পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্যের ডাক্তারদের নিয়ে আজ সোমবার ধনধান্য স্টেডিয়ামে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের গ্রিভান্স সেল অ্যান্ড রিড্রেসাল কমিটি। তিন হাজারেরও বেশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এমনকী পড়ুয়ারাও সেখানে উপস্থিত থাকবেন। অভয়া মঞ্চ এবং জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর সিংহভাগ সদস্য আজকের এই কনভেনশনে উপস্থিত হবেন। ‘চিকিৎসার অপর নাম সেবা’- এই শিরোনামেই আজ ডাক্তারদের সঙ্গে মুখোমুখি হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে এই ধরনের কনভেনশন নজিরবিহীন।
অভয়া কাণ্ডের প্রতিবাদে ডাক্তাররা ‘রিলে অনশন’ তুলে নেওয়ার পরে নবান্নে ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভয়া কাণ্ডের পরে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পরিচালন ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল ডাক্তারদের। সেই সময় আরজিকর -এর তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের বিচার চাইতেই ধর্মতলায় তৈরি হয়েছিল অভয়া মঞ্চ। সেই মঞ্চের কিছু ডাক্তার আজকের এই কনভেনশনে যোগ দিতে না চাইলেওসিংহভাগ ডাক্তাররাই সরকারের ডাকা আজকের এই আলোচনাসভায় যোগ দিচ্ছেন। আরজিকর কাণ্ডের পরবর্তী সময়ে রাজ্যের সরকারি এবং কয়েকটি বেসরকারি ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
এই বৈঠক নিয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামোয় যেসব সমস্যাগুলি রয়েছে, সেগুলি আলোচনায় উঠে আসবে? বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে থ্রেট কালচার নিয়ে যে সমস্যাগুলি রয়েছে তার সমাধান হবে কিনা? রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে যে রেফারেল সিস্টেম কাজ করার কথা ছিল, তা এখনও কার্যকর করা হয়নি। জানা গিয়েছে, সেই বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনায় প্রশ্ন তুলতে পারেন ডাক্তাররা।
সোমবারের বৈঠকের আগেই জেলার স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল গ্রিভান্স সেল অ্যান্ড রিড্রেসাল কমিটি। সেখানে বেশ কিছু অভাব অভিযোগের কথা শুনতে হয়েছে কমিটিকে। রাজ্যের হেলথ সার্ভিসের আওতায় থাকা সরকারি মেডিকেল কলেজ, ইএসআই এবং কলকাতা পুরসভার আওতায় থাকা ডাক্তারদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ডাক্তারদের পোস্টিংয়ে সমস্যা, সিনিয়র রেসিডেন্টদের বেতনবৃদ্ধি না হওয়া, মেডিকেল কলেজগুলিতে শৌচাগার, খেলার মাঠ ইত্যাদির অভাব, হোস্টেলের অব্যবস্থা ইত্যাদি সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে গ্রিভান্স কমিটির কাছে। যেগুলি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। অন্যদিক জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস -এর পক্ষ থেকে হাসপাতালে ডাক্তারদের শূণ্য পদ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এদিনের বৈঠকের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে — চিকিৎসার অপর নাম সেবা। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার কাছে ‘সেবা’ ধর্মটি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফেও কিছু বক্তব্য রয়েছে। সম্প্রতি এনআরএস মেডিকেল কলেজে চালু হয়েছে কিআর কোড যুক্ত সচিত্র পরিচয়পত্র। এতদিন পর্যন্ত হাজিরা খাতায় সইয়ের বদলে এই বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। নতুন মেশিনে ডাক্তাররা কিআর কোড যুক্ত সচিত্র পরিচয় ধরলে স্ক্যান করা যাবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিউটিতে থাকা সিনিয়র চিকিৎসকের অনুপস্থিতির জন্য এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। তারপরে হাসপাতালে হাজিরা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে যাঁরা নন-প্র্যাকটিসিং দেখিয়ে ভাতা নিয়েও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন, এরকম ১৯ জন ডাক্তার রয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের নজরদারিতে। এই প্রসঙ্গও থাকতে পারে আজকের আলোচনায়।