১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আড়াই বছরের কম বয়সী শিশুদের পক্ষে কাশির সিরাপ বিপজ্জনক

সামিমা এহসানা
  • আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার
  • / 7

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ মুম্বই এর একটি শিশুকে কাশির সিরাপ খাওয়ানোর পর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। প্রায় ১৭ মিনিট পর শিশুটির জ্ঞান ফেরে। এই ঘটনাটির পর মনে করা হয়  শিশুটিকে যে কাশির সিরাপ দেওয়া হয়েছিল , তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শিশুটি জ্ঞান হারায়। এই প্রসঙ্গে মুম্বই এর কে ই এম হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুকেশ আগরওয়ালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এই শিশুটির ক্ষেত্রে ওষুধের ডোজ বেশি হওয়ার কারণেও ঘটনাটি ঘটতে পারে। আবার শোয়া অবস্থায় ওষুধ খাওয়ালেও এমন ঘটনা ঘটে বলে জানান ডা. আগরওয়াল।

কিন্তু ওই শিশুর দাদি তিলোত্তমা মঙ্গেশকর নিজে একজন চিকিৎসক। তিনি বলেন, তাঁর নাতিকে যখন ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল, তখন সে বসে ছিল। ওষুধ খাওয়ানোর পর তাঁর নাতি জ্ঞান হারালে ডা. মঙ্গেশকর লক্ষ্য করেন, শিশুটির গোটা শরীরের রং পাল্টে হলুদ হয়ে যায়। এরপর গোটা শরীর নীল হয়ে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাকে সিপিআর দেন তার দাদি ডা. মঙ্গেশকর। এভাবে প্রায় ১৭ মিনিট পর শিশুর জ্ঞান ফেরে এবং সে শ্বাস নেয়। তাঁরা নিজেরা এই ঘটনাটির তদন্ত করে দেখেন, কাশির সিরাপে ক্লোরফেনেরমাইন ও ডেক্সট্রোমেথোর্ফন নামে দুটি উপাদান ছিল। আমেরিকায় চার বছরের কম বয়সী শিশুদের ওষুধে এই দুটি উপাদান একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু ভারতে কাশির সিরাপের নির্মাতারা ওষুধের লেবেলে এই দুটি উপাদানের কথা উল্লেখ করছেন না। চিকিৎসকরাও নির্দ্বিধায় শিশুদের এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আগরওয়াল জানিয়েছেন, শিশু মায়ের কাছ থেকে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পায় তা ৫ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। পাঁচ বছর বয়স থেকে শিশুর নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। এই সময় শিশুদের হাঁচি, কাশি হওয়াটা স্বাভাবিক। এই বয়সের শিশুদের বছরে ৫-৬ বার ঠান্ডা লাগাটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। ২-৩ দিন পর সেটা নিজে নিজেই সেরে যায়। কিন্তু সংক্রমণ কান বা অন্য কোনো অঙ্গে ছড়িয়ে গেলে তখন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হতে পারে। তাছাড়া কোনো ওষুধ বা কাশির সিরাপ শিশুদেরকে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

চিকিৎসকদের মতে মাঝে মাঝে শিশুদের কাশি হওয়াটা ভালো লক্ষণ। তাতে শিশুর শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসার সুযোগ পায়। ওষুধ দিয়ে সেটাকে বন্ধ করার কোনো যুক্তি নেয় বলে মত, চিকিৎসকদের।

ডা. আগরওয়ালের মতে, কাশির সিরাপ খাওয়ালে শিশুদের খুব বেশি ঘুম পায়। এবার ঘুমিয়ে খাবার খাওয়ার জন্য অনেক সময় শ্বাস নালিতে খাবার আটকে যায়। কাশির মাধ্যমে সেটা বের করারও কোনো সুযোগ থাকে না। তাছাড়া এনসিবিআই এর তথ্য অনুযায়ী শিশুরা সারাদিনে ১১ বার কাশলেও সেটা স্বাভাবিক। শীতকালে সেটা বাড়তেও পারে। দোকানে দেদার বিক্রি হলেও ২ বছরের নীচের শিশুদের পক্ষে কাশির সিরাপ বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাছাড়া কাশির সিরাপের বোতলেও লেখা থাকে, ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ওই সিরাপ নিষিদ্ধ।

আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেশনের মতে, শিশুদের ঠান্ডা লাগলে বেশির ভাগ সময় নিজে নিজে সেরে যায়। তারপরও ঠিক না হলে স্যলাইন নোজ ড্রপ, বা হালকা গরম দুধ বা জল খাওয়ানো যেতে পারে।

ভারতের চিকিৎসকদের মতে ঠান্ডা আটকাতে শিশুকে মধু, আদা, লেবু খাওয়ানো যেতে পারে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়াতে ভারতীয় কাশির সিরাপ খেয়ে ৬০ জনের বেশি শিশুর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আড়াই বছরের কম বয়সী শিশুদের পক্ষে কাশির সিরাপ বিপজ্জনক

আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ মুম্বই এর একটি শিশুকে কাশির সিরাপ খাওয়ানোর পর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। প্রায় ১৭ মিনিট পর শিশুটির জ্ঞান ফেরে। এই ঘটনাটির পর মনে করা হয়  শিশুটিকে যে কাশির সিরাপ দেওয়া হয়েছিল , তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শিশুটি জ্ঞান হারায়। এই প্রসঙ্গে মুম্বই এর কে ই এম হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুকেশ আগরওয়ালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এই শিশুটির ক্ষেত্রে ওষুধের ডোজ বেশি হওয়ার কারণেও ঘটনাটি ঘটতে পারে। আবার শোয়া অবস্থায় ওষুধ খাওয়ালেও এমন ঘটনা ঘটে বলে জানান ডা. আগরওয়াল।

কিন্তু ওই শিশুর দাদি তিলোত্তমা মঙ্গেশকর নিজে একজন চিকিৎসক। তিনি বলেন, তাঁর নাতিকে যখন ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল, তখন সে বসে ছিল। ওষুধ খাওয়ানোর পর তাঁর নাতি জ্ঞান হারালে ডা. মঙ্গেশকর লক্ষ্য করেন, শিশুটির গোটা শরীরের রং পাল্টে হলুদ হয়ে যায়। এরপর গোটা শরীর নীল হয়ে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাকে সিপিআর দেন তার দাদি ডা. মঙ্গেশকর। এভাবে প্রায় ১৭ মিনিট পর শিশুর জ্ঞান ফেরে এবং সে শ্বাস নেয়। তাঁরা নিজেরা এই ঘটনাটির তদন্ত করে দেখেন, কাশির সিরাপে ক্লোরফেনেরমাইন ও ডেক্সট্রোমেথোর্ফন নামে দুটি উপাদান ছিল। আমেরিকায় চার বছরের কম বয়সী শিশুদের ওষুধে এই দুটি উপাদান একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু ভারতে কাশির সিরাপের নির্মাতারা ওষুধের লেবেলে এই দুটি উপাদানের কথা উল্লেখ করছেন না। চিকিৎসকরাও নির্দ্বিধায় শিশুদের এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আগরওয়াল জানিয়েছেন, শিশু মায়ের কাছ থেকে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পায় তা ৫ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। পাঁচ বছর বয়স থেকে শিশুর নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। এই সময় শিশুদের হাঁচি, কাশি হওয়াটা স্বাভাবিক। এই বয়সের শিশুদের বছরে ৫-৬ বার ঠান্ডা লাগাটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। ২-৩ দিন পর সেটা নিজে নিজেই সেরে যায়। কিন্তু সংক্রমণ কান বা অন্য কোনো অঙ্গে ছড়িয়ে গেলে তখন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হতে পারে। তাছাড়া কোনো ওষুধ বা কাশির সিরাপ শিশুদেরকে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

চিকিৎসকদের মতে মাঝে মাঝে শিশুদের কাশি হওয়াটা ভালো লক্ষণ। তাতে শিশুর শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসার সুযোগ পায়। ওষুধ দিয়ে সেটাকে বন্ধ করার কোনো যুক্তি নেয় বলে মত, চিকিৎসকদের।

ডা. আগরওয়ালের মতে, কাশির সিরাপ খাওয়ালে শিশুদের খুব বেশি ঘুম পায়। এবার ঘুমিয়ে খাবার খাওয়ার জন্য অনেক সময় শ্বাস নালিতে খাবার আটকে যায়। কাশির মাধ্যমে সেটা বের করারও কোনো সুযোগ থাকে না। তাছাড়া এনসিবিআই এর তথ্য অনুযায়ী শিশুরা সারাদিনে ১১ বার কাশলেও সেটা স্বাভাবিক। শীতকালে সেটা বাড়তেও পারে। দোকানে দেদার বিক্রি হলেও ২ বছরের নীচের শিশুদের পক্ষে কাশির সিরাপ বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাছাড়া কাশির সিরাপের বোতলেও লেখা থাকে, ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ওই সিরাপ নিষিদ্ধ।

আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেশনের মতে, শিশুদের ঠান্ডা লাগলে বেশির ভাগ সময় নিজে নিজে সেরে যায়। তারপরও ঠিক না হলে স্যলাইন নোজ ড্রপ, বা হালকা গরম দুধ বা জল খাওয়ানো যেতে পারে।

ভারতের চিকিৎসকদের মতে ঠান্ডা আটকাতে শিশুকে মধু, আদা, লেবু খাওয়ানো যেতে পারে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়াতে ভারতীয় কাশির সিরাপ খেয়ে ৬০ জনের বেশি শিশুর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।