সেখ কুতুবউদ্দিন: কেন্দ্র সরকারের শিক্ষানীতি অনুসারে সরকারি কলেজগুলি ৪ বছরের স্নাতক কোর্স করাবে। আর সেই কলেজগুলিতে চার বছরের স্নাতক শেষে ১ বছরের বিএড করা যাবে। কিন্তু জেনারেল ডিগ্রি কলেজগুলিই শুধুমাত্র ১ বছরের বিএড কোর্স করাতে পারবে। এ রাজ্যে বহু বেসরকারি বিএড-ডিএলএড কলেজ রয়েছে। বেসরকারি বিএড কলেজগুলির ক্ষেত্রে এখনও ১ বছরের বিএড করানোর কোনও ছাড়পত্র নেই। ১ বছরের বিএড করাতে হলে সেই কলেজগুলিতে জেনারেল ডিগ্রি কোর্স চালু করতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির এই নিয়ম এখনও রাজ্য মেনে নেয়নি। রাজ্য সরকার কলেজগুলিকে অনুমোদন দেয়। আর ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই) কলেজগুলিতে কোর্স করানোর স্বীকৃতি দেয়।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (ডিএলএড কোর্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর) সভাপতি অধ্যাপক গৌতম পাল বলেন, শিক্ষা যেহেতু যুগ্ম তালিকাভুক্ত। তাই কোনও কোর্সের বিষয়ে রাজ্য-কেন্দ্র যৌথ আলোচনার মাধ্যমে কোনও বিষয় কার্যকরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্ট্যান্ড অ্যালোন বিএড কলেজগুলিতে এখনও এই নিয়ে তেমন সমস্যা হয়নি।
রাজ্যের বাবাসাহেব আম্বেদকর এডুকেশন অর্থাৎ বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জেনারেল কলেজগুলির অধিকাংশই সরকারি। সেই কলেজগুলিতে চার বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়েছে। তবে নয়া এই কোর্সের একজনও পড়ুয়া উত্তীর্ণ হয়নি। এই কোর্স শেষে ১ বছরের বিএড করা যাবে। বেসরকারি বিএড-কলেজগুলির ক্ষেত্রে এখনও কোনও সমস্যা হয়নি। এ দিকে অভিযোগ, রাজ্যের বহু বিএড কলেজ এখন বন্ধের মুখে। এই নিয়ে উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই নিয়ে এখনও কেউ নিজেদের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেনি। তবে এই কলেজগুলি ডিগ্রি কোর্সও চালু করতে পারে।
এ দিকে, কেন্দ্র সরকার নয়া শিক্ষানীতি চালু করেছে। তাতে রাজ্যের প্রায় ১২০০ বিএড ও ডিএলএড কলেজ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মাল্টিডিসিপ্লিনারি শিক্ষানীতির আওতায়, এসব প্রতিষ্ঠানকে সাধারণ স্নাতক (বিএ, বিএসসি, বিকম) কোর্স চালু করতেই হবে, নচেৎ নতুন শিক্ষক শিক্ষণ কোর্স (আইটিইপি) চালুর অনুমনুতি মিলবে না। শিক্ষক-শিক্ষণের কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা এনসিটিই একটি খসড়া নীতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন কোর্স চালু করতে হবে। বর্তমানে দেশজুড়ে মাত্র ৬৫টি প্রতিষ্ঠান এই নীতির মানদণ্ড পূরণ করছে, কারণ তারা অন্যান্য বিষয়েও স্নাতক কোর্স চালায়। তবে অধিকাংশ বিএড-ডিএলএড কলেজ এই যোগ্যতাবিধি পূরণ করতে পারবে না, যার ফলে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে চলেছে। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, বিএড-ডিএলএড কলেজগুলির বিল্ডিং, জমি, পরিকাঠামো এবং শিক্ষকসংখ্যা নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের কলেজেই এই পরিকাঠামোগত ঘাটতি থাকায়, তারা নতুন কোর্স চালুর অনুমতি নাও পেতে পারে। ফলে, এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন থেকে চার বছরের ইন্টিগ্রেটেড টিচার এডুকেশন প্রোগ্রাম (আইটিইপি) বর্তমানের ডিএলএড কোর্সের বিকল্প হয়ে উঠবে। দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পর এই কোর্স করলে তা ডিএলএড ও বিএডের সমতুল্য হবে। একইসঙ্গে, এক বছরের বিএড কোর্স চালু করা হবে। ফলে, প্রচলিত বিএড-এমএড কোর্সগুলির চাহিদা কমে যাবে এবং ২০৩০ সালের পরে ডিএলএড কোর্সই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ২০২৮ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষক নিয়োগের শর্ত পূরণ করতে হবে।
শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির মাল্টিডিসিপ্লিনারি ধারণাটি বাস্তবায়নে বড় সমস্যা তৈরি করছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া এই নিয়ম কার্যকর হলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলিকে। প্রশ্ন উঠছে, যদি বিএড-ডিএলএড কলেজে সাধারণ স্নাতক কোর্স চালু হয়, তবে প্রচলিত ডিগ্রি কলেজগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে?
বেসরকারি বিএড-ডিএলড কলেজের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ কাইসার রসিদ বলেন, সমস্যা হচ্ছে। এখন কোনও নিয়োগ নিয়মিত হচ্ছে না। ডিএলএড এবং বিএড কলেজে বহু আসন ফাঁকা থাকছে। পাশাপাশি ইন্টিগ্রেটেড কোর্সেও এই কলেজগুলিতে প্রভাব পড়বে। প্রতিটি কলেজে ৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী রয়েছে। এই সমস্যার জন্য কর্মহারাতে বসতেন তাঁরা। এই কলেজগুলিতে জেনারেল কোর্স চালু করতে হলে কোথা থেকে বরাদ্দ আসবে?