১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীলঙ্কার মতো ঝুঁকিতে বিশ্বের ডজনখানেক দেশ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২২, রবিবার
  • / 8

বিশেষ প্রতিবেদন: বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি উন্নয়নশীল দেশ ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং মুদ্রাস্ফীতিতে জর্জরিত। শ্রীলঙ্কা, লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম ও জাম্বিয়া এরই মধ্যে ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বেলারুশও খেলাপি হওয়ার পথে। তাছাড়া বিশ্বের ডজনখানেক দেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ দেশে দেশে বাড়ানো হয়েছে সুদের হার।

 

উচ্চ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি রয়েছে মন্দার আশঙ্কাও। ঋণ সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে আর্জেন্টিনার (১৫০ বিলিয়ন ডলার)। এরপরে রয়েছে ইকুয়েডর এবং মিশর (৪০ থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার)। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বিশ্ববাজার শান্ত হয় এবং আইএমএফের সমর্থন থাকে তাহলে এই সংকট এড়ানো সম্ভব। তবে প্রকৃতপক্ষেই দেশগুলি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঋণ সংকটের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা। দেশটির মুদ্রা পেসো এখন কালোবাজারে প্রায় ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে লেনদেন হচ্ছে। তাদের বৈদেশিক রিজার্ভ অত্যন্ত কম।

 

মরগান স্ট্যানলি এবং আমুন্ডির মতো হেভিওয়েট বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, রুশ আগ্রাসনের কারণে ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে ইউক্রেনকে। সেপ্টেম্বরে যখন ১.২ বিলিয়ন বন্ড পেমেন্টে বাকি ছিল তখন থেকেই তাদের সংকট শুরু হয়।

 

আফ্রিকায় ঋণ সংকটের প্রথম দিকে অবস্থান করছে তিউনিসিয়া। দেশটির প্রায় ১০ শতাংশ বাজেট ঘাটতি রয়েছে। দেশটিতে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া।

 

বর্তমানে ঘানার ঋণ-টু-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দেশটির মুদ্রার মূল্য চলতি বছরে এক চতুর্থাংশ কমে গেছে। ইতিমধ্যেই সুদ পরিশোধের জন্য অর্ধেকের বেশি ট্যাক্স রাজস্ব ব্যয় করছে ঘানা। মূল্যস্ফীতিও ৩০ শতাংশের কাছাকাছি।

 

মিশরের ঋণ-টু-জিডিপির অনুপাত প্রায় ৯৫ শতাংশ। ফান্ড ফার্ম এফআইএম পার্টনার্সের মতে, মিশরের ১০০ বিলিয়ন হার্ড কারেন্সি ঋণ রয়েছে যা আগামী পাঁচ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৩.৩ বিলিয়ন বন্ড রয়েছে।

 

কেনিয়াও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটি মোট রাজস্ব আয়ের ৩০ শতাংশ ব্যয় করে সুদ পরিশোধে। এর বন্ডগুলো প্রায় অর্ধেক মূল্য হারিয়েছে ও বর্তমানে এটির পুঁজিবাজারে কোনও প্রবেশাধিকার নেই।

 

পাকিস্তান চলতি সপ্তাহে আইএমএফের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছে। তবে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। পাকিস্তানি রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে। নতুন সরকারকে এখন দ্রুত ব্যয় কমাতে হবে কারণ দেশটি মোট রাজস্বের ৪০ শতাংশ সুদ দিতে ব্যয় করে।

 

এছাড়া ইথিওপিয়া, এল সালভাদার, বেলারুশ, ইকুয়েডর ও নাইজেরিয়ার মতো দেশও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশগুলো যেকোনও সময় ঋণখেলাপিতে পরিণত হতে পারে। দেখা দিতে পারে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। দেশগুলির হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শ্রীলঙ্কার মতো ঝুঁকিতে বিশ্বের ডজনখানেক দেশ

আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২২, রবিবার

বিশেষ প্রতিবেদন: বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি উন্নয়নশীল দেশ ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং মুদ্রাস্ফীতিতে জর্জরিত। শ্রীলঙ্কা, লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম ও জাম্বিয়া এরই মধ্যে ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বেলারুশও খেলাপি হওয়ার পথে। তাছাড়া বিশ্বের ডজনখানেক দেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ দেশে দেশে বাড়ানো হয়েছে সুদের হার।

 

উচ্চ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি রয়েছে মন্দার আশঙ্কাও। ঋণ সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে আর্জেন্টিনার (১৫০ বিলিয়ন ডলার)। এরপরে রয়েছে ইকুয়েডর এবং মিশর (৪০ থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার)। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বিশ্ববাজার শান্ত হয় এবং আইএমএফের সমর্থন থাকে তাহলে এই সংকট এড়ানো সম্ভব। তবে প্রকৃতপক্ষেই দেশগুলি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঋণ সংকটের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা। দেশটির মুদ্রা পেসো এখন কালোবাজারে প্রায় ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে লেনদেন হচ্ছে। তাদের বৈদেশিক রিজার্ভ অত্যন্ত কম।

 

মরগান স্ট্যানলি এবং আমুন্ডির মতো হেভিওয়েট বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, রুশ আগ্রাসনের কারণে ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে ইউক্রেনকে। সেপ্টেম্বরে যখন ১.২ বিলিয়ন বন্ড পেমেন্টে বাকি ছিল তখন থেকেই তাদের সংকট শুরু হয়।

 

আফ্রিকায় ঋণ সংকটের প্রথম দিকে অবস্থান করছে তিউনিসিয়া। দেশটির প্রায় ১০ শতাংশ বাজেট ঘাটতি রয়েছে। দেশটিতে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া।

 

বর্তমানে ঘানার ঋণ-টু-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দেশটির মুদ্রার মূল্য চলতি বছরে এক চতুর্থাংশ কমে গেছে। ইতিমধ্যেই সুদ পরিশোধের জন্য অর্ধেকের বেশি ট্যাক্স রাজস্ব ব্যয় করছে ঘানা। মূল্যস্ফীতিও ৩০ শতাংশের কাছাকাছি।

 

মিশরের ঋণ-টু-জিডিপির অনুপাত প্রায় ৯৫ শতাংশ। ফান্ড ফার্ম এফআইএম পার্টনার্সের মতে, মিশরের ১০০ বিলিয়ন হার্ড কারেন্সি ঋণ রয়েছে যা আগামী পাঁচ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৩.৩ বিলিয়ন বন্ড রয়েছে।

 

কেনিয়াও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটি মোট রাজস্ব আয়ের ৩০ শতাংশ ব্যয় করে সুদ পরিশোধে। এর বন্ডগুলো প্রায় অর্ধেক মূল্য হারিয়েছে ও বর্তমানে এটির পুঁজিবাজারে কোনও প্রবেশাধিকার নেই।

 

পাকিস্তান চলতি সপ্তাহে আইএমএফের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছে। তবে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। পাকিস্তানি রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে। নতুন সরকারকে এখন দ্রুত ব্যয় কমাতে হবে কারণ দেশটি মোট রাজস্বের ৪০ শতাংশ সুদ দিতে ব্যয় করে।

 

এছাড়া ইথিওপিয়া, এল সালভাদার, বেলারুশ, ইকুয়েডর ও নাইজেরিয়ার মতো দেশও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশগুলো যেকোনও সময় ঋণখেলাপিতে পরিণত হতে পারে। দেখা দিতে পারে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। দেশগুলির হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই।