২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘কাশ্মীর ফাইলস-এ সম্মতি, ‘ফারহা’তে আপত্তি

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৩ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার
  • / 9

ইসরাইলি সেনাদের বর্বরতার কাহিনি নিয়ে তৈরি 'ফারহা-র একটি দৃশ্য

 পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়। চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ। সেই বিপর্যয়ের দিনটিকে স্মরণ করতে প্রতিবছর পালিত হয় নাকবা দিবস। সেই সময় ৮ লক্ষের বেশি ফিলিস্তিনিকে ঘরছাড়া করে হানাদার ইসরাইলি বাহিনী। বহু পরিবারে চরম আঘাত নেমে আসে। জর্ডনের একটি সাম্প্রতিক ফিল্ম ‘ফারহা’তে সেই দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাতে ফুটে উঠেছে মজলুম ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ আর হাহাকারের দৃশ্য। ১ ডিসেম্বর থেকে এই ছবিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার শুরু হয়েছে। তবে তাতে আপত্তি তুলেছে যায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল।

 

তাদের পুরনো অপকীর্তির প্রকাশ হওয়ার ব্যাপারটি পছন্দ করছে না রাষ্ট্রটি। ইহুদিবাদী রাজনীতিকরা প্রবলভাবে আক্রমণ শুরু করেছে নেটফ্লিক্সকে। কারণ, এতে সম্প্রচারিত হওয়া মানেই নাকবার মর্মান্তিক ঘটনা সারাবিশ্বের সামনে ভেসে উঠবে। নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়বে তারা। সম্প্রতি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমা নিয়ে ইসরাইলি পরিচালক লাপিদ বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। সেটা নিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিল ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত। কাশ্মীর ফাইলস ছিল প্রপাগান্ডামূলক সিনেমা। বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য এটি তৈরি হলেও তার বিরোধিতা করতে রাজি নয় ইসরাইল সরকার।

 

কিন্তু নির্ভেজাল সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ‘ফারহা’ সিনেমাটি নিয়ে প্রবল আপত্তি তাদের। এর প্রচার বন্ধ করার জন্য হুমকি দিচ্ছে ইসরাইল। দেশটির অর্থমন্ত্রী লাইবারম্যান হুংকার দিয়েছেন, ইসরাইলি সেনাদের খ্যাতি নষ্ট হবে এমন কিছু আমরা হতে দেব না। নেটফ্লিক্স মিথ্যা ঘটনা নিয়ে সিনেমা প্রচার করছে বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন। জাফাতে যে থিয়েটারে সিনেমাটি দেখানো হচ্ছে, সেখানকার পরিচালকদের হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের সংস্কৃতি মন্ত্রী চিলি ট্রুপার। তবে তাদের  চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি নেটফ্লিক্স বা ওই থিয়েটার  কর্তৃপক্ষ। হিটলারের হলোকাস্ট নিয়ে সিনেমা বা কাহিনিচিত্র প্রচার হলে তাতে ইসরাইল আপত্তি তোলে না। কিন্তু  ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষের উপর তাদের নিধনযজ্ঞের ছবি  প্রকাশ হলে তা হজম করতে পারছে না ইসরাইল।

 

নাকবার বীভৎসতা নিয়ে তৈরি ‘ফারহা’ ছবিটি পরিচালনা  করেছেন জর্ডানিয়ান পরিচালক দারিন জে সাল্লাম। তিনি জানান,  একটি ১৪ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি মেয়ের গল্প বলা হয়েছে এই মুভিটিতে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইলি সেনাবাহিনী কীভাবে হত্যালীলা চালিয়ে গ্রাম উজাড় করে দিয়েছিল তার সাক্ষী সেই মেয়েটি। সে যাতে ইসরাইলি সেনাদের পাশবিকতার শিকার না হয়, তার জন্য স্টোর রুমে তাকে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ঘরের দেওয়ালের একটি ফুটো দিয়ে সে বাইরের জগৎ দেখেছিল। দেখেছিল হানাদারদের পাশবিকতা, অত্যাচার আর হত্যাযজ্ঞ। পড়াশোনা করার সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। এভাবে বহু মেয়ের জীবন নষ্ট করে ইসরাইলিরা। আর এই সিনেমাটি তেমনই সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। পরিচালক এক ফিলিস্তিনি মেয়ের কাছেই এই কাহিনি শুনেছিলেন। তবে সত্য হজম করার ক্ষমতা নেই যায়নবাদী ইহুদি রাষ্ট্রটির।

 

এই সিনেমাটি ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন নামি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে চলচ্চিত্রটি। টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রিমিয়ারেও এটি দেখানো হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাকবা একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ দুর্যোগ।  ১৯৪৮-এর নিধনযজ্ঞের কথা স্মরণ করে এই দিনটি (১৫ মে) এবার থেকে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদেও প্রতিবছর পালিত হবে বলে জানা গিয়েছে। নাকবার পরবর্তী সময়েও ইসরাইল নিধনযজ্ঞ চালিয়ে গেছে। ১৯৫৬ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের কাফর কাসেম শহরে গণহত্যা চালায় ইসরাইলি হানাদাররা। পরে এ নিয়ে ডকুমেন্টারি ফিল্মও বানানো হয়েছে। আশির দশকে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় এক ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ স্তম্ভিত করেছিল গোটা বিশ্বকে। বেইরুটের এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ঢুকে খ্রিস্টান মিলিশিয়ারা হত্যা করেছিল প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ ও শিশুকে। ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন অনেক ফিলিস্তিনি নারী। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরাইলের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এরিয়েল শ্যারনকে দায়ী করা হয়। সাবরা ও শাতিলার কসাই হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করে শ্যারন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘কাশ্মীর ফাইলস-এ সম্মতি, ‘ফারহা’তে আপত্তি

আপডেট : ৩ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার

 পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়। চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ। সেই বিপর্যয়ের দিনটিকে স্মরণ করতে প্রতিবছর পালিত হয় নাকবা দিবস। সেই সময় ৮ লক্ষের বেশি ফিলিস্তিনিকে ঘরছাড়া করে হানাদার ইসরাইলি বাহিনী। বহু পরিবারে চরম আঘাত নেমে আসে। জর্ডনের একটি সাম্প্রতিক ফিল্ম ‘ফারহা’তে সেই দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাতে ফুটে উঠেছে মজলুম ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ আর হাহাকারের দৃশ্য। ১ ডিসেম্বর থেকে এই ছবিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার শুরু হয়েছে। তবে তাতে আপত্তি তুলেছে যায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল।

 

তাদের পুরনো অপকীর্তির প্রকাশ হওয়ার ব্যাপারটি পছন্দ করছে না রাষ্ট্রটি। ইহুদিবাদী রাজনীতিকরা প্রবলভাবে আক্রমণ শুরু করেছে নেটফ্লিক্সকে। কারণ, এতে সম্প্রচারিত হওয়া মানেই নাকবার মর্মান্তিক ঘটনা সারাবিশ্বের সামনে ভেসে উঠবে। নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়বে তারা। সম্প্রতি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমা নিয়ে ইসরাইলি পরিচালক লাপিদ বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। সেটা নিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিল ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত। কাশ্মীর ফাইলস ছিল প্রপাগান্ডামূলক সিনেমা। বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য এটি তৈরি হলেও তার বিরোধিতা করতে রাজি নয় ইসরাইল সরকার।

 

কিন্তু নির্ভেজাল সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ‘ফারহা’ সিনেমাটি নিয়ে প্রবল আপত্তি তাদের। এর প্রচার বন্ধ করার জন্য হুমকি দিচ্ছে ইসরাইল। দেশটির অর্থমন্ত্রী লাইবারম্যান হুংকার দিয়েছেন, ইসরাইলি সেনাদের খ্যাতি নষ্ট হবে এমন কিছু আমরা হতে দেব না। নেটফ্লিক্স মিথ্যা ঘটনা নিয়ে সিনেমা প্রচার করছে বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন। জাফাতে যে থিয়েটারে সিনেমাটি দেখানো হচ্ছে, সেখানকার পরিচালকদের হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের সংস্কৃতি মন্ত্রী চিলি ট্রুপার। তবে তাদের  চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি নেটফ্লিক্স বা ওই থিয়েটার  কর্তৃপক্ষ। হিটলারের হলোকাস্ট নিয়ে সিনেমা বা কাহিনিচিত্র প্রচার হলে তাতে ইসরাইল আপত্তি তোলে না। কিন্তু  ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষের উপর তাদের নিধনযজ্ঞের ছবি  প্রকাশ হলে তা হজম করতে পারছে না ইসরাইল।

 

নাকবার বীভৎসতা নিয়ে তৈরি ‘ফারহা’ ছবিটি পরিচালনা  করেছেন জর্ডানিয়ান পরিচালক দারিন জে সাল্লাম। তিনি জানান,  একটি ১৪ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি মেয়ের গল্প বলা হয়েছে এই মুভিটিতে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইলি সেনাবাহিনী কীভাবে হত্যালীলা চালিয়ে গ্রাম উজাড় করে দিয়েছিল তার সাক্ষী সেই মেয়েটি। সে যাতে ইসরাইলি সেনাদের পাশবিকতার শিকার না হয়, তার জন্য স্টোর রুমে তাকে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ঘরের দেওয়ালের একটি ফুটো দিয়ে সে বাইরের জগৎ দেখেছিল। দেখেছিল হানাদারদের পাশবিকতা, অত্যাচার আর হত্যাযজ্ঞ। পড়াশোনা করার সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। এভাবে বহু মেয়ের জীবন নষ্ট করে ইসরাইলিরা। আর এই সিনেমাটি তেমনই সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। পরিচালক এক ফিলিস্তিনি মেয়ের কাছেই এই কাহিনি শুনেছিলেন। তবে সত্য হজম করার ক্ষমতা নেই যায়নবাদী ইহুদি রাষ্ট্রটির।

 

এই সিনেমাটি ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন নামি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে চলচ্চিত্রটি। টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রিমিয়ারেও এটি দেখানো হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাকবা একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ দুর্যোগ।  ১৯৪৮-এর নিধনযজ্ঞের কথা স্মরণ করে এই দিনটি (১৫ মে) এবার থেকে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদেও প্রতিবছর পালিত হবে বলে জানা গিয়েছে। নাকবার পরবর্তী সময়েও ইসরাইল নিধনযজ্ঞ চালিয়ে গেছে। ১৯৫৬ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের কাফর কাসেম শহরে গণহত্যা চালায় ইসরাইলি হানাদাররা। পরে এ নিয়ে ডকুমেন্টারি ফিল্মও বানানো হয়েছে। আশির দশকে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় এক ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ স্তম্ভিত করেছিল গোটা বিশ্বকে। বেইরুটের এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ঢুকে খ্রিস্টান মিলিশিয়ারা হত্যা করেছিল প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ ও শিশুকে। ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন অনেক ফিলিস্তিনি নারী। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরাইলের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এরিয়েল শ্যারনকে দায়ী করা হয়। সাবরা ও শাতিলার কসাই হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করে শ্যারন।