিন্দু-মুসলিম অপরিচয়ের বেড়া ভেঙে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এদিন হাজির ছিলেন মঞ্চে। ঈদ উৎসব ‘সর্বজনীন’ নয়, এমন অভিযোগের খানিকটা হলেও জবাব দিয়েছে এই অনুষ্ঠান। মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝড় উপেক্ষা করে দূরবর্তী জেলা থেকে অনেক মানুষ আসেন। ভর্তি হয়ে ওঠে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম। মানুষের হাতে ঈদ সংখ্যা, সোমঋতা মল্লিকের কণ্ঠে ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ আলিয়ার বারান্দায় চা-আড্ডা, হিন্দু-মুসলিম অতিথি-দর্শকদের হাসিমুখ উপস্থিতি ও আলাপ রীতিমতো উৎসবমুখর করে তোলে এদিনের বৃষ্টিভেজা পরিবেশকে।

ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতির মিলন ও পারস্পরিক পরিচয়ের মঞ্চ হয়ে ওঠে এটি। অবধারিতভাবে এসে পড়ে বাংলাভাষার বিকাশে মুসলমানদের ঐতিহাসিক অবদান, আরবি-ফারসি শধ প্রবেশ বিতর্কও। এ প্রসঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ ও প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকারের মন্তব্যটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, বাংলাভাষা দুই সম্প্রদায়ের মিলিত সাধনার ফসল। এতে কারও অবদানকে খাটো করা যাবে না। প্রথমে হিন্দুরাই এই ভাষাটিকে দূরে সরিয়ে ‘অচ্ছুত’ করে রেখেছিল। এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল মুসলিমরাই।

অপরাহ্নবেলার সম্প্রীতি ও মিলনের পরিবেশ ‘মেহসুস’ করে পুবের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান স্বাগত ভাষণে জানান, ঈদসংখ্যা পাঠ পরিক্রমা ও ঈদ মিলনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চাইছি। কাজী নজরুল ইসলামের ‘জেরিন হরফে লেখা আসমানের কুরআন’ গাইছেন সোমঋতা মল্লিক। আমাদের ঈদ মিলনের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছেন জহর সরকার, জাহিরুল হাসান, জয়প্রকাশ মজুমদার, সৈয়দ বাহাউদ্দিন প্রমুখের মতো বিশিষ্টজন। পুবের কলম-এর এবারের ঈদ সংখ্যাও অত্যন্ত মানসম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি মত পেশ করেন। তিনি আরও বলেন, ঈদ হলেই কোলাকুলির দৃশ্য চোখে পড়ে। আমাদের অমুসলিম ভাইয়দের সঙ্গেও আমরা কোলাকুলি করি। ঈদ এভাবেই সম্প্রীতির বার্তা বয়ে আনে। পরস্পরকে জানার তাগিদ থেকেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিশিষ্টজনরা। রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান আইএএস পিবি সালিম, রাজনীতিক জয়প্রকাশ মজুমদার, বিশিষ্ট চিন্তক জাহিরুল হাসান, প্রাক্তন পুলিশ অফিসার ও রাজনীতিক হুমায়ুন কবির, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. সৈয়দ নুরুস সালাম, অধ্যাপক কাজী সুফিউর রহমান, আরফান আলি বিশ্বাস, ড. সাইফুল্লা, রাজনীতিক একেএম ফারহাদ, ক্যাথলিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাঞ্জেলিনা, সাহিত্যিক আবদুর রব খান, এস এম সিরাজুল ইসলাম, শেখ হাফিজুর রহমান, ফারুক আহমেদ, ড. গিয়াসুদ্দিন আমেদ, রক্তিম ইসলাম, একরামূল হক শেখ, পীরজাদা উজায়ের সিদ্দিকি, মুসা আলি, প্রাক্তন বিধায়ক ডা. কাশেম সাহেব, আবদুল মতি, ড. শেখ কামালউদ্দিন, নায়ীমুল হক, জি এম আবুবকর প্রমুখ।

বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী জহর সরকার এদিন বলেন, ঈদ মিলনের দিনটি হল নিজেদের মধ্যে ঐক্যের দিন। আজ আমরা সবাই পরস্পরকে আরও জানতে পারব। এরপরই কথা প্রসঙ্গে তিনি পুবের কলম-এর ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত তাঁর লেখাটির (বাংলা ও তার ফারসি প্রভাব) আলোকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। বাংলাভাষার প্রচার ও প্রসারে মুসলমানদের ঐতিহাসিক অবদানের কথা উঠে আসে তাঁর ভাষণে। তিনি বলেন, আমরা চর্যাপদকে আদি বাংলা বলে থাকি। কিন্তু চর্যাপদ কি বাংলা? পড়লে বোঝা যায়?

আসলে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির হাত ধরে ১৩ শতকে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেই সমস্ত শাসকদের প্রয়োজনে ‘বাঙ্গালাহ’ ভাষায় কথা বলা শুরু হয় সুলতানদের সভায়। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণেরা বাংলা বয়কট করেছে। বড়ু চণ্ডীদাসরা অবশ্য ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে বাংলায় লিখতে আরম্ভ করেছিলেন। বাংলা লেখাও হত ফারসি হরফে। যৌথভাবে হিন্দু-মুসলিম মিলে বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটিয়েছে। বাংলাভাষা আমাদের যৌথসাধনার সম্পত্তি। বর্তমান মেরুকরণ ও হিংসার রাজনীতির প্রসঙ্গও ফুটে ওঠে তাঁর বক্তৃতায়। তিনি বলেন, বাংলায় আমরা সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটতে দিইনি। ‘সাম্প্রদায়িক দানব রাক্ষসটি’কে আটকাতে সবাইকে মাঠে নামতে হবে বলে তিনি সোচ্চার হন নিজ ভাষণে।

জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, আমরা সবাই গর্বিত ভারতবাসী। যে জাতি ইতিহাস ভুলে যায় তাদের সামনের দিনের পতন অনিবার্য। এনসিইআরটির সিলেবাস থেকে মুঘল ইতিহাস বাদ দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, রামায়ণ লিখেছেন একজন শূদ্র। দস্যু রত্নাকর বাল্মিকী হয়ে রামায়ণ রচনা করেন। যারা ইতিহাস গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের বলব কাচের ঘরে বসে অন্যকে ঢিল ছুড়বেন না। তৎকালীন দিনে জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ আম্বেদকর সংবিধানের প্রধান রচয়িতা।  এই ভারতে যারা অশান্তির আগুনে জ্বালাতে চাইবে, তারা যোগ্য জবাব পাবে।

সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, আগের একশো বছরের পত্রিকার ইতিহাস দেখলে বোঝা যায় বর্তমান সময়ে ‘পুবের কলম’ একটা বিশেষ জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। আরও দীর্ঘস্থায়ী হোক এই পত্রিকাটি। ঈদসংখ্যায় বাহাউদ্দিন ‘শাহ আবুবকর সিদ্দিকী রহ. এবং বাংলা চর্চা’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন। এ বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন। উদার আকাশ সম্পাদক ফারুক আহমেদ এ বছরের পুবের কলম ঈদসংখ্যাকে ‘অন্যতম সেরা ঈদসংখ্যা’ বলে মতপ্রকাশ করেন।

এদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় মাওলানা ও ক্বারী আবদুর রাকিব নাদভির কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা ফাতিহার তিলাওয়াত ও তরজমা হয়। নজরুল চর্চা কেন্দ্র ‘ছায়ানট’-এর সোমঋতা মল্লিক ছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন পলাশ চৌধুরী। কবিতাপাঠ করেন আরফিনা, আসিফ রেজা আনসারী,  শিফা পারভিন, মুহাম্মদ শামিম, সাইফুদ্দিন, জয়ন্ত রসিক প্রমুখ।

 

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাংলাভাষা হিন্দু-মুসলিমের যৌথসাধনার ফসল: জহর সরকার

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: ঈদ উপলক্ষে দৈনিক ‘পুবের কলম’ প্রতি বছর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। এপার বাংলায় ঈদসংখ্যা প্রকাশিত হয় হাতে গোনা। সেই জায়গায় পুবের কলম-এর ঈদসংখ্যা প্রকাশ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। শনিবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ঈদ মিলন অনুষ্ঠান ও ঈদ সংখ্যা পাঠ পরিক্রমার। ঈদসংখ্যাকে উপলক্ষ করে এমন মিলন ও সম্প্রীতির উৎসব কলকাতার বুকে তেমন একটা অনুষ্ঠিত হয় না বললেই চলে। এক সপ্তাহ আগে ঈদ-উল-ফিতর হয়ে গেলেও এদিনের অনুষ্ঠানে ঈদের খুশির আমেজ ছিল শুরু থেকেই।

দূরদূরান্ত থেকে আগত মানুষের শারীরিক ক্লান্তি মুছে যাচ্ছিল ‘শাওয়ালিয়া’ আনন্দে। হিন্দু-মুসলিম অপরিচয়ের বেড়া ভেঙে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এদিন হাজির ছিলেন মঞ্চে। ঈদ উৎসব ‘সর্বজনীন’ নয়, এমন অভিযোগের খানিকটা হলেও জবাব দিয়েছে এই অনুষ্ঠান। মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝড় উপেক্ষা করে দূরবর্তী জেলা থেকে অনেক মানুষ আসেন। ভর্তি হয়ে ওঠে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম। মানুষের হাতে ঈদ সংখ্যা, সোমঋতা মল্লিকের কণ্ঠে ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ আলিয়ার বারান্দায় চা-আড্ডা, হিন্দু-মুসলিম অতিথি-দর্শকদের হাসিমুখ উপস্থিতি ও আলাপ রীতিমতো উৎসবমুখর করে তোলে এদিনের বৃষ্টিভেজা পরিবেশকে।

ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতির মিলন ও পারস্পরিক পরিচয়ের মঞ্চ হয়ে ওঠে এটি। অবধারিতভাবে এসে পড়ে বাংলাভাষার বিকাশে মুসলমানদের ঐতিহাসিক অবদান, আরবি-ফারসি শধ প্রবেশ বিতর্কও। এ প্রসঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ ও প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকারের মন্তব্যটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, বাংলাভাষা দুই সম্প্রদায়ের মিলিত সাধনার ফসল। এতে কারও অবদানকে খাটো করা যাবে না। প্রথমে হিন্দুরাই এই ভাষাটিকে দূরে সরিয়ে ‘অচ্ছুত’ করে রেখেছিল। এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল মুসলিমরাই।

অপরাহ্নবেলার সম্প্রীতি ও মিলনের পরিবেশ ‘মেহসুস’ করে পুবের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান স্বাগত ভাষণে জানান, ঈদসংখ্যা পাঠ পরিক্রমা ও ঈদ মিলনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চাইছি। কাজী নজরুল ইসলামের ‘জেরিন হরফে লেখা আসমানের কুরআন’ গাইছেন সোমঋতা মল্লিক। আমাদের ঈদ মিলনের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছেন জহর সরকার, জাহিরুল হাসান, জয়প্রকাশ মজুমদার, সৈয়দ বাহাউদ্দিন প্রমুখের মতো বিশিষ্টজন। পুবের কলম-এর এবারের ঈদ সংখ্যাও অত্যন্ত মানসম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি মত পেশ করেন। তিনি আরও বলেন, ঈদ হলেই কোলাকুলির দৃশ্য চোখে পড়ে। আমাদের অমুসলিম ভাইয়দের সঙ্গেও আমরা কোলাকুলি করি। ঈদ এভাবেই সম্প্রীতির বার্তা বয়ে আনে। পরস্পরকে জানার তাগিদ থেকেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিশিষ্টজনরা। রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান আইএএস পিবি সালিম, রাজনীতিক জয়প্রকাশ মজুমদার, বিশিষ্ট চিন্তক জাহিরুল হাসান, প্রাক্তন পুলিশ অফিসার ও রাজনীতিক হুমায়ুন কবির, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. সৈয়দ নুরুস সালাম, অধ্যাপক কাজী সুফিউর রহমান, আরফান আলি বিশ্বাস, ড. সাইফুল্লা, রাজনীতিক একেএম ফারহাদ, ক্যাথলিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাঞ্জেলিনা, সাহিত্যিক আবদুর রব খান, এস এম সিরাজুল ইসলাম, শেখ হাফিজুর রহমান, ফারুক আহমেদ, ড. গিয়াসুদ্দিন আমেদ, রক্তিম ইসলাম, একরামূল হক শেখ, পীরজাদা উজায়ের সিদ্দিকি, মুসা আলি, প্রাক্তন বিধায়ক ডা. কাশেম সাহেব, আবদুল মতি, ড. শেখ কামালউদ্দিন, নায়ীমুল হক, জি এম আবুবকর প্রমুখ।

বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী জহর সরকার এদিন বলেন, ঈদ মিলনের দিনটি হল নিজেদের মধ্যে ঐক্যের দিন। আজ আমরা সবাই পরস্পরকে আরও জানতে পারব। এরপরই কথা প্রসঙ্গে তিনি পুবের কলম-এর ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত তাঁর লেখাটির (বাংলা ও তার ফারসি প্রভাব) আলোকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। বাংলাভাষার প্রচার ও প্রসারে মুসলমানদের ঐতিহাসিক অবদানের কথা উঠে আসে তাঁর ভাষণে। তিনি বলেন, আমরা চর্যাপদকে আদি বাংলা বলে থাকি। কিন্তু চর্যাপদ কি বাংলা? পড়লে বোঝা যায়?

আসলে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির হাত ধরে ১৩ শতকে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেই সমস্ত শাসকদের প্রয়োজনে ‘বাঙ্গালাহ’ ভাষায় কথা বলা শুরু হয় সুলতানদের সভায়। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণেরা বাংলা বয়কট করেছে। বড়ু চণ্ডীদাসরা অবশ্য ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে বাংলায় লিখতে আরম্ভ করেছিলেন। বাংলা লেখাও হত ফারসি হরফে। যৌথভাবে হিন্দু-মুসলিম মিলে বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটিয়েছে। বাংলাভাষা আমাদের যৌথসাধনার সম্পত্তি। বর্তমান মেরুকরণ ও হিংসার রাজনীতির প্রসঙ্গও ফুটে ওঠে তাঁর বক্তৃতায়। তিনি বলেন, বাংলায় আমরা সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটতে দিইনি। ‘সাম্প্রদায়িক দানব রাক্ষসটি’কে আটকাতে সবাইকে মাঠে নামতে হবে বলে তিনি সোচ্চার হন নিজ ভাষণে।

জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, আমরা সবাই গর্বিত ভারতবাসী। যে জাতি ইতিহাস ভুলে যায় তাদের সামনের দিনের পতন অনিবার্য। এনসিইআরটির সিলেবাস থেকে মুঘল ইতিহাস বাদ দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, রামায়ণ লিখেছেন একজন শূদ্র। দস্যু রত্নাকর বাল্মিকী হয়ে রামায়ণ রচনা করেন। যারা ইতিহাস গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের বলব কাচের ঘরে বসে অন্যকে ঢিল ছুড়বেন না। তৎকালীন দিনে জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ আম্বেদকর সংবিধানের প্রধান রচয়িতা।  এই ভারতে যারা অশান্তির আগুনে জ্বালাতে চাইবে, তারা যোগ্য জবাব পাবে।

সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, আগের একশো বছরের পত্রিকার ইতিহাস দেখলে বোঝা যায় বর্তমান সময়ে ‘পুবের কলম’ একটা বিশেষ জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। আরও দীর্ঘস্থায়ী হোক এই পত্রিকাটি। ঈদসংখ্যায় বাহাউদ্দিন ‘শাহ আবুবকর সিদ্দিকী রহ. এবং বাংলা চর্চা’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন। এ বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন। উদার আকাশ সম্পাদক ফারুক আহমেদ এ বছরের পুবের কলম ঈদসংখ্যাকে ‘অন্যতম সেরা ঈদসংখ্যা’ বলে মতপ্রকাশ করেন।

এদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় মাওলানা ও ক্বারী আবদুর রাকিব নাদভির কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা ফাতিহার তিলাওয়াত ও তরজমা হয়। নজরুল চর্চা কেন্দ্র ‘ছায়ানট’-এর সোমঋতা মল্লিক ছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন পলাশ চৌধুরী। কবিতাপাঠ করেন আরফিনা, আসিফ রেজা আনসারী,  শিফা পারভিন, মুহাম্মদ শামিম, সাইফুদ্দিন, জয়ন্ত রসিক প্রমুখ।