গাজিপুর: মুসলিম-নাম দেখলেই বদলে দাও! গেরুয়া-শাসিত রাজ্যগুলিতে নাম পরিবর্তনের হিড়িক চলছে। বাদ যাচ্ছেন না দেশের জন্য শহিদ হওয়া বীর সেনানীদের নামও। যেমনটা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের ধামপুরের একটি সরকারি স্কুলে। সেখানে ‘পরম বীর চক্র’ প্রাপ্ত শহিদ সেনানী আবদুল হামিদের নামাঙ্কিত ওই স্কুলের নাম পালটে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে, পরম বীর চক্র প্রাপ্ত এক শহিদ বীর সেনানীর নামের স্মৃতিটুকুও মুছে ফেলা হল শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার ‘অপরাধে’? এই নিয়ে প্রতিবাদ জোরালো হতেই এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রবল প্রতিবাদের মুখে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হলেন উত্তরপ্রদেশ শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা। স্কুলের প্রবেশদ্বারে আবদুল হামিদের নামাঙ্কিত যে ফলকটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, মঙ্গলবার সেটা ফের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের এই ‘বিলম্বিত বোধদয়ে’ খুশি শহিদের পরিবার থেকে শুরু করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবকদের অনেকেই।
ধামপুরের স্কুলটিতে ছাত্র অবস্থায় পড়েছিলেন আবদুল হামিদ। পরে স্কুলটির নামকরণ করা হয় ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে শহিদ হওয়া আবদুল হামিদের নামে। সম্প্রতি স্কুলটিতে রং করা হয়। সেইসময় হামিদের নামের ফলক সরিয়ে দেয় রাজ্যের শিক্ষা দফতর। নতুন নাম হয় ‘পিএম শ্রী কম্পোজিট বিদ্যালয় ধামপুর’ খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে যায়। হামিদের পৌত্র জামিল আহমেদ বিষয়টি সরকারের আরও উচ্চকর্তপক্ষকে জানান। পাশাপাশি, বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে লেখালেখি হয়। সবমিলিয়ে ফের হামিদের নামের ফলক ফিরে আসে। আর এই প্রসঙ্গে জামিল বলেন, ‘‘আজ (১৮ ফেব্রুয়ারি) স্কুলের মূল প্রবেশ পথে শহিদ বীর আবদুল হামিদের নামের ফলক ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নতুন নাম হয়েছে ‘শহিদ বীর আবদুল হামিদ পিএম শ্রী কম্পোজিট স্কুল-ধামপুর’। একজন বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম মুছে দেওয়া একটা বড় ভুল ছিল, যিনি দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন।’’ উল্লেখ্য, হামিদের পরিবারের অভিযোগ, বেসিক এডুকেশন অফিসার হেমন্ত রাও এই নাম মুছে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত। এজন্য তাঁরা ওই অফিসারের তীব্র সমালোচনাও করেন।
১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর কেটে গেছে অর্ধশতাধীর বেশি সময়। এখন দিল্লির মসনদে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে এখন চলছে গৈরিকীকরণ এবং নাম বদলের অভিযান। তারই অংশ হিসেবে দেশের জন্য আত্মবলিদানকারী শহিদ সেনাদের নামও নির্দিধায় মুছে ফেলা হচ্ছে শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে। এই নিয়ে প্রথমেই সরব হয়েছিলেন সাংসদ চন্দ্রশেখর আজাদ। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, বিজেপি এই বীর মুসলিম যোদ্ধার নামটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিবর্তন করেছে। বিজেপি এর দ্বারা ঘৃণার প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে চায়। তিনি আরও বলেন, স্কুলটি আবদুল হামিদের নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ঘটনা নিন্দনীয় এবং একজন শহিদ বীর সেনানীর সর্বোচ্চ কুরবানির প্রতি অপমানস্বরূপ। মঙ্গলবার সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে লেখেন, ‘‘দেশের জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা কারও চেয়ে কম গুরুত্ব পাচ্ছেন এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অশোভন। এখন শুধু এটাই দেখতে বাকি আছে যে এবার আমাদের দেশ ‘ভারত’-এর নামই না পালটে কিছু লোক ‘বিজেপি’ করে দেয়। যারা স্বাধীনতা অর্জনে বা স্বাধীনতা রক্ষায় কোনও ভূমিকা রাখেনি, তারা শহিদের গুরুত্ব বুঝবে কী করে?’’ যদিও স্কুলের নামবদল নিয়ে স্কুলের বর্তমান প্রধানশিক্ষক সাফাই দিয়েছিলেন, স্কুলটি বছরের পর বছর ধরে বীর আবদুল হামিদের নামে পরিচিত হলেও সরকারি রেকর্ডে নাম পরিবর্তনটি বিষয়টি নথিভুক্ত করা হয়ে ওঠেনি। তাই তিনি নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিলেন। আর গাজিপুরের প্রশাসন তা মেনেও নেয়। সেইমতো স্কুলটির নতুন নামকরণ করা হয়। আর এই নয়া নামের সঙ্গে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী মোদিজির নামও টেনে আনা হয়েছে। নতুন নাম হয়— ‘পিএম শ্রী কম্পোজিট বিদ্যালয় ধামপুর’। যদিও মঙ্গলবার থেকে ফের স্কুলের নামের সঙ্গে বীর হামিদের নামও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।