১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উগ্র ডানপন্থী নেতা পালুদানের শাস্তির দাবি উঠছে

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২২ জানুয়ারী ২০২৩, রবিবার
  • / 11

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: স্টকহোমে অবস্থিত তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র কুরআন পুড়িয়েছে সুইডেনের উগ্র ডানপন্থী নেতা রাসমাস পালুদান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তেতে উঠেছে ইসলামি বিশ্ব। মুসলিমরা উগ্রবাদী নেতা পালুদানের কঠোর শাস্তির দাবি তুলছেন। সুইডিশ সরকারের নজরদারিতে কুরআন অবমাননার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বেশকিছু মুসলিম দেশ।

 

কুরআন পোড়ানোর পর উগ্র ডানপন্থী পালুদান বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়, তাহলে আপনাকে অন্য কোথাও থাকতে হবে।’ তাৎক্ষণিকভাবে এক বিবৃতিতে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানায় তুরস্ক। দেশটির বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলার ঘটনায় সবচেয়ে কঠিন ভাষায় নিন্দা জানাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে এই ইসলাম বিদ্বেষী কাজের অনুমতি দেওয়া সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’

 

তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু সুইডিশ কর্তৃপক্ষের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি বর্ণবাদী তৎপরতা। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এ ঘটনাকে ‘বিদ্বেষমূলক অপরাধ’ আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যাবতীয় সতর্কতা সত্ত্বেও এই পদক্ষেপের অনুমতি দেওয়া ইসলামফোবিয়াকে উৎসাহিত করছে। পবিত্র মূল্যবোধের ওপর আঘাত কোনও স্বাধীনতা নয়, এটি আধুনিক বর্বরতা।’

 

উল্লেখ্য, গত বছরের রমযান মাস চলাকালে উগ্র ডানপন্থী নেতা পালুদান এক বিদ্বেষ ভাষণে মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত হানার ঘোষণা করেছিলেন। ৪১ বছরের ওই ‘বর্ণবাদী’ নেতা বলেছিলেন, সুইডেনের সব মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে গিয়ে তিনি নিয়মিত কুরআন পোড়াবেন। কথা মতোই কুরআন পুড়িয়েছিলেন তিনি। এরপর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুইডেনে ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। গ্রেফতার হয়েছিলেন ৪০ জন। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউরোপের ইসলাম বিদ্বেষী নেতাদের তালিকায় সবার ওপরে নাম রয়েছে রাসমাস পালুদানের। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দুই বছরের জন্য সুইডেনে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এরপর জার্মান সরকারও পালুদানকে দেশে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল।

 

এদিকে, সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পল জনসনের পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করেছে তুরস্ক। আগামী শুক্রবার তুরস্ক সফরে আসার কথা ছিল সুইডিশ মন্ত্রীর। স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করার একদিন পর শনিবার তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার বলেন, স্টকহোমে তুরস্ক-বিরোধী পরিকল্পিত বিক্ষোভের কারণে এ সফর বাতিল করা হয়েছে। ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আঙ্কারাকে তার আপত্তি থেকে সরানোই ছিল জনসনের তুরস্ক সফরের লক্ষ্য।

 

সম্প্রতি সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদান নিয়ে আপত্তি তোলে আঙ্কারা। এরপর থেকে দুই দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরইমধ্যে স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের সামনে দেশটির উগ্র ডানপন্থীদের বিক্ষোভের অনুমতি দেয় সুইডেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় তুরস্ক। তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার বলেন, ‘এই মুহূর্তে সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তুরস্ক সফর তাৎপর্য হারিয়েছে। তাই আমরা সফরটি বাতিল করেছি।’ সুইডেন তাদের ভূখণ্ডে তুরস্ক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে আঙ্কারা। উল্লেখ্য, ১৪ জানুয়ারি সুইডেনে তুর্কি দূতাবাসের সামনে ডানপন্থীদের বিক্ষোভের অনুমতি দেয় সুইডেন। পরিকল্পিত এই বিক্ষোভকে ‘ঘৃণা প্রচার’ বলে নিন্দা জানান তুর্কি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

উগ্র ডানপন্থী নেতা পালুদানের শাস্তির দাবি উঠছে

আপডেট : ২২ জানুয়ারী ২০২৩, রবিবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: স্টকহোমে অবস্থিত তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র কুরআন পুড়িয়েছে সুইডেনের উগ্র ডানপন্থী নেতা রাসমাস পালুদান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তেতে উঠেছে ইসলামি বিশ্ব। মুসলিমরা উগ্রবাদী নেতা পালুদানের কঠোর শাস্তির দাবি তুলছেন। সুইডিশ সরকারের নজরদারিতে কুরআন অবমাননার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বেশকিছু মুসলিম দেশ।

 

কুরআন পোড়ানোর পর উগ্র ডানপন্থী পালুদান বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়, তাহলে আপনাকে অন্য কোথাও থাকতে হবে।’ তাৎক্ষণিকভাবে এক বিবৃতিতে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানায় তুরস্ক। দেশটির বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলার ঘটনায় সবচেয়ে কঠিন ভাষায় নিন্দা জানাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে এই ইসলাম বিদ্বেষী কাজের অনুমতি দেওয়া সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’

 

তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু সুইডিশ কর্তৃপক্ষের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি বর্ণবাদী তৎপরতা। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এ ঘটনাকে ‘বিদ্বেষমূলক অপরাধ’ আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যাবতীয় সতর্কতা সত্ত্বেও এই পদক্ষেপের অনুমতি দেওয়া ইসলামফোবিয়াকে উৎসাহিত করছে। পবিত্র মূল্যবোধের ওপর আঘাত কোনও স্বাধীনতা নয়, এটি আধুনিক বর্বরতা।’

 

উল্লেখ্য, গত বছরের রমযান মাস চলাকালে উগ্র ডানপন্থী নেতা পালুদান এক বিদ্বেষ ভাষণে মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত হানার ঘোষণা করেছিলেন। ৪১ বছরের ওই ‘বর্ণবাদী’ নেতা বলেছিলেন, সুইডেনের সব মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে গিয়ে তিনি নিয়মিত কুরআন পোড়াবেন। কথা মতোই কুরআন পুড়িয়েছিলেন তিনি। এরপর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুইডেনে ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। গ্রেফতার হয়েছিলেন ৪০ জন। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউরোপের ইসলাম বিদ্বেষী নেতাদের তালিকায় সবার ওপরে নাম রয়েছে রাসমাস পালুদানের। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দুই বছরের জন্য সুইডেনে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এরপর জার্মান সরকারও পালুদানকে দেশে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল।

 

এদিকে, সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পল জনসনের পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করেছে তুরস্ক। আগামী শুক্রবার তুরস্ক সফরে আসার কথা ছিল সুইডিশ মন্ত্রীর। স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করার একদিন পর শনিবার তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার বলেন, স্টকহোমে তুরস্ক-বিরোধী পরিকল্পিত বিক্ষোভের কারণে এ সফর বাতিল করা হয়েছে। ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আঙ্কারাকে তার আপত্তি থেকে সরানোই ছিল জনসনের তুরস্ক সফরের লক্ষ্য।

 

সম্প্রতি সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদান নিয়ে আপত্তি তোলে আঙ্কারা। এরপর থেকে দুই দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরইমধ্যে স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের সামনে দেশটির উগ্র ডানপন্থীদের বিক্ষোভের অনুমতি দেয় সুইডেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় তুরস্ক। তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার বলেন, ‘এই মুহূর্তে সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তুরস্ক সফর তাৎপর্য হারিয়েছে। তাই আমরা সফরটি বাতিল করেছি।’ সুইডেন তাদের ভূখণ্ডে তুরস্ক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে আঙ্কারা। উল্লেখ্য, ১৪ জানুয়ারি সুইডেনে তুর্কি দূতাবাসের সামনে ডানপন্থীদের বিক্ষোভের অনুমতি দেয় সুইডেন। পরিকল্পিত এই বিক্ষোভকে ‘ঘৃণা প্রচার’ বলে নিন্দা জানান তুর্কি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন।