১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালি পেটে লেখাপড়া হয় না, স্কুলে আসা বন্ধ করছে শ্রীলঙ্কার শিশুরা

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ২১ জানুয়ারী ২০২৩, শনিবার
  • / 7

 

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক:বাড়িতে খাবার নেই, খালি পেটে লেখাপড়া হয় না। তাই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার শিশুরা। স্কুলও বলছে, খাবার না থাকলে বাচ্চাদের পাঠানোর দরকার নেই।

প্রবল অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে, দেশটির নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো দিনে এখন একবার কিছু সবজি দিয়ে ভাত খাচ্ছে। কোনো কোনো দিন তা-ও জুটছে না। বাড়িতে খাবার নেই। চাল-ডাল কেনার পয়সা নেই। এই অবস্থায় বাচ্চাদের কী করে স্কুলে পাঠাবেন তারা

এমনই করুন পরিস্থিতির কথা জানালেন শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি বস্ত্র কারখানার এক কর্মী নাদিকা প্রিয়দর্শিনী। তিনিও বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। কারণ, বাড়িতে খাবার নেই।

প্রিয়দর্শিনী জানান, স্কুলে কিছু বাচ্চা টিফিনের ব্রেকে খাবার খাচ্ছে। কিন্তু আমার বাচ্চাদের কাছে কোনো খাবার নেই। তাই আমি কী করে ওদের স্কুলে পাঠাব?

তার ১৩ বছর বয়সি ছেলে তা-ও জোর করে স্কুলে গেছিল। সে বলেছিল, খালি পেটেই সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ছয় বছরের মেয়ে কী করে যাবে? ওই বাচ্চা মেয়ে তো খিদে ভুলে পড়তে পারে না।

প্রিয়দর্শিনী একা নন, একই অবস্থার মুখে পড়েছেন অনেকে। অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের চাকরি গেছে, ব্যবসা লাটে উঠেছে। খাবার, ওষুধ, জ্বালানি কেনার পয়সা নেই বহু পরিবারের। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় শূন্য। তাই বিদেশ থেকে দানাশস্য আমদানি করা যাচ্ছে না। ২০২১ সালে তড়িঘড়ি করে সরকার অর্গানিক কৃষির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাই এই বছর ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ফসল কম হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় খাদ্যশস্যের উপর মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল ৯৪ শতাংশের বেশি।

খাবার পাওয়া যাচ্ছে না, পেলেও দাম খুবই বেশি, তাই সবচেয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন প্রিয়দর্শিনীর মতো গরিব মানুষেরা। তারা তাদের প্রতিদিনের আয়ের উপরই বেঁচে থাকেন। ফলে এখন তাদের কাছে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। গতমাসে শ্রীলঙ্কার ৩৬ শতাংশ পরিবার নিয়মিত খাবার পায়নি।

গত জুনে ইউনিসেফ জানিয়েছিল, শ্রীলঙ্কার ৫৬ হাজার বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগছে।

খেতে না পাওয়ার জন্য কতজন বাচ্চা স্কুলে যেতে পারছে না, সেই সংখ্যাতত্ত্ব সরকার দেয়নি। তবে গত জুন মাসে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট বলছে, যে সব স্কুলে খাবার দেয়া হয় না, সেখানে বাচ্চারা যাচ্ছে না।

ইউনিসেফের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কিছু এলাকায় স্কুলে বাচ্চাদের যাওয়ার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশে।

শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব তারা ডি মেল বলেছেন, খাবার পেলেই বাচ্চারা স্কুল যাবে। না হলে গ্রামের দিকে বা যে সব স্কুলে গরিব বাচ্চারা পড়ে, সেখানে তারা খালি পেটে স্কুলে যাবে না।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

খালি পেটে লেখাপড়া হয় না, স্কুলে আসা বন্ধ করছে শ্রীলঙ্কার শিশুরা

আপডেট : ২১ জানুয়ারী ২০২৩, শনিবার

 

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক:বাড়িতে খাবার নেই, খালি পেটে লেখাপড়া হয় না। তাই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার শিশুরা। স্কুলও বলছে, খাবার না থাকলে বাচ্চাদের পাঠানোর দরকার নেই।

প্রবল অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে, দেশটির নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো দিনে এখন একবার কিছু সবজি দিয়ে ভাত খাচ্ছে। কোনো কোনো দিন তা-ও জুটছে না। বাড়িতে খাবার নেই। চাল-ডাল কেনার পয়সা নেই। এই অবস্থায় বাচ্চাদের কী করে স্কুলে পাঠাবেন তারা

এমনই করুন পরিস্থিতির কথা জানালেন শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি বস্ত্র কারখানার এক কর্মী নাদিকা প্রিয়দর্শিনী। তিনিও বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। কারণ, বাড়িতে খাবার নেই।

প্রিয়দর্শিনী জানান, স্কুলে কিছু বাচ্চা টিফিনের ব্রেকে খাবার খাচ্ছে। কিন্তু আমার বাচ্চাদের কাছে কোনো খাবার নেই। তাই আমি কী করে ওদের স্কুলে পাঠাব?

তার ১৩ বছর বয়সি ছেলে তা-ও জোর করে স্কুলে গেছিল। সে বলেছিল, খালি পেটেই সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ছয় বছরের মেয়ে কী করে যাবে? ওই বাচ্চা মেয়ে তো খিদে ভুলে পড়তে পারে না।

প্রিয়দর্শিনী একা নন, একই অবস্থার মুখে পড়েছেন অনেকে। অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের চাকরি গেছে, ব্যবসা লাটে উঠেছে। খাবার, ওষুধ, জ্বালানি কেনার পয়সা নেই বহু পরিবারের। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় শূন্য। তাই বিদেশ থেকে দানাশস্য আমদানি করা যাচ্ছে না। ২০২১ সালে তড়িঘড়ি করে সরকার অর্গানিক কৃষির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাই এই বছর ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ফসল কম হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় খাদ্যশস্যের উপর মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল ৯৪ শতাংশের বেশি।

খাবার পাওয়া যাচ্ছে না, পেলেও দাম খুবই বেশি, তাই সবচেয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন প্রিয়দর্শিনীর মতো গরিব মানুষেরা। তারা তাদের প্রতিদিনের আয়ের উপরই বেঁচে থাকেন। ফলে এখন তাদের কাছে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। গতমাসে শ্রীলঙ্কার ৩৬ শতাংশ পরিবার নিয়মিত খাবার পায়নি।

গত জুনে ইউনিসেফ জানিয়েছিল, শ্রীলঙ্কার ৫৬ হাজার বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগছে।

খেতে না পাওয়ার জন্য কতজন বাচ্চা স্কুলে যেতে পারছে না, সেই সংখ্যাতত্ত্ব সরকার দেয়নি। তবে গত জুন মাসে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট বলছে, যে সব স্কুলে খাবার দেয়া হয় না, সেখানে বাচ্চারা যাচ্ছে না।

ইউনিসেফের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কিছু এলাকায় স্কুলে বাচ্চাদের যাওয়ার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশে।

শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব তারা ডি মেল বলেছেন, খাবার পেলেই বাচ্চারা স্কুল যাবে। না হলে গ্রামের দিকে বা যে সব স্কুলে গরিব বাচ্চারা পড়ে, সেখানে তারা খালি পেটে স্কুলে যাবে না।