পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ফ্রান্স— যার সংস্কূতির সঙ্গে জড়িয়ে নগ্নতা, যৌনতা। ফ্রান্সেরই সংবাদপত্র ‘শার্লি এবদো’তে নবী সা.-র ব্যঙ্গ কার্টুন ছাপা হয়। সেই ফ্রান্সেই আরও একবার জোর আওয়াজ উঠল শালীন পোশাক পরার পক্ষে। উঠল ইসলামি পোশাক পরে নিজেকে আবৃত রাখার জোরালো দাবি। সেখানে পশ্চিমা অনুসারীদের উদ্দেশ্যে বার্তা—নগ্নতা তোমাদের অধিকার হলে আমাদেরও অধিকার রয়েছে শালীন পোশাকে নিজের শরীর আবৃত রাখার। আর তাই হিজাবের মতো ইসলামি, শালীন পোশাক বেছে নিতে কোনও আপত্তি নেই। আমাদের একটাই বার্তা, আমরা তোমাদের মতো (পশ্চিমাপন্থী) খোলামেলা পোশাক পরে শরীর প্রদর্শন করব না। আব্রুতাই আমাদের পছন্দ। সেই অধিকার আমাদের দিতে হবে। আর নিজেদের এই অধিকারের দাবিতে ফ্রান্সের একটি নামী ফ্যাশন সংস্থা ‘মেরাচি’ একটি বিজ্ঞাপন-ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে। সেখানে ঐতিহাসিক আইফেল টাওয়ারকে (Eiffel Tower) হিজাব পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বার্তা স্পষ্ট, আইফেল টাওয়ারেরও পছন্দের পোশাক হিজাব। নবী সা.-র ব্যঙ্গ কার্টুনে মদদ দেওয়া, স্কুলে হেডস্কার্ফ-আবায়া নিষিদ্ধ করা ফ্রান্স প্রশাসনের যে এই বিজ্ঞাপন ভিডিয়ো বিষ-নজরে পড়বে তা বলাইবাহুল্য। ফরাসি রাজনৈতিক দলগুলি এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। যদিও বিজ্ঞাপন সংস্থা তাদের অবস্থানে অনড়। তাদের বক্তব্য, ইসলামি হেডস্কার্ফ পরার স্বাধীনতা প্রচার করাই তাদের উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: Wolf Prize প্রত্যাখ্যান করলেন পাকিস্তানি স্থপতি Yasmeen Lari
যদিও ফ্রান্সের রাজনৈতিক দলগুলি এটিকে ‘বিপজ্জনক’ প্রবণতা ও ‘ফরাসি মূল্যবোধের পরিপন্থী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। বিজ্ঞাপন ভিডিয়োটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে তার ক্যাপশনে ‘মেরাচি’ লিখেছে, ‘স্পটেড: দ্য আইফেল টাওয়ার উয়ারিং মেরাচি, মাশআল্লাহ! লুকস লাইক সি যাস্ট জয়েনড দ্য মডেস্ট ফ্যাশন কমিউনিটি’ (মাশআল্লাহ, আইফেল টাওয়ারও (Eiffel Tower) মেরাচি পরেছে, দেখে মনে হচ্ছে সেও সবেমাত্র আব্রু তথা শালীন পোশাক পরিহীতা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছে)। বিজ্ঞাপনটি ফ্রান্সে হইচই ফেলে দিয়েছে। ‘আধুনিকা’দের বক্তব্য, বিজ্ঞাপনটির সঙ্গে ইসলামি চিন্তাভাবনা জড়িয়ে রয়েছে এটা কাম্য নয়। ডানপন্থী দল ‘ন্যাশনাল র্যালি পার্টি’র ফরাসি এমপি লিসেট পোলেট এই বিজ্ঞাপনটিকে ফ্রান্সের ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্য’র পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বিজ্ঞাপনটি গ্রহণযোগ্য নয়। আইফেল টাওয়ার হচ্ছে ফ্রান্সের প্রতীক। মেরাচি ব্র্যান্ড সেটিকে একটি ‘উস্কানিমূলক’ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হাইজ্যাক করেছে। ফ্রান্সের প্রতীককে (আইফেল টাওয়ার) (Eiffel Tower) তারা ইসলামি পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। তাঁর দলের সহকর্মী জেরোম বুইসনও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, বিজ্ঞাপনটি একটি ‘ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক প্রকল্প’ এবং একটি ‘অগ্রহণযোগ্য উস্কানি’। সমাজকর্মী ফিলিপ মুয়ার আবার আরও একধাপ এগিয়ে ফ্রান্সে মেরাচির আউটলেটগুলি(দোকান) বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সংস্থার ওয়েবসাইটটিও অবিলম্বে ব্লক করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তবে ফ্রান্সের অনেকেই বিজ্ঞাপনটির প্রশংসা করেছেন।বিজ্ঞাপনটিকে তাঁরা একটি সৃজনশীল পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। তাঁদের মতে, এই বিজ্ঞাপনটি যেন কথা বলছে। জানান দিচ্ছে,মুসলিম মহিলাদের ধর্মীয় অনুশীলনের বিষয়ে ফ্রান্সের নীতিগুলিকে চ্যালেঞ্জ করার।
আরও পড়ুন: কানাডার ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন Mark Carney
উল্লেখ্য, ইসলামি পোশাকের ক্ষেত্রে ফ্রান্সে বিধিনিষেধ রয়েছে। ২০০৪ সালে ফ্রান্স পাবলিক স্কুলে হিজাব সহ সুস্পষ্ট ধর্মীয় প্রতীক পরিধান নিষিদ্ধ করেছিল। ২০১০ সালে ফ্রান্স সরকার প্রকাশ্য জায়গায় বা পাবলিক প্লেসে বোরকা এবং নিকাবের মতো পোশাক নিষিদ্ধ করতে একটি আইন পাস করে। আইনটি ২০১৪ সালে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতও বহাল রাখে। ফরাসি সরকার পরিচালিত স্কুলগুলিতে আবায়া ও ঢিলেঢালা পোশাক নিষিদ্ধ করেছে।