১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাইকোর্টেই আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত  দুজনকে গ্রেফতার ইডির!

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 4

পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে নজিরবিহীন ঘটনার নিদর্শন দেখা গেল। এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ মোতাবেক  এজলাস থেকেই গ্রেফতার করা হল  আর্থিক দুর্নীতি মামলায় দুই অভিযুক্তকে। হঠাৎ এমন  ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলেন দুই অভিযুক্ত।

এজলাস  থেকে ওই দুই অভিযুক্তদের নীচে নিয়ে এসে সোজা গাড়িতে তুললেন ইডি  অফিসারেরা। অভিযুক্তদের জামিন হয়ে গিয়েছে অথচ জানানো হয়নি এই মামলার কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি-কে। এমন দাবি নিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে আদালত থেকেই গ্রেফতার করা হল দুই ব্যক্তিকে। আদালত সুত্রে প্রকাশ,  হাওড়ার শিবপুরে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি এবং গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছিল গত বছরের অক্টোবর মাসে। প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশ সেই টাকা উদ্ধার করলেও পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে ইডি। সেই মামলায় পরে নিম্ন আদালতে জামিন পেয়ে যান শৈলেশ কুমার পান্ডে ও প্রসেনজিত্‍ দাস নামে দুই ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে হাজির ছিলেন দুজনেই। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সিঙ্গল বেঞ্চ ইডিকে অবিলম্বে দুজনকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়।

এরপর কার্যত নজিরবিহীনভাবে এজলাস থেকে গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। এদিন বিকেল তিনটের সময় নিম্ন আদালতে পেশ করা হয় তাঁদের।গত বছর অক্টোবর মাসে শৈলেশ কুমার পান্ডে,  প্রসেনজিৎ দাস নামে হাওড়ার শিবপুরের ওই ব্যবসায়ীর গাড়ি ও ফ্ল্যাট মিলিয়ে উদ্ধার হয় আট কোটি নগদ টাকা। সেই সঙ্গে সোনা, হিরের গয়নাও উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নরেন্দ্রপুর শাখার লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় ব্যাঙ্কের তরফে হেয়ার স্ট্রিট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর ওই অ্যাকাউন্টের দুই হোল্ডারকে ডেকে পাঠায় পুলিশ। তাঁদের কথাবার্তায় অসঙ্গতি দেখেই শুরু হয় তদন্ত।

ওই ব্যাঙ্কের নরেন্দ্রপুর শাখার দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৭ কোটি টাকার লেনদেনের হদিশ পায় কলকাতা পুলিশ।পরবর্তী তদন্তে আরও ১৭টি ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলে। যার মধ্যে ৬’টি খতিয়ে দেখে নতুন করে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছিল কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি তদন্তকারী শাখা। মোট ২০৭ কোটি টাকা লেনদেনের হদিশ মিলেছিল। মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিলেন পান্ডে ব্রাদার্স অর্থাৎ শৈলেশ পান্ডে, তাঁর দাদা অরবিন্দ পান্ডে ও ভাই রোহিত পান্ডে।গত ২১ জানুয়ারি তাঁদের জামিন হয় নিম্ন আদালতে, কিন্তু তা ইডিকে জানানো হয়নি। এই অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি।

এদিন দীর্ঘ শুনানির পর এজলাসে ডেকে পাঠানো হয় অভিযুক্তদের। অর্ডারের শেষ লাইনে বিচারপতি লেখেন, -‘চাইলে এজলাস থেকেই তাঁদের গ্রেফতার করতে পারে ইডি’। এরপর এজলাস থেকে প্রচুর পুলিশি নিরাপত্তায় গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য পড়ে যায় হাইকোর্ট চত্বরে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হাইকোর্টেই আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত  দুজনকে গ্রেফতার ইডির!

আপডেট : ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, বৃহস্পতিবার

পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে নজিরবিহীন ঘটনার নিদর্শন দেখা গেল। এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ মোতাবেক  এজলাস থেকেই গ্রেফতার করা হল  আর্থিক দুর্নীতি মামলায় দুই অভিযুক্তকে। হঠাৎ এমন  ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলেন দুই অভিযুক্ত।

এজলাস  থেকে ওই দুই অভিযুক্তদের নীচে নিয়ে এসে সোজা গাড়িতে তুললেন ইডি  অফিসারেরা। অভিযুক্তদের জামিন হয়ে গিয়েছে অথচ জানানো হয়নি এই মামলার কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি-কে। এমন দাবি নিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে আদালত থেকেই গ্রেফতার করা হল দুই ব্যক্তিকে। আদালত সুত্রে প্রকাশ,  হাওড়ার শিবপুরে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি এবং গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছিল গত বছরের অক্টোবর মাসে। প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশ সেই টাকা উদ্ধার করলেও পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে ইডি। সেই মামলায় পরে নিম্ন আদালতে জামিন পেয়ে যান শৈলেশ কুমার পান্ডে ও প্রসেনজিত্‍ দাস নামে দুই ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে হাজির ছিলেন দুজনেই। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সিঙ্গল বেঞ্চ ইডিকে অবিলম্বে দুজনকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়।

এরপর কার্যত নজিরবিহীনভাবে এজলাস থেকে গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। এদিন বিকেল তিনটের সময় নিম্ন আদালতে পেশ করা হয় তাঁদের।গত বছর অক্টোবর মাসে শৈলেশ কুমার পান্ডে,  প্রসেনজিৎ দাস নামে হাওড়ার শিবপুরের ওই ব্যবসায়ীর গাড়ি ও ফ্ল্যাট মিলিয়ে উদ্ধার হয় আট কোটি নগদ টাকা। সেই সঙ্গে সোনা, হিরের গয়নাও উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নরেন্দ্রপুর শাখার লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় ব্যাঙ্কের তরফে হেয়ার স্ট্রিট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর ওই অ্যাকাউন্টের দুই হোল্ডারকে ডেকে পাঠায় পুলিশ। তাঁদের কথাবার্তায় অসঙ্গতি দেখেই শুরু হয় তদন্ত।

ওই ব্যাঙ্কের নরেন্দ্রপুর শাখার দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৭ কোটি টাকার লেনদেনের হদিশ পায় কলকাতা পুলিশ।পরবর্তী তদন্তে আরও ১৭টি ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলে। যার মধ্যে ৬’টি খতিয়ে দেখে নতুন করে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছিল কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি তদন্তকারী শাখা। মোট ২০৭ কোটি টাকা লেনদেনের হদিশ মিলেছিল। মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিলেন পান্ডে ব্রাদার্স অর্থাৎ শৈলেশ পান্ডে, তাঁর দাদা অরবিন্দ পান্ডে ও ভাই রোহিত পান্ডে।গত ২১ জানুয়ারি তাঁদের জামিন হয় নিম্ন আদালতে, কিন্তু তা ইডিকে জানানো হয়নি। এই অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি।

এদিন দীর্ঘ শুনানির পর এজলাসে ডেকে পাঠানো হয় অভিযুক্তদের। অর্ডারের শেষ লাইনে বিচারপতি লেখেন, -‘চাইলে এজলাস থেকেই তাঁদের গ্রেফতার করতে পারে ইডি’। এরপর এজলাস থেকে প্রচুর পুলিশি নিরাপত্তায় গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য পড়ে যায় হাইকোর্ট চত্বরে।