পেঁয়াজ উৎপাদনে রেকর্ড গড়ল বাংলা, এবার সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণাগার

রিপোর্টার:
  • শেষ আপডেট: শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫

পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্যে এবার পেঁয়াজের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে, যা চাষিদের জন্য সুখবর। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবার সরকারি উদ্যোগেই সংরক্ষণাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এতদিন শুধুমাত্র বেসরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণাগার তৈরির জন্য ভরতুকি দেওয়া হত, এবার রাজ্যজুড়ে সরকারি পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
সম্প্রতি নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সংরক্ষণাগারগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে চাষিরা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ সহজেই মজুত করতে পারেন। ছোট ও মাঝারি চাষিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যাতে তারা তাদের পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন।
এবার রাজ্যের পাঁচটি জেলায় বড় আকারের আটটি সংরক্ষণাগার তৈরি করা হচ্ছে, যার প্রত্যেকটির ধারণক্ষমতা ৪০ টন। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ও কালনা, হুগলির বলাগড় ও আদিসপ্তগ্রাম, মুর্শিদাবাদের নওয়াদা ও সাগরদিঘি, নদীয়ার হাঁসখালি এবং মালদহের গাজোলে এই সংরক্ষণাগারগুলো নির্মাণ হচ্ছে। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ নির্মাণ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে এগুলো চালু হয়ে যাবে।
এ ছাড়া, রাজ্যজুড়ে ৯১৭টি ছোট সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হচ্ছে, যার প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৯ টন। এর মধ্যে ৮৪৯টির নির্মাণ শেষ হয়ে গেছে। দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও বাঁকুড়ায় এই সংরক্ষণাগারগুলো তৈরি করা হচ্ছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে এই প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
এই প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত করতে উত্তর ২৪ পরগনা, বীরভূম এবং পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকদের বিশেষ নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দিকে, রাজ্যে ইতিমধ্যেই নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার আনুমানিক ৭ লক্ষ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে, যা গতবছরের তুলনায় বেশি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার চাষ ভালো হয়েছে, যদিও সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে কিছু ক্ষতি হয়েছে, তবে তা উৎপাদনে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে রাজ্যের নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় এখনো আমদানি করা পেঁয়াজই বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে খুচরো বাজারে দাম এখনও তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে, রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে জানিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যের উৎপাদিত পেঁয়াজ বেশি পরিমাণে বাজারে আসবে, যার ফলে দামও কমতে শুরু করবে। সরকারি সংরক্ষণাগার গড়ে ওঠায় এবার রাজ্যের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারবেন, যা বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এর ফলে একদিকে যেমন কৃষকদের আয় বাড়বে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জন্যও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

এই সংক্রান্ত আরও খবর
Copyright © 2025 Puber Kalom All rights reserved.
Developed By eTech Builder