‘ইন্ডিয়া জাস্টিসে’র রিপোর্টে দেশের ১৭ নং অবস্থানে কলকাতা হাইকোর্ট!

- আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
- / 8
মোল্লা জসিমউদ্দিন, : ‘রাজনৈতিক মামলা এবং হেভিওয়েট ব্যক্তিদের দাখিল মামলার বেড়াজালে আটকে যায় সিংহভাগ সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার’। কলকাতা হাইকোর্টে এই অভিযোগ প্রায় শোনা যায় ভুক্তভোগী মামলাকারীদের কাছ থেকে। বিরোধী দলনেতার কর্মসূচিতে অনুমতির আবেদন থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন সংক্রান্ত মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে যেন থাকে কলকাতা হাইকোর্ট! রাজ্যের উচ্চ আদালতে জমে রয়েছে ২ লক্ষের কাছাকাছি মামলা। সাধারণ ব্যক্তিদের এমনও মামলা আছে, যার ‘প্রথম’ শুনানি হতে বছর পার হয়ে গেছে। অথচ রাজনৈতিক নেতাদের মামলাগুলি দাখিলের পরের দিনই দীর্ঘক্ষণ শুনানি চলে। নিষ্পত্তি হয়ও দ্রুত। এহেন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি টাটা ট্রাস্টের উদ্যোগে তৈরি ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট ২০২৫’ প্রকাশ পেয়েছে। সেই সমীক্ষাতেই উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টকে বিচার দানে সর্বশেষ সারিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে। শুধু বিচার ব্যবস্থার নিরিখেই নয়, পুলিশ, জেল, আইনি সহায়তা ও বিচার ব্যবস্থা- এই চারটি ক্ষেত্রের নিরিখে দেশে সব রাজ্যের শেষে ঠাঁই পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। প্রথম পাঁচে জায়গা পেয়েছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। চারটি মাপকাঠিতে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কর্ণাটক। টাটা ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে শুরু হয় ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট’ নামে এই সমীক্ষা। শুরু থেকেই পুলিশ, জেল, বিচারবিভাগ এবং আইনি সহায়তার দিকগুলি বিচার করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়। ২০২৫ সালের যে রিপোর্ট সামনে এসেছে, তাতে সবকটি বিষয়ে ভালো ‘মার্কস’ পেয়ে প্রথম পাঁচে জায়গা পেয়েছে কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরল এবং তামিলনাড়ু। কর্ণাটকের স্কোর যেখানে ৬.৭৮, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্তি মাত্র ৩.৬৩। পশ্চিবঙ্গের ঠিক উপরে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড। ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট’ অনুসারে, ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিচার বিভাগে সবথেকে বেশি উন্নতি করেছে রাজস্থান, কেরল এবং মধ্যপ্রদেশ। জেল পরিচালনার মাপকাঠিতে ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড ভালো কাজ করেছে। সার্বিকভাবে রাজ্যে লিগাল এড সার্ভিস থাকলেও সাধারণ মানুষ তা থেকে কতটা উপকৃত হচ্ছে? সেটা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে। এ রাজ্যে হাইকোর্টের শূন্যপদে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। আইনজীবীদের একাংশ বলেন, আদালতকর্মীদের নিয়ে মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। রাজ্যের দায়িত্ব এই শূন্যপদ পূরণ করা। হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন থেকে নিয়োগ হচ্ছে না, সেটা করাতে হবে, বাইরে থেকে কোনও বিচারপতি এলে, কোর্টের কাজ বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়’। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সহ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদনে দ্রুত শূন্যপদে বিচারপতি নিয়োগের দাবি রেখেছেন। ২০২২ সালের পর কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে বিচারপতি নিয়োগ সেভাবে হয়নি। ২০১৪ সালের নিরিখে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সংখ্যা ৭২। বর্তমান সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যার হিসাব করলে আরও বিচারপতি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বিচারপতির শূন্য পদ থাকায় মামলার শুনানি করা যাচ্ছে না।