ইন্তেখাব আলমঃ পৃথিবীজুড়েই শুরু হয়েছে বরকতময় রোযা। সিয়াম সাধনা, সংযম,এবাদত এবং আত্মসুদ্ধির জন্য পবিত্র রমযান মাসজুড়েই সুর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার পর রোজাদাররা ইফতারির মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করেন। রমযান মাসে রোযাদারদের ইফতারির থালায় অন্যতম প্রিয় খাদ্য হিসেবে থাকে খেজুর সহ বিভিন্ন রকমের ফল।
রমযান মাসজুড়ে ইফতারির জন্য কলকাতার বিভিন্ন ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নানা জাতের খেজুর। বিভিন্ন ধরণের খেজুরের টানেই কলকাতার পাইকারি ফলের বাজারে ভীড় জমাচ্ছেন খুচরো ফল বিক্রেতার পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতারাও। কলকাতার শুকনো ফলের ব্যবসায়ী তারিক আনোয়ার জানান, নানারকম পুষ্টিগুণ থাকায় সারাবছই খেজুরের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে রমযান মাস এবং হজের সময় খেজুরের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়।’ রমযান মাসে অনেকেই আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা গরিব অসহায় প্রতিবেশীকে খেজুর সহ অন্যান্য ফলও ইফতার সামগ্রী দান করেন। ফলে রমযান মাসে খেজুরের চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায় বলেও জানান খেজুর বিক্রেতারা। চিতপুর এলাকার শুকনো ফলের দোকান ‘মারহাবা সেন্টার’-এর নাসিম আখতার বলেন, মেডজুল, আজওয়া, সুক্কারি, কালমি, সাগাই, মরিয়ম, জাহিদি, খুদরি, মাবরুম, সাফায়ি, কিমিয়া, আম্বার, সুফরি, লেগেটি, আলফাজ সহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির খেজুর রয়েছে। মূলত সৌদি আরব, আমিরশাহি, ইরান, টিউনেশিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে কলকাতায় আসে। কোয়ালিটি এবং ভ্যারাইটি অনুযায়ী বিভিন্ন খেজুরের বাজার দরও ভিন্ন। কলকাতার বাজারে আনুমানিক ২০০ টাকা কেজি থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দামের খেজুরের চাহিদা বেশি থাকে বলেও তিনি জানান। এবার কলকাতার বাজারে উন্নত মানের বাছাই করা ফ্রেস আজওয়া খেজুরের খুচর বাজার দাম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি।মাবরুম খেজুর ১২০০-১৪০০ টাকা, কালমি খেজুর ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, আম্বার খেজুর-১৪০০ টাকা, সাফায়ি ৭০০-৮০০টাকা, মরিয়ম ৪০০-৫০০টাকা, আলফাজ ৪০০টাকা, কিমিয়া ২৬০-৩০০টাকা, সুফরি ২৮০-৩০০ টাকা, লেগেটি খেজুর ২৫০টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ইফতারির সময় খেজুর খাওয়া্র উপকারিতা প্রসঙ্গে কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালের মুখ্য পুষ্টিবিদ সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ বলেন, ‘খেজুরকে বলা হয় সুপার ফুড। রমযান মাসে একজন রোযাদার মানুষ ভোর থেকে উপবাস থাকার পর সন্ধ্যায় রোযা ভঙ্গ করেন। ইফতারির সময় খেজুর খাওয়া ভীষণ প্রয়োজন। কারণ, সারা দিনের উপবাসের পর খেজুর খেলে ক্যালোরি এবং এনার্জি পাওয়া যায় খুব দ্রুত। খেজুরে প্রচুর পরিমান ভিটামিন, মিনারেল, প্রাকৃতিক গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ থাকায় শরীরে দ্রুত শক্তি পান রোযাদার মানুষ।’ এদিন তিনি আরও বলেন, খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমান পটাসিয়াম থাকে। দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে খেজুর ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন রোযা রাখার পর ইফতারিতে খেজুর খেলে গ্যাস-অম্বল থেকে মানবদেহকে সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেজুর খুব উপকারি বলেও জানান পুষ্টিবিদ সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ।