পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবায় (State Electricity Service) বিপ্লব এসেছে আগেই। লোডশেডিং শব্দটি এখন প্রায় অতীত। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন তো বটেই, উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিও। তবে রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবার (State Electricity Service) খরচ আরও কমবে, যখন বীরভূমের দেউচা পাচামিতে উৎপাদন পুরো মাত্রায় শুরু হবে। বুধবার বিধানসভায় বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে আলোচনায় এই কথা জানান বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
মন্ত্রী জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে ৪১১৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকারও বেশি। এদিন বিধানসভায় বিদ্যুৎ দফতর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলেও, সেই আলোচনায় বিরোধীরা উপস্থিত ছিলেন না। আলোচনায় অংশ নেন শাসক দলের চার বিধায়ক, অপূর্ব সরকার, শ্যামল মণ্ডল, সমীরকুমার জানা ও মুকুটমণি অধিকারী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ পরিষেবায় রেকর্ড উন্নতি
আলোচনায় অংশ নিয়ে শাসক দলের বিধায়করা রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবার (State Electricity Service) প্রশংসা করেন। বিধায়ক অপূর্ব সরকার জানান, রাজ্যের ৪ শতাংশ রাজস্ব আসে বিদ্যুৎ দফতর থেকে। ইতিমধ্যেই ১৬.২৩ লক্ষ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সরকার নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবার ব্যবস্থা করেছে, পাশাপাশি বেঙ্গল সামিট থেকে বেশ কয়েকটি নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রস্তাব এসেছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘ওরা জানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলো জ্বালাবেন, তাই তারা পালিয়ে গেছে। পশ্চিমবাংলার অভিধান থেকে ‘লোডশেডিং’ শব্দটি মুছে গিয়েছে। তিনি জানান, ২০১১ সালে রাজ্যে সাবস্টেশনের সংখ্যা ছিল ৪২২, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯৩৬। বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনও সমস্যা যাতে না হয়, সেই লক্ষ্যে ২৪ ঘণ্টার বিদ্যুৎ পরিষেবা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।
রাজ্যে সস্তায় বিদ্যুৎ, কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ
বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, বাংলার বিদ্যুতের দাম দেশের তুলনায় অনেক কম। রাজ্য বিদ্যুতের (State Electricity Service) দামের নিরিখে ১৭তম স্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিন সরকারগুলোর থেকেও আমরা কম দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। এমনকি, বাম শাসিত কেরলের থেকেও বাংলার বিদ্যুৎ সস্তা।’ কয়লার দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যুতের দাম এক পয়সাও বাড়াননি, অথচ বিরোধীরা কেবলমাত্র সমালোচনায় ব্যস্ত বলে কটাক্ষ করেন তিনি। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১৫০০ কোটি টাকা পাওনা আছি। কিন্তু কেন্দ্র টাকা না দিলেও প্রকল্প থেমে থাকবে না, কারণ রাজ্যে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ: নবীকরণযোগ্য শক্তিতে জোর
মন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার নবীকরণযোগ্য শক্তির ওপর জোর দিচ্ছে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন এখন ৩১৭.৭ মেগাওয়াট, এবং আরও কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে; বক্রেশ্বর ও সাঁওতালডিহিতে নতুন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। রাজ্যে বর্তমানে ১৮৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে আরও বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু হবে।বিদ্যুৎ পরিষেবার (State Electricity Service) পরিকাঠামো আরও মজবুত করতে আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল সংযোগ বাড়ানো হচ্ছে, যাতে ঝড়বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন না হয়। রাজ্যজুড়ে ১,১৮,১৭৮ কিলোমিটার লাইন তৈরি হচ্ছে, যা সম্পন্ন হলে বিদ্যুৎ পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।
নতুন প্রকল্প ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
এদের নতুন প্রকল্প এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে অরূপ বিশ্বাস বলেন, দেউচা পাচামিতে কয়লা উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের দাম আরও কমবে। ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে মাত্র ৭৪ পয়সা ইউনিট প্রতি চার্জ লাগবে। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়ছে সেই সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে চার্জিং সেন্টারেরও। এদিন অরূপ বিশ্বাস ঘোষণা করেছেন, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ ই-ভেহিকেল চার্জিং পয়েন্ট তৈরি হবে। এছাড়াও মন্ত্রী জানান আগামী দিনে থার্মাল পাওয়ার প্রোজেক্টে ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি নতুন প্রকল্প হচ্ছে।
‘বাংলা আগামী দিনে সবাইকে বিদ্যুৎ দেবে’
বিদ্যুৎ পরিষেবায় (State Electricity Service) বাংলা এখন স্বনির্ভর, শুধু রাজ্যবাসীই নয়, ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে পশ্চিমবঙ্গ। এদিনের আলোচনায় এই আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। সর্বশেষে, বিধানসভার সদস্যদের অনুমোদনে ২০২৫-২৬ সালের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যয় বরাদ্দ পাশ হয়ে যায়।