১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজ্য মেধাতালিকায় পূর্ব-বর্ধমানের চার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী, অসাধারণ নজির

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৯ মে ২০২৩, শুক্রবার
  • / 16

সেখ সায়ীদ ওয়াসিফ (৬৮৮, পঞ্চম)

এস জে আব্বাস, পূর্ব বর্ধমান: মাধ্যমিকের সাফল্য শহরকে ছাড়িয়ে জেলায় জয়-জয়কার। পূর্ব-বর্ধমানের সাফল্য এবার আরও নজর কেড়েছে। এবারের ১ থেকে ১০ জনের মেধা তালিকায় পূর্ব বর্ধমান থেকে স্থান পেয়েছে ১৭ জন কৃতি ছাত্র-ছাত্রী। তার মধ্যে চারজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এদের মধ্যে ৬৮৮ পেয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে সেখ সাঈদ ওয়াসিফ্।সে মিউনিসিপাল বয়েজ হাই স্কুলের ছাত্র। বাংলায় ৯৮, ইংরেজি ৯৫, অংকে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞান ১০০, জীবন বিজ্ঞান ১০০, ইতিহাস ৯৬, ভূগোল ১০০ । সে জানিয়েছে, আট – ন ঘণ্টা করে সে পড়তো এবং প্রতিটি অধ্যায়ের যেন স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়। তাহলেই ভালো রেজাল্ট সম্ভব। ভবিষ্যতে সে ডাক্তার হতে চাই। পড়াশোনার বাইরে তার গল্পের বই পড়ার নেশা। প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায়। তার পিতা সেখ সাহি আফতাপ ও মাতা সায়রা বানু দুজনেই শিক্ষক।

রাজ্য মেধাতালিকায় পূর্ব-বর্ধমানের চার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী, অসাধারণ নজির
শবনম পারভীন (৬৮৪, নবম)

সামরিন আখতার জেলার সংখ্যালঘু ছাত্রীদের মধ্যে ৬৮৬ পেয়ে সর্বোচ্চ হয়েছে। রাজ্যে সেও সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। কাটোয়া দুর্গাদাসী চৌধুরানী বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী বাংলায় ৯৩, ইংরেজিতে ১০০, অংকে ১০০ ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসের ৯৭, ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে। ভবিষ্যতে সে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ে গবেষণায় আগ্রহী। পড়াশোনা ছাড়া আঁকায় তার নেশা এবং লুকিয়ে লুকিয়ে গল্পের বইও পড়তো। বাবা মুন্সী মোহাম্মদ আবুল বারাকাত জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক। তিনি মেয়ের সক্ষমতাকে বোঝাতে বারে বারে উৎসাহ যুগিয়ে গিয়েছিলেন। তাতেই এই সাফল্য।

রাজ্য মেধাতালিকায় পূর্ব-বর্ধমানের চার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী, অসাধারণ নজির
সেখ আফিফ জাহিন (৬৮৫, অষ্টম)

তাছাড়া,সেখ আফিফ জাহিন বাঁধাধরা ছকের বাইরে গতানুগতিক নোটস বা সহায়িকা ছাড়াই চার পাঁচটি করে টেক্সট বই খুঁটিয়ে পড়ে রাজ্যে অষ্টম র‍্যাঙ্ক করেছে। বর্ধমান সিএমএস হাই স্কুলের এর এই ছাত্র পেয়েছে ৬৮৫। তারমধ্যে বাংলায় ৯৭, ইংরেজি ৯৪, অংকে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ১০০, ইতিহাসে ৯৬ ও ভূগোলে ৯৯ । বড় হয়ে তার ঠাকুমার ইচ্ছা পূরণ করতে ডাক্তার হবে নাকি তার নিজস্ব ইচ্ছা আইএস বা আইপিএস অফিসার হবে – এ নিয়েই সে দ্বিধায়। সে ভীষণ ভালোবাসে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে। কুইজে দারুন আগ্রহী। গল্পের বই পড়তেও খুব ভালোবাসে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সত্যজিৎ রায় তার পছন্দের লেখক। বাবা সেখ আবদুল সবুর একজন সমাজকর্মী। মা সাহেদা চৌধুরী পেশায় শিক্ষিকা। মা জানিয়েছেন, খুবই কম পড়ে ছেলের এই সাফল্য এসেছে। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও ওকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

রাজ্য মেধাতালিকায় পূর্ব-বর্ধমানের চার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী, অসাধারণ নজির
সামরিন আখতার (৬৮৬, সপ্তম)

অন্যদিকে,একেবারে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে রাজ্য মেধা তালিকায় নবম স্থান করে চমকে দিয়েছে পূর্ব-বর্ধমান জেলার কালনার সুলতানপুর তুলসীদাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী শবনম পারভীন। সে পেয়েছে ৬৮৪। বাংলায় ৯৭, ইংরেজিতে ৯৫, অঙ্কে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞান ১০০, ইতিহাসে ৯৪, ভূগোলে ১০০। সে জানিয়েছে, সে যে ভালো ফল করবে তা আশা করেছিল। গড়ে পাঁচ-ছ ঘন্টা করে পড়তো। ছটি বিষয়ে টিউশন ছিল। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় সে খুঁটিয়ে পড়তো। পড়াশোনার বাইরে সে গান শুনতে এবং ক্রিকেট খেলা দেখতে ভালোবাসে। অংক এবং জীবন বিজ্ঞানে তার খুবই আগ্রহ। ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণিতে তে পড়ে। বাবা সফিকুল ইসলামের ছোট্ট মুদিখানার দোকান। মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে মরিয়া তিনি। এদিকে, মা ডালিয়া খাতুন জানিয়েছেন, এই গ্রাম-বাংলা থেকে মেয়েকে পড়াশোনার জন্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবেন কিনা তাই নিয়েই চিন্তিত। লড়াকু শবনম জানিয়েছে, ভবিষ্যতে কী হবে সে জানে না, তবে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে সে বিজ্ঞানকে মানুষের ও পৃথিবীর উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে চাই।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রাজ্য মেধাতালিকায় পূর্ব-বর্ধমানের চার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী, অসাধারণ নজির

আপডেট : ১৯ মে ২০২৩, শুক্রবার

এস জে আব্বাস, পূর্ব বর্ধমান: মাধ্যমিকের সাফল্য শহরকে ছাড়িয়ে জেলায় জয়-জয়কার। পূর্ব-বর্ধমানের সাফল্য এবার আরও নজর কেড়েছে। এবারের ১ থেকে ১০ জনের মেধা তালিকায় পূর্ব বর্ধমান থেকে স্থান পেয়েছে ১৭ জন কৃতি ছাত্র-ছাত্রী। তার মধ্যে চারজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এদের মধ্যে ৬৮৮ পেয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে সেখ সাঈদ ওয়াসিফ্।সে মিউনিসিপাল বয়েজ হাই স্কুলের ছাত্র। বাংলায় ৯৮, ইংরেজি ৯৫, অংকে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞান ১০০, জীবন বিজ্ঞান ১০০, ইতিহাস ৯৬, ভূগোল ১০০ । সে জানিয়েছে, আট – ন ঘণ্টা করে সে পড়তো এবং প্রতিটি অধ্যায়ের যেন স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়। তাহলেই ভালো রেজাল্ট সম্ভব। ভবিষ্যতে সে ডাক্তার হতে চাই। পড়াশোনার বাইরে তার গল্পের বই পড়ার নেশা। প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায়। তার পিতা সেখ সাহি আফতাপ ও মাতা সায়রা বানু দুজনেই শিক্ষক।

রাজ্য মেধাতালিকায় পূর্ব-বর্ধমানের চার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী, অসাধারণ নজির
শবনম পারভীন (৬৮৪, নবম)

সামরিন আখতার জেলার সংখ্যালঘু ছাত্রীদের মধ্যে ৬৮৬ পেয়ে সর্বোচ্চ হয়েছে। রাজ্যে সেও সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। কাটোয়া দুর্গাদাসী চৌধুরানী বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী বাংলায় ৯৩, ইংরেজিতে ১০০, অংকে ১০০ ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসের ৯৭, ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে। ভবিষ্যতে সে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ে গবেষণায় আগ্রহী। পড়াশোনা ছাড়া আঁকায় তার নেশা এবং লুকিয়ে লুকিয়ে গল্পের বইও পড়তো। বাবা মুন্সী মোহাম্মদ আবুল বারাকাত জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক। তিনি মেয়ের সক্ষমতাকে বোঝাতে বারে বারে উৎসাহ যুগিয়ে গিয়েছিলেন। তাতেই এই সাফল্য।

রাজ্য মেধাতালিকায় পূর্ব-বর্ধমানের চার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী, অসাধারণ নজির
সেখ আফিফ জাহিন (৬৮৫, অষ্টম)

তাছাড়া,সেখ আফিফ জাহিন বাঁধাধরা ছকের বাইরে গতানুগতিক নোটস বা সহায়িকা ছাড়াই চার পাঁচটি করে টেক্সট বই খুঁটিয়ে পড়ে রাজ্যে অষ্টম র‍্যাঙ্ক করেছে। বর্ধমান সিএমএস হাই স্কুলের এর এই ছাত্র পেয়েছে ৬৮৫। তারমধ্যে বাংলায় ৯৭, ইংরেজি ৯৪, অংকে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ১০০, ইতিহাসে ৯৬ ও ভূগোলে ৯৯ । বড় হয়ে তার ঠাকুমার ইচ্ছা পূরণ করতে ডাক্তার হবে নাকি তার নিজস্ব ইচ্ছা আইএস বা আইপিএস অফিসার হবে – এ নিয়েই সে দ্বিধায়। সে ভীষণ ভালোবাসে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে। কুইজে দারুন আগ্রহী। গল্পের বই পড়তেও খুব ভালোবাসে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সত্যজিৎ রায় তার পছন্দের লেখক। বাবা সেখ আবদুল সবুর একজন সমাজকর্মী। মা সাহেদা চৌধুরী পেশায় শিক্ষিকা। মা জানিয়েছেন, খুবই কম পড়ে ছেলের এই সাফল্য এসেছে। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও ওকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

রাজ্য মেধাতালিকায় পূর্ব-বর্ধমানের চার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী, অসাধারণ নজির
সামরিন আখতার (৬৮৬, সপ্তম)

অন্যদিকে,একেবারে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে রাজ্য মেধা তালিকায় নবম স্থান করে চমকে দিয়েছে পূর্ব-বর্ধমান জেলার কালনার সুলতানপুর তুলসীদাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী শবনম পারভীন। সে পেয়েছে ৬৮৪। বাংলায় ৯৭, ইংরেজিতে ৯৫, অঙ্কে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞান ১০০, ইতিহাসে ৯৪, ভূগোলে ১০০। সে জানিয়েছে, সে যে ভালো ফল করবে তা আশা করেছিল। গড়ে পাঁচ-ছ ঘন্টা করে পড়তো। ছটি বিষয়ে টিউশন ছিল। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় সে খুঁটিয়ে পড়তো। পড়াশোনার বাইরে সে গান শুনতে এবং ক্রিকেট খেলা দেখতে ভালোবাসে। অংক এবং জীবন বিজ্ঞানে তার খুবই আগ্রহ। ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণিতে তে পড়ে। বাবা সফিকুল ইসলামের ছোট্ট মুদিখানার দোকান। মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে মরিয়া তিনি। এদিকে, মা ডালিয়া খাতুন জানিয়েছেন, এই গ্রাম-বাংলা থেকে মেয়েকে পড়াশোনার জন্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবেন কিনা তাই নিয়েই চিন্তিত। লড়াকু শবনম জানিয়েছে, ভবিষ্যতে কী হবে সে জানে না, তবে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে সে বিজ্ঞানকে মানুষের ও পৃথিবীর উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে চাই।