১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সম্প্রীতির নজির, বাবার শেষ ইচ্ছের সম্মান জানিয়ে ইদগাহের জন্য জমি দান দুই হিন্দু মেয়ের

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৪ মে ২০২২, বুধবার
  • / 7

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বাবার শেষ ইচ্ছের সম্মান রাখলেন দুই মেয়ে। বাবার মৃত্যু্র পর ইদগাহের জন্য ২.১ একর জমি দান করে সম্প্রীতির নজির গড়লেন উত্তরাখণ্ডের দুই বোন। উত্তরাখণ্ডের কাশিপুরের বাসিন্দা অনিতা(৬২) সরোজ (৫৭) জানিয়েছেন, বাবা লালা ব্রজনন্দন রাস্তোগী ২০০৩ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগে বাবা ইদগাহের জন্য জমি দান করার কথা জানিয়ে যান। তাঁর সেই ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েই ২.১ একর জমি দান করলেন তাঁরা। রাস্তোগী মৃত্যুশয্যায় তাঁর এক আত্মীয়ের কাছে জানিয়েছিলেন, তিনি মুসলিম ভাইদের জন্য জমি দান ইচ্ছুক। পরে সেই আত্মীয়ই তার দুই মেয়েকে শেষ ইচ্ছের কথা জানান।

 

এর পরেই অনিতা ও সরোজ জমি দান করার প্রস্তুতি শুরু করেন। দুই বোনই ঠিক করেন এবছর ঈদের আগেই তাঁরা বাবার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী ইদগাহের জন্য জমি দান করবেন। এর পর তারা সমস্ত ফরম্যালিটিস সম্পূর্ণ করেন। রবিবার ইদগাহের জন্য ২.১ একর জমি দান করলেন তারা।

 

অনিতা ও সরোজের ভাই রাকেশ জানিয়েছেন, ‘আমার বাবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। বাবার ইচ্ছে ছিল তিনি ইদগাহের জন্য জমি দান করলে সেখানে আরও বেশি সংখ্যক মুসলিম ভাই-বোনেরা নামায পড়তে পারবেন। আমরা তাঁর সেই শেষ ইচ্ছার সম্মান জানিয়েছি।

কাশীপুর ইদগাহ কমিটির সভাপতি হাসিন খান জানিয়েছেন, যখন লালা ব্রজনন্দন রাস্তোগী জীবিত ছিলেন তখন আমাদের যেকোনও অনুষ্ঠানে সর্ব প্রথম অনুদান তিনিই দিতেন। শুধু যে অর্থমূল্য দিয়ে সাহায্য করতেন তাই নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য ফল ও মিষ্টি বিতরণও করতেন। আজ তিনি মারা গেছেন। লালার ছেলে রাকেশও ঠিক তাঁর বাবার মতো হয়েছেন। বাবার পথ অনুসরণ করে এখন সর্ব প্রথম অনুদান থেকে শুরু করে অন্যান্য সব ধরনের সাহায্যের জন্য রাকেশ এগিয়ে আসেন। লালা ব্রজনন্দন রাস্তোগীর সঙ্গে আমার বাবা মহম্মদ রেজা খানের খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল। দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধুত্ব ছিল দুজনের। আজ আর কেউ জীবিত নেই। কিন্তু দুজনের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বিশ্বাস ছিল তা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে।

হাসিন খান আরও জানান, কাশিপুরের গোটা মুসলিম সমাজ রাস্তোগীকে শ্রদ্ধা করেন। ঈদে সকলে তাঁর জন্য দোয়া করেন। এই শহরজুড়ে এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক আবহাওয়া রয়েছে। এই ভ্রাতৃত্ববোধই দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের নজির গড়ে তুলেছে।

 

স্থানীয় কাউন্সিলার নৌশাদ হুসেন জানিয়েছেন, লালা ব্রজনন্দন রাস্তোগী সহ তার পরিবারের এই মহৎ কাজ সমস্ত সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা রাস্তোগী পরিবারের এই উদারতা ও সত্যিকারের ধর্মীয় নিরপেক্ষতাকে সালাম জানাই। দেশের জন্য এই ধরনের মানুষ আজ বড় প্রয়োজন।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সম্প্রীতির নজির, বাবার শেষ ইচ্ছের সম্মান জানিয়ে ইদগাহের জন্য জমি দান দুই হিন্দু মেয়ের

আপডেট : ৪ মে ২০২২, বুধবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বাবার শেষ ইচ্ছের সম্মান রাখলেন দুই মেয়ে। বাবার মৃত্যু্র পর ইদগাহের জন্য ২.১ একর জমি দান করে সম্প্রীতির নজির গড়লেন উত্তরাখণ্ডের দুই বোন। উত্তরাখণ্ডের কাশিপুরের বাসিন্দা অনিতা(৬২) সরোজ (৫৭) জানিয়েছেন, বাবা লালা ব্রজনন্দন রাস্তোগী ২০০৩ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগে বাবা ইদগাহের জন্য জমি দান করার কথা জানিয়ে যান। তাঁর সেই ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েই ২.১ একর জমি দান করলেন তাঁরা। রাস্তোগী মৃত্যুশয্যায় তাঁর এক আত্মীয়ের কাছে জানিয়েছিলেন, তিনি মুসলিম ভাইদের জন্য জমি দান ইচ্ছুক। পরে সেই আত্মীয়ই তার দুই মেয়েকে শেষ ইচ্ছের কথা জানান।

 

এর পরেই অনিতা ও সরোজ জমি দান করার প্রস্তুতি শুরু করেন। দুই বোনই ঠিক করেন এবছর ঈদের আগেই তাঁরা বাবার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী ইদগাহের জন্য জমি দান করবেন। এর পর তারা সমস্ত ফরম্যালিটিস সম্পূর্ণ করেন। রবিবার ইদগাহের জন্য ২.১ একর জমি দান করলেন তারা।

 

অনিতা ও সরোজের ভাই রাকেশ জানিয়েছেন, ‘আমার বাবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। বাবার ইচ্ছে ছিল তিনি ইদগাহের জন্য জমি দান করলে সেখানে আরও বেশি সংখ্যক মুসলিম ভাই-বোনেরা নামায পড়তে পারবেন। আমরা তাঁর সেই শেষ ইচ্ছার সম্মান জানিয়েছি।

কাশীপুর ইদগাহ কমিটির সভাপতি হাসিন খান জানিয়েছেন, যখন লালা ব্রজনন্দন রাস্তোগী জীবিত ছিলেন তখন আমাদের যেকোনও অনুষ্ঠানে সর্ব প্রথম অনুদান তিনিই দিতেন। শুধু যে অর্থমূল্য দিয়ে সাহায্য করতেন তাই নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য ফল ও মিষ্টি বিতরণও করতেন। আজ তিনি মারা গেছেন। লালার ছেলে রাকেশও ঠিক তাঁর বাবার মতো হয়েছেন। বাবার পথ অনুসরণ করে এখন সর্ব প্রথম অনুদান থেকে শুরু করে অন্যান্য সব ধরনের সাহায্যের জন্য রাকেশ এগিয়ে আসেন। লালা ব্রজনন্দন রাস্তোগীর সঙ্গে আমার বাবা মহম্মদ রেজা খানের খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল। দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধুত্ব ছিল দুজনের। আজ আর কেউ জীবিত নেই। কিন্তু দুজনের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বিশ্বাস ছিল তা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে।

হাসিন খান আরও জানান, কাশিপুরের গোটা মুসলিম সমাজ রাস্তোগীকে শ্রদ্ধা করেন। ঈদে সকলে তাঁর জন্য দোয়া করেন। এই শহরজুড়ে এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক আবহাওয়া রয়েছে। এই ভ্রাতৃত্ববোধই দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের নজির গড়ে তুলেছে।

 

স্থানীয় কাউন্সিলার নৌশাদ হুসেন জানিয়েছেন, লালা ব্রজনন্দন রাস্তোগী সহ তার পরিবারের এই মহৎ কাজ সমস্ত সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা রাস্তোগী পরিবারের এই উদারতা ও সত্যিকারের ধর্মীয় নিরপেক্ষতাকে সালাম জানাই। দেশের জন্য এই ধরনের মানুষ আজ বড় প্রয়োজন।