পুবের কলম প্রতিবেদক: উৎপাদন সর্বনিম্ন, চিন্তায় চা শ্রমিকরা। দার্জিলিং চায়ের (Darjeeling Tea) ১৬৯ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন উৎপাদন হয়েছে বলে সরকারি তথ্যে জানা গিয়েছে। তবে উৎপাদন কম হওয়ার পিছনে অ্যাব-সেন্টিজম এবং পুনঃরোপণের অতিরিক্ত খরচকে দায়ী করা হয়েছে। টি বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে মাত্র ৫৬ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন করেছে দার্জিলিং। এই প্রথম ৬ মিলিয়নের কম চা উৎপাদন হয়েছে। ৭০ এর দশকে সর্বোচ্চ বার্ষিক উৎপাদন ছিল ১৪ মিলিয়ন কেজি। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৮৭টি বাগান নিয়ে গঠিত দার্জিলিং চা শিল্পে ৬০ লাখ ১ হাজার কেজি চা উৎপাদন করেছিল। এমনকি ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময়ও উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬৭ লাখ কেজি।
আরও পড়ুন: ডানকুনির যানজট নিয়ে নবান্নে বৈঠক, কাজ চলবে আরও দু’মাস জানাল রাজ্য
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ সালে চা উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। সে বারও হ্রাস পেয়েছিল উৎপাদন। তবে সেই সময় গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের কারণে চা বাগানগুলি ১০৪ দিন ধরে বন্ধ পড়েছিল। অর্থাৎ ২০১৭ সালে মাত্র ৩২ লাখ ১০ (৩.২১ মিলিয়ন) হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল দার্জিলিংয়ে। চা উৎপাদনকারী এক কৃষকের বক্তব্য, সেই বছর দীর্ঘ ১০৪ দিনের ধর্মঘটের কারণে চা উৎপাদনে প্রভাব পড়েছিল। তবে ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। এক চাষী বলেন, “বর্তমানে দার্জিলিংয়ে প্রায় ১২টি চা বাগান (Darjeeling Tea) বন্ধ রয়েছে। পাতা তুলতে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেওয়ায় দুটি চা বাগান সম্প্রতি তাদের কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছে।”
আরও পড়ুন: রমযানে সালাউদ্দিন আইয়ুবী মসজিদে ৯০০ বছর ধরে চলছে কুরআন তিলাওয়াতের ঐতিহ্য
কি কারণে উৎপাদন কম! এর একাধিক কারণ উল্লেখ করেছে শিল্পমহল। তাদের কথায়, কোনো কোনো চা বাগানে শ্রমিকদের অনুপস্থিতির হার ৬০ শতাংশ। শ্রমিক না থাকার কারণে একপ্রকার সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও একটি চা বাগানে বছরে ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ডে পাতা তোলা সম্পন্ন হয়। এখন সেটি বছরে ১৬-১৮ রাউন্ডে নেমে এসেছে।” ২০১৭ সালের আন্দোলনের পর কাজের খোঁজে শহরে পাড়ি দেয় বহু শ্রমিক। প্রায় ৫৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এবং ১৫ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক চা শিল্পে যুক্ত। তবে বর্তমানে নতুন করে এই শিল্পে কাজের আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেউ। মুখ ফেরাচ্ছে তরুণরাও। ফলে শ্রমিক সংকটও একটি কারণ, যার ফলে উৎপাদন কমেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালের পর এই শিল্প বেশিরভাগ বাগান পুনরুজ্জীবিত করতে পারেনি। চাষীদের বক্তব্য, ওই সময়ে ব্যাপক হারে বাজার দখল করে নেপালের চা। অনেকেই দার্জিলিং চায়ের (Darjeeling Tea) পরিবর্তে নেপালী চা ব্যবহার শুরু করেন। ফলে চাহিদা কমে যায় এবং বাজারে দাম কমতে থাকে।