নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলি: আরামবাগের প্রতাপনগরের ২৬১ নম্বর বুথে ভোটার তালিকায় বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়েছে। অভিযোগ, ওই বুথের ১৩ জন জীবিত ভোটারকে মৃত বলে দেখানো হয়েছে, যা নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা। শুধু তাই নয়, ভোটার তালিকায় এমন ৯ জন ব্যক্তির নামও রয়েছে, যাদের প্রকৃত অস্তিত্ব ওই এলাকায় নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এই ৯ জনকে তারা চিনতেই পারেন না।
সূত্রের খবর, আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের প্রতাপনগর এলাকার ২৬১ নম্বর বুথের ভোটার সবিতা ঘোষ, চন্দ্রশেখর রায়, গৌরচন্দ্র ঘোষ-সহ মোট ১৩ জন জীবিত ভোটারকে ভোটার তালিকায় মৃত বলে দেখানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, ওই ভোটার তালিকায় এমন ৯ জন ব্যক্তির নাম রয়েছে বাস্তবে ওই বুথে তাদের অস্তিত্বই নেই বলে অভিযোগ। তাদের ওই বুথের কোনও ভোটার চেনেন না বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন। কারচুপির কিছু প্রমাণও তিনি দেখান। দিল্লি, হরিয়ানা-সহ কয়েকটি রাজ্যে বিজেপি ভোটার তালিকায় কারচুপি করে জয় লাভ করেছে বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। ওইসব রাজ্যে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীরা ভোটার তালিকায় কারচুপির ঘটনাটি ধরতে পারেননি, তবে নজর এড়ায়নি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভা থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুসন্ধান করে ভোটার তালিকায় কোনও গরমিল আছে কি না তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। নেত্রীর নির্দেশের পরই জেলায় জেলায় বিভিন্ন বুথে দলীয় নেতা-কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকায় তাদের নাম ও ভোটার কার্ড আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন।
মঙ্গলবার হুগলি জেলার আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী ভোটার তালিকায় গরমিল আছে কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রতাপনগরে গিয়েছিলেন। এ দিন তার সঙ্গে ছিলেন ওই অঞ্চলের অঞ্চল সভাপতি মুন্সি ইকবাল-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রতাপনগরের ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখলে তাতে গরমিল ধরা পড়ে। যা প্রকাশ্যে আসতেই এলাকার ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, যে কোনও সময় সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হতে পারেন। এই ঘটনায় স্বপন নন্দী নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। স্বপন নন্দীর অভিযোগ, ‘বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে তৃণমূলকে জধ করতে ওই কাজ তারা করে চলেছে।’
যদিও তৃণমূলের ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আরামবাগের বিজেপি বিধায়ক মধুসূদন বাগ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অহেতুক উত্তেজনা তৈরি করছেন। ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণ করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভোট প্রদান করলে আসল নকল ভোটার ধরা পড়ে যাবে।’
ওই বুথের ভোটার তালিকায় জীবিত চন্দ্রশেখর রায়কে মৃত বলে দেখানো হয়েছে। তিনি জানান, ‘ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে আমি মৃত। আমি কি তাহলে ভূত? আমি জানতেই পারিনি ভোটার তালিকায় আমাকে মৃত বলে দেখানো হয়েছে। তৃণমূল কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানালে আমি অবাক হয়ে যাই।’
এ দিন আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী জানান, ‘২৬১ নম্বর প্রতাপনগরের ওই বুথে ১৩ জন জীবিত ভোটারকে ভোটার তালিকায় মৃত বলে দেখানো হয়েছে। আবার ওই বুথে এমন ৯ ভোটারের নাম রয়েছে, যারা অন্য বুথের।’