Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the login-customizer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u419551674/domains/puberkalom.in/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
নীতিশিক্ষা হারিয়ে যাওয়ার ফলেই কি এত অপরাধ এত দুর্নীতি? | Puber Kalom
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নীতিশিক্ষা হারিয়ে যাওয়ার ফলেই কি এত অপরাধ এত দুর্নীতি?

সুস্মিতা
  • আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 58

মানবিক ও নৈতিকতা পূর্ণ যে শিক্ষা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে গড়ে তোলে, সেই নীতি শিক্ষাই হারিয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। যার ফলে সমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাড়ছে দুর্নীতি অমানবিকতা ইত্যাদি। ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে নীতি শিক্ষায় শিক্ষিত সেই প্রজন্মটিউ। লিখেছেন দীপক মাহান্তি

আর ১০–১৫ বছরের মধ্যেই আমরা হয়তো একটা প্রজন্মকে হারিয়ে ফেলবো যে প্রজন্ম আমাদের মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতেন,কোনটা স্বাধীনতা কোনটা স্বেচ্ছাচারিতা বুঝিয়ে দিতেন, যে কোনো জিনিস গভীরভাবে ভাবতে শেখাতেন। নৈতিকতার পাঠ দিতেন বিবেক বলে যে বস্তু আছে সেটা বুঝিয়ে বলতেন। সৎ ভাবে চলতে উপদেশ দিতেন সেই প্রজন্মটাই শেষ হয়ে আসছে।
যারা ভোরে ঘুম ভাঙাতে পারতেন, খোলামেলা আলোচনা করে জীবনকে বুঝতে শেখাতেন, সবকিছুকে অন্তঃস্থ চোখ দিয়ে যাচাই করতে পারতেন, অনুসন্ধিতসু মনকে উসকে দিতেন, সংযম শেখাতেন, এবং সর্বদাই চেতনা ও বিবেকের দুয়ারকে খোলা ও জাগ্রত রাখতেন সেই শেষ প্রজন্ম টা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিচ্ছে। এ এক গভীর বেদনা। আগামী পৃথিবী এসব জিনিস ইতিহাসে পড়বে।
সেই নীতি শিক্ষায় কি ক্রমে ক্রমে দূর হতে দূর চলে যাচ্ছে। সমাজে যে পরিমাণ বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নীতি শিক্ষা প্রায় শেষের পথে। অনেকদিন আগেই শিক্ষার এই আধুনিক পদ্ধতি নীতি শিক্ষা নামক বৃক্ষের মূলে কুঠারাঘাত করেছিল সেই বৃক্ষই এখন ধীরে ধীরে মরতে বসেছে।
নীতি শিক্ষা মানুষের মধ্যে সামাজিক সংহতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
নীতি শিক্ষা দারিদ্র্য, অপরাধ, এবং সামাজিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।
নীতি শিক্ষা ব্যক্তিদের সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান প্রদান করে।
নীতি শিক্ষা মানুষের সামাজিক, সাংস্কূতিক অগ্রগতিতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা যায়, নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের আচরণের অন্যতম প্রভাবক। অল্প বয়সে নীতিশিক্ষা মানুষকে অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে প্রভাবিত করে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে নীতিশিক্ষা সীমিত পরিসরে প্রদান করা হয়। অথচ, নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার জন্য আইনের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আর যেহেতু শৈশব ও কৈশোরে শিক্ষার্থীর মন থাকে কাদামাটির মতো, তাই ঐ সময় তার জন্য নীতিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে সামগ্রিকভাবে তার জীবনের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে।
শিক্ষা ও নৈতিকতা, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মত। নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা হয় না। মানবিক নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা কুশিক্ষার নামান্তর, যা মানুষকে পশুর চেয়েও নিম্নস্তরে নামিয়ে ফেলে। যা এখন সবাই দেখতে পাচ্ছি।আর মানবিক নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষা মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের মযার্দায় অধিষ্ঠিত রাখে। যে শিক্ষা মানুষকে ভয়কে জয় করতে শেখায় না, যে শিক্ষা মানুষকে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে স্বার্থপরতায় অন্ধ করে তোলে, যে শিক্ষা মানুষকে উগ্র ইন্দ্রিয়সুখের জন্য হত্যা করতে পারে, যে শিক্ষা সতীর্থকে নির্মমভাবে খুন করতে উদ্বুদ্ধ করে, যে শিক্ষা ভালবাসার কবর রচনা করে ঘৃণাকে উসকে দিয়ে হিংসা হানাহানির কারণ হয়, যে শিক্ষা ঐক্যের পরিবর্তে শুধু বিভেদই বাড়ায়, আজ সর্বত্র সে শিক্ষার প্রচার ও প্রসার। এই হচ্ছে বস্তুবাদী শিক্ষার দৃষ্টান্ত।পাশ্চাত্যের শিক্ষা দর্শনে নৈতিকতাকে সুকৌশলে নির্বাসন দেয়া হয়েছে। পাশ্চাত্য সভ্যতা নৈতিকতার ধার ধারে না। শিক্ষার ফলে কোন্ ধরণের নৈতিকতা জন্ম নিল সে বিষয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতা উদাসীন। শিক্ষা ও নৈতিকতা এই দুয়ের জন্যই আদর্শ শিক্ষক এবং এক আদর্শ পরিবেশ প্রয়োজন। শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রশ্নে শিক্ষকের ভূমিকাই মুখ্য। শিক্ষক, শিক্ষা ও নৈতিকতা এই ত্রিভুজ দিয়েই গড়ে ওঠে কোন জাতির সভ্যতার চূড়া। পৃথিবীর সকল সমাজেই এই তিন উপাদানই ছিল সভ্যতা গড়ার মূল হাতিয়ার।
শিক্ষার জন্য শিক্ষা, মানুষকে মনুষ্যত্ব নিয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করে না। তার জন্য দরকার আদর্শ পরিবেশের সাথে সাথে উন্নত সিলেবাস।
এখন দুর্নীতি বহুমাত্রিক রূপ পেয়েছে, সমাজ-রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অফিস, আদালত, মিডিয়া সর্বত্র লাগামহীন দুর্নীতি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন বার বার বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। ক্ষমতাবান মানুষেরা দিন দিন বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এবং সাধারণ দরিদ্র মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে। পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রোনিক মাধ্যমে প্রায়শই দুর্নীতির নানান খবর প্রকাশিত হয় কিন্তু তা তো কিছুই বন্ধ হয় না।
এত দুর্নীতি কেন হচ্ছে তার অনুসন্ধান জরুরী। যে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেই দুর্নীতি করছে। এমন অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমাদের বিশ্লেষণ অতীব জরুরি। এই অপরাধমূলক প্রবণতার পশ্চাতে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি কারণ থাকতে পারে, যা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। এজন্য একজন ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক গঠন কাঠামো নির্মাণে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্বও যাচাই করা উচিত।
শিক্ষার্থীদের নীতিবোধ শেখানোর কোনো সর্বজনীন পদ্ধতি কি আছে? সত্যিকার অর্থে বলা যায়, সবার নিকট গ্রহণযোগ্য সেরকম কোনো পদ্ধতি পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন উপায়ে ব্যক্তির নৈতিক শিক্ষা লাভ হয়ে থাকে। জীবনভর এই নৈতিক শিক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তবে এই নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য মূল কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক এবং পিতা-মাতা। কিন্তু এটাই যেন কোথায় একটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। আত্মার আত্মীয়তার বন্ধনে ছেদ পড়েছে- মানুষগুলো আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ধর্ম-কর্ম পালনের ক্ষেত্রও আগের মতো সামাজিক বন্ধন নেই। প্রত্যেকটি মানুষ নিজের মতো করে চলতে চায়। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানগুলো জাঁকজমক পূর্ণ হয় না। এর জন্য পিতা-মাতা এবং আশেপাশের তাদের আত্মীয় পরিবেশ সবকিছুই দেয় সবাই কেমন যেন হঠাৎ করে আত্মকেন্দ্রিক হতে শেখাচ্ছে বারবার শুধু নিজেদেরকে ভালো রাখতে শেখাচ্ছে অপরকে ভালো রাখা সমাজকে ভালো রাখার দেশকে ভালো রাখা এগুলো কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া মনে হচ্ছে সবার কাছে।
পিতা মাতা এবং শিক্ষকদের উচিত নিজেদের নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেব গড়ে তোলা, যাতে ছেলে মেয়েদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়াও নৈতিক গল্প পড়ার মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতিবোধ গড়ে উঠে থাকে। নীতিবোধসম্পন্ন ও সংস্কূতিবান পরিবারের শিশুরাও অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মন্দ পরিবেশের কারণে নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলতে পারে। সচেতন থাকা খুব দরকার। নিজের দুর্নীতিগ্রস্ত হবো আর ছেলেকে ভাববো সৎ হবে এ কখনো হতে পারে না। নৈতিক শিক্ষাকে আবার ফিরিয়ে আনা দরকার তাছাড়া আগামী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরো অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নীতিশিক্ষা হারিয়ে যাওয়ার ফলেই কি এত অপরাধ এত দুর্নীতি?

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার

মানবিক ও নৈতিকতা পূর্ণ যে শিক্ষা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে গড়ে তোলে, সেই নীতি শিক্ষাই হারিয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। যার ফলে সমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাড়ছে দুর্নীতি অমানবিকতা ইত্যাদি। ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে নীতি শিক্ষায় শিক্ষিত সেই প্রজন্মটিউ। লিখেছেন দীপক মাহান্তি

আর ১০–১৫ বছরের মধ্যেই আমরা হয়তো একটা প্রজন্মকে হারিয়ে ফেলবো যে প্রজন্ম আমাদের মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতেন,কোনটা স্বাধীনতা কোনটা স্বেচ্ছাচারিতা বুঝিয়ে দিতেন, যে কোনো জিনিস গভীরভাবে ভাবতে শেখাতেন। নৈতিকতার পাঠ দিতেন বিবেক বলে যে বস্তু আছে সেটা বুঝিয়ে বলতেন। সৎ ভাবে চলতে উপদেশ দিতেন সেই প্রজন্মটাই শেষ হয়ে আসছে।
যারা ভোরে ঘুম ভাঙাতে পারতেন, খোলামেলা আলোচনা করে জীবনকে বুঝতে শেখাতেন, সবকিছুকে অন্তঃস্থ চোখ দিয়ে যাচাই করতে পারতেন, অনুসন্ধিতসু মনকে উসকে দিতেন, সংযম শেখাতেন, এবং সর্বদাই চেতনা ও বিবেকের দুয়ারকে খোলা ও জাগ্রত রাখতেন সেই শেষ প্রজন্ম টা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিচ্ছে। এ এক গভীর বেদনা। আগামী পৃথিবী এসব জিনিস ইতিহাসে পড়বে।
সেই নীতি শিক্ষায় কি ক্রমে ক্রমে দূর হতে দূর চলে যাচ্ছে। সমাজে যে পরিমাণ বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নীতি শিক্ষা প্রায় শেষের পথে। অনেকদিন আগেই শিক্ষার এই আধুনিক পদ্ধতি নীতি শিক্ষা নামক বৃক্ষের মূলে কুঠারাঘাত করেছিল সেই বৃক্ষই এখন ধীরে ধীরে মরতে বসেছে।
নীতি শিক্ষা মানুষের মধ্যে সামাজিক সংহতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
নীতি শিক্ষা দারিদ্র্য, অপরাধ, এবং সামাজিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।
নীতি শিক্ষা ব্যক্তিদের সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান প্রদান করে।
নীতি শিক্ষা মানুষের সামাজিক, সাংস্কূতিক অগ্রগতিতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা যায়, নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের আচরণের অন্যতম প্রভাবক। অল্প বয়সে নীতিশিক্ষা মানুষকে অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে প্রভাবিত করে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে নীতিশিক্ষা সীমিত পরিসরে প্রদান করা হয়। অথচ, নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার জন্য আইনের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আর যেহেতু শৈশব ও কৈশোরে শিক্ষার্থীর মন থাকে কাদামাটির মতো, তাই ঐ সময় তার জন্য নীতিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে সামগ্রিকভাবে তার জীবনের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে।
শিক্ষা ও নৈতিকতা, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মত। নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা হয় না। মানবিক নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা কুশিক্ষার নামান্তর, যা মানুষকে পশুর চেয়েও নিম্নস্তরে নামিয়ে ফেলে। যা এখন সবাই দেখতে পাচ্ছি।আর মানবিক নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষা মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের মযার্দায় অধিষ্ঠিত রাখে। যে শিক্ষা মানুষকে ভয়কে জয় করতে শেখায় না, যে শিক্ষা মানুষকে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে স্বার্থপরতায় অন্ধ করে তোলে, যে শিক্ষা মানুষকে উগ্র ইন্দ্রিয়সুখের জন্য হত্যা করতে পারে, যে শিক্ষা সতীর্থকে নির্মমভাবে খুন করতে উদ্বুদ্ধ করে, যে শিক্ষা ভালবাসার কবর রচনা করে ঘৃণাকে উসকে দিয়ে হিংসা হানাহানির কারণ হয়, যে শিক্ষা ঐক্যের পরিবর্তে শুধু বিভেদই বাড়ায়, আজ সর্বত্র সে শিক্ষার প্রচার ও প্রসার। এই হচ্ছে বস্তুবাদী শিক্ষার দৃষ্টান্ত।পাশ্চাত্যের শিক্ষা দর্শনে নৈতিকতাকে সুকৌশলে নির্বাসন দেয়া হয়েছে। পাশ্চাত্য সভ্যতা নৈতিকতার ধার ধারে না। শিক্ষার ফলে কোন্ ধরণের নৈতিকতা জন্ম নিল সে বিষয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতা উদাসীন। শিক্ষা ও নৈতিকতা এই দুয়ের জন্যই আদর্শ শিক্ষক এবং এক আদর্শ পরিবেশ প্রয়োজন। শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রশ্নে শিক্ষকের ভূমিকাই মুখ্য। শিক্ষক, শিক্ষা ও নৈতিকতা এই ত্রিভুজ দিয়েই গড়ে ওঠে কোন জাতির সভ্যতার চূড়া। পৃথিবীর সকল সমাজেই এই তিন উপাদানই ছিল সভ্যতা গড়ার মূল হাতিয়ার।
শিক্ষার জন্য শিক্ষা, মানুষকে মনুষ্যত্ব নিয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করে না। তার জন্য দরকার আদর্শ পরিবেশের সাথে সাথে উন্নত সিলেবাস।
এখন দুর্নীতি বহুমাত্রিক রূপ পেয়েছে, সমাজ-রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অফিস, আদালত, মিডিয়া সর্বত্র লাগামহীন দুর্নীতি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন বার বার বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। ক্ষমতাবান মানুষেরা দিন দিন বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এবং সাধারণ দরিদ্র মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে। পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রোনিক মাধ্যমে প্রায়শই দুর্নীতির নানান খবর প্রকাশিত হয় কিন্তু তা তো কিছুই বন্ধ হয় না।
এত দুর্নীতি কেন হচ্ছে তার অনুসন্ধান জরুরী। যে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেই দুর্নীতি করছে। এমন অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমাদের বিশ্লেষণ অতীব জরুরি। এই অপরাধমূলক প্রবণতার পশ্চাতে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি কারণ থাকতে পারে, যা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। এজন্য একজন ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক গঠন কাঠামো নির্মাণে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্বও যাচাই করা উচিত।
শিক্ষার্থীদের নীতিবোধ শেখানোর কোনো সর্বজনীন পদ্ধতি কি আছে? সত্যিকার অর্থে বলা যায়, সবার নিকট গ্রহণযোগ্য সেরকম কোনো পদ্ধতি পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন উপায়ে ব্যক্তির নৈতিক শিক্ষা লাভ হয়ে থাকে। জীবনভর এই নৈতিক শিক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তবে এই নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য মূল কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক এবং পিতা-মাতা। কিন্তু এটাই যেন কোথায় একটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। আত্মার আত্মীয়তার বন্ধনে ছেদ পড়েছে- মানুষগুলো আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ধর্ম-কর্ম পালনের ক্ষেত্রও আগের মতো সামাজিক বন্ধন নেই। প্রত্যেকটি মানুষ নিজের মতো করে চলতে চায়। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানগুলো জাঁকজমক পূর্ণ হয় না। এর জন্য পিতা-মাতা এবং আশেপাশের তাদের আত্মীয় পরিবেশ সবকিছুই দেয় সবাই কেমন যেন হঠাৎ করে আত্মকেন্দ্রিক হতে শেখাচ্ছে বারবার শুধু নিজেদেরকে ভালো রাখতে শেখাচ্ছে অপরকে ভালো রাখা সমাজকে ভালো রাখার দেশকে ভালো রাখা এগুলো কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া মনে হচ্ছে সবার কাছে।
পিতা মাতা এবং শিক্ষকদের উচিত নিজেদের নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেব গড়ে তোলা, যাতে ছেলে মেয়েদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়াও নৈতিক গল্প পড়ার মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতিবোধ গড়ে উঠে থাকে। নীতিবোধসম্পন্ন ও সংস্কূতিবান পরিবারের শিশুরাও অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মন্দ পরিবেশের কারণে নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলতে পারে। সচেতন থাকা খুব দরকার। নিজের দুর্নীতিগ্রস্ত হবো আর ছেলেকে ভাববো সৎ হবে এ কখনো হতে পারে না। নৈতিক শিক্ষাকে আবার ফিরিয়ে আনা দরকার তাছাড়া আগামী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরো অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।