১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আপনার কি গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাস আছে? শরীরে বিপদ ডেকে আনছেন না তো!

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, শনিবার
  • / 19

আজকের ইঁদুর দৌড়ে বদলেছে জীবনপ্রবাহ– পরিবর্তন হয়েছে রোজকার রুটিনে।ফলে মানুষের নিয়মিত ঘুমের অভ্যাসেও ক্রমে পড়ছে আধুনিক জীবনের কুপ্রভাব। একে ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্রাস্টিনেশন’বলা হয় অর্থাৎ ঘুমকে জোর করে এড়িয়ে যাওয়া। এই প্রবণতা স্বাস্থ্যের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে মানবিক সম্পর্কের ভিত্তিকেও ধীরে ধীরে শিথিল করছে।

‘ইউএস ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনে’র এক সার্ভেতে জানা গেছে, ভারতে সারাদিন কাজের চাপ ও টেনশন কাটাতে নিছক অকারণেই রাত জাগার প্রবণতা ক্রমে বাড়ছে। বিশেষ করে ভারতীয় যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে জোর করে রাতে জেগে থাকা ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। ফলে ভারত স্লিপ ডিপ্রাইভড দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যদিও ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্রাস্টিনেশন’ একটি ইন্টারনেট প্রবাদ যা ২০১৬ সালে চিন প্রথম ব্যবহার করে। এর ওপর গবেষণা চলছে।

আরও পড়ুন: দেরি করে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন মহানবী সা.

আপনার কি গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাস আছে? শরীরে বিপদ ডেকে আনছেন না তো!

সাম্প্রতিক গবেষণা রিপোর্টে প্রকাশ, সারাদিনের ক্লান্তি-চাপ দূর করতে রাতে টিভি দেখার অভ্যাসকে অবসর বিনোদনের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাতে জেগে থাকেন। এই মনোবিজ্ঞানের কারণেই মানুষ ঘুমের সঙ্গে সমঝোতা করে।

আরও পড়ুন: প্রতি রাতে অনাহারে ঘুমান প্রায় ৮৩ কোটি,  রিপোর্ট রাষ্ট্রসংঘের  

ঘুমের অনীহা জীবনে ডেকে আনে প্রাণঘাতী অসুখ। হার্টের সমস্যা, ওজন বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিসের বিপদ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস।

আরও পড়ুন: লেন্স পরেই ঘুম, সকালে অন্ধ যুবক!

তবে ঘুমের প্রতি অবহেলা শুধু আমাদের শারীরিকই নয়, মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি করে। এমনকী স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ওপরও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ফোনে কথা বলা, চ্যাট করা কিংবা ওটিটিতে ধারাবাহিক দেখার মাধ্যমে ঘুমের সঙ্গে বৈরিতা এতটাই ক্ষতিকারক যা আমাদের চিন্তারও অতীত। জোর করে রাত্রি জাগরণের কারণে শুধু অনিদ্রার মতো অসুখই নয়, লাগাতার কম ঘুম বহুধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি করে।

রিপোর্ট বলছে ভারতীয় মহিলারা পুরুষদের তুলনায় কম ঘুমোন। ঘরে-দফতরের কাজে মগ্ন হয়ে ঘুমের সময়ই পান না। ‘সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনে’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী– ১১ শতাংশ পুরুষ এবং ১৩ শতাংশ মহিলা ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান। রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলাদের পুরুষদের চেয়ে ১১ মিনিট বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। যদি পুরুষ ৭ ঘণ্টা ঘুমান একজন মহিলার ৭ ঘণ্টা ১১ মিনিট ঘুমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সম্পর্কের অবনতি

এক সরকারি ব্যাঙ্ক কর্মী দীপমালা বর্মা জানান, স্বামী সময় না দেওয়ার কারণে তাঁকে বাধ্য হয়েই স্মার্টফোনের আশ্রয় নিতে হয়। এই সময় তাঁর স্বামী অনলাইনে থাকেন। গভীর রাতে ফেরার পরও ভিডিও কলিং বা সোশ্যাল সাইটে ব্যস্ত থাকেন। ব্যক্তিগত কাজের কারণে তাঁর ফুরসতই থাকে না। যে কারণে আমাদের সম্পর্ক ক্রমে নষ্ট হচ্ছে।

মনস্তত্ত্ববিদদের বক্তব্য

মনোবিজ্ঞানী ডা. বিন্দা সিং জানান, যে সব মানুষ দিনের বেলায় খুব বেশি অবসর পাননা তারা সাধারণত রাতে বেশি জাগেন। তারা জোর করেই রাত জেগে টিভি অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় অতিবাহিত করেন। এরা মনে করেন এই সময়টা ‘এদের নিজস্ব সময়’- এই সময়ের ওপর তাঁদের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। কিন্তু রাতের নিদ্রাহীন বিনোদন শারীরিক ও মানসিকভাবে তাদের ক্রমশ নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

এর থেকে বাঁচার উপায়

এই বদভ্যাস থেকে বাঁচতে মানসিক শক্তি অর্জন করতে হবে, যাতে যা কিছু হয়ে যাক টিভি অফ রাখতে হবে, ফোন সরিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া ঘরের সমস্ত পর্দা বন্ধ করে দিন। এরফলে ঘুম এবং মস্তিষ্কের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে এবং আপনি আরামে ঘুমোতে পারবেন।

Tag :

Copyright © 2025 Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আপনার কি গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাস আছে? শরীরে বিপদ ডেকে আনছেন না তো!

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, শনিবার

আজকের ইঁদুর দৌড়ে বদলেছে জীবনপ্রবাহ– পরিবর্তন হয়েছে রোজকার রুটিনে।ফলে মানুষের নিয়মিত ঘুমের অভ্যাসেও ক্রমে পড়ছে আধুনিক জীবনের কুপ্রভাব। একে ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্রাস্টিনেশন’বলা হয় অর্থাৎ ঘুমকে জোর করে এড়িয়ে যাওয়া। এই প্রবণতা স্বাস্থ্যের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে মানবিক সম্পর্কের ভিত্তিকেও ধীরে ধীরে শিথিল করছে।

‘ইউএস ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনে’র এক সার্ভেতে জানা গেছে, ভারতে সারাদিন কাজের চাপ ও টেনশন কাটাতে নিছক অকারণেই রাত জাগার প্রবণতা ক্রমে বাড়ছে। বিশেষ করে ভারতীয় যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে জোর করে রাতে জেগে থাকা ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। ফলে ভারত স্লিপ ডিপ্রাইভড দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যদিও ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্রাস্টিনেশন’ একটি ইন্টারনেট প্রবাদ যা ২০১৬ সালে চিন প্রথম ব্যবহার করে। এর ওপর গবেষণা চলছে।

আরও পড়ুন: দেরি করে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন মহানবী সা.

আপনার কি গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাস আছে? শরীরে বিপদ ডেকে আনছেন না তো!

সাম্প্রতিক গবেষণা রিপোর্টে প্রকাশ, সারাদিনের ক্লান্তি-চাপ দূর করতে রাতে টিভি দেখার অভ্যাসকে অবসর বিনোদনের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাতে জেগে থাকেন। এই মনোবিজ্ঞানের কারণেই মানুষ ঘুমের সঙ্গে সমঝোতা করে।

আরও পড়ুন: প্রতি রাতে অনাহারে ঘুমান প্রায় ৮৩ কোটি,  রিপোর্ট রাষ্ট্রসংঘের  

ঘুমের অনীহা জীবনে ডেকে আনে প্রাণঘাতী অসুখ। হার্টের সমস্যা, ওজন বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিসের বিপদ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস।

আরও পড়ুন: লেন্স পরেই ঘুম, সকালে অন্ধ যুবক!

তবে ঘুমের প্রতি অবহেলা শুধু আমাদের শারীরিকই নয়, মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি করে। এমনকী স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ওপরও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ফোনে কথা বলা, চ্যাট করা কিংবা ওটিটিতে ধারাবাহিক দেখার মাধ্যমে ঘুমের সঙ্গে বৈরিতা এতটাই ক্ষতিকারক যা আমাদের চিন্তারও অতীত। জোর করে রাত্রি জাগরণের কারণে শুধু অনিদ্রার মতো অসুখই নয়, লাগাতার কম ঘুম বহুধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি করে।

রিপোর্ট বলছে ভারতীয় মহিলারা পুরুষদের তুলনায় কম ঘুমোন। ঘরে-দফতরের কাজে মগ্ন হয়ে ঘুমের সময়ই পান না। ‘সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনে’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী– ১১ শতাংশ পুরুষ এবং ১৩ শতাংশ মহিলা ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান। রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলাদের পুরুষদের চেয়ে ১১ মিনিট বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। যদি পুরুষ ৭ ঘণ্টা ঘুমান একজন মহিলার ৭ ঘণ্টা ১১ মিনিট ঘুমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সম্পর্কের অবনতি

এক সরকারি ব্যাঙ্ক কর্মী দীপমালা বর্মা জানান, স্বামী সময় না দেওয়ার কারণে তাঁকে বাধ্য হয়েই স্মার্টফোনের আশ্রয় নিতে হয়। এই সময় তাঁর স্বামী অনলাইনে থাকেন। গভীর রাতে ফেরার পরও ভিডিও কলিং বা সোশ্যাল সাইটে ব্যস্ত থাকেন। ব্যক্তিগত কাজের কারণে তাঁর ফুরসতই থাকে না। যে কারণে আমাদের সম্পর্ক ক্রমে নষ্ট হচ্ছে।

মনস্তত্ত্ববিদদের বক্তব্য

মনোবিজ্ঞানী ডা. বিন্দা সিং জানান, যে সব মানুষ দিনের বেলায় খুব বেশি অবসর পাননা তারা সাধারণত রাতে বেশি জাগেন। তারা জোর করেই রাত জেগে টিভি অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় অতিবাহিত করেন। এরা মনে করেন এই সময়টা ‘এদের নিজস্ব সময়’- এই সময়ের ওপর তাঁদের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। কিন্তু রাতের নিদ্রাহীন বিনোদন শারীরিক ও মানসিকভাবে তাদের ক্রমশ নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

এর থেকে বাঁচার উপায়

এই বদভ্যাস থেকে বাঁচতে মানসিক শক্তি অর্জন করতে হবে, যাতে যা কিছু হয়ে যাক টিভি অফ রাখতে হবে, ফোন সরিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া ঘরের সমস্ত পর্দা বন্ধ করে দিন। এরফলে ঘুম এবং মস্তিষ্কের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে এবং আপনি আরামে ঘুমোতে পারবেন।