পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: যুদ্ধবিরতির চুক্তি মেনে আরও ৩ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিল স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। শনিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে দুজন এবং গাজা সিটিতে অন্য এক বন্দিকে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করে হামাস। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ইয়ারদেন বিবাস (৩৪), মার্কিন-ইসরাইলি কিথ সিগেল (৬৫) ও ফরাসি-ইসরাইলি অফার ক্যালদেরন (৫৩)।
তাদের মধ্যে ইয়ারদেন বিবাস ও অফার ক্যালদেরনকে খান ইউনিসে এবং কিথ সিগেলকে গাজা সিটিতে মুক্তি দেওয়া হয়। ওফের, ইসরাইল এবং ফ্রান্স— দু’দেশেরই নাগরিকত্ব ভোগ করেন। অন্যদিকে কেইথ আমেরিকান-ইসরাইলি নাগরিক। এদিন বন্দি বিনিময়ের সময় এবার কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। তবে আগের বৃহস্পতিবারের হস্তান্তরের সময় বেশ কিছু বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। হামাস জানিয়েছে, তিন বন্দির মুক্তির বিনিময়ে শনিবারই ১৮৩ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরাইল। উল্লেখ্য, ইয়ারদেন বিবাস দীর্ঘ ১৫ মাস যাবদ হামাসের হাতে বন্দি ছিলেন।
ইসরাইলি নাগরিক বিবাসের মুক্তির খবরে তাঁর স্ত্রী শিরি ও দুই সন্তানের ভাগ্য নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। তাঁরা সবাই ইসরাইলের কিবুৎজ নির ওজ এলাকা থেকে হামাসের হাতে আটক হয়েছিলেন। তবে পরে ইহুদি বিমান হামলায় তাঁরা সকলেই প্রাণ হারান। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরই বিবাসের দুই সন্তানকে বন্দি করেছিল হামাস। তাদের এক জনের বয়স ছিল ন’মাস এবং অপর জনের বয়স চার বছর। বিবাসের স্ত্রী সিরিও পণবন্দি হয়েছিলেন। তবে এখনও তাঁরা কেউ বেঁচে নেই।
Ofer, we’ve been waiting for you ❤️🎗️
Ofer reunites with his children after 484 days in captivity. #UntilTheLastHostage#BringThemHomeNow pic.twitter.com/0b5yoWXwli
— Bring Them Home Now (@bringhomenow) February 1, 2025
লাগাতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ঢুকে হামলা চালায় হামাস। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১২০০ জনের। আর ২৫০ জনকে পণবন্দি করা হয়। ইসরাইলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার দিন এই তিনজন অন্যদের সঙ্গে জিম্মি হয়েছিলেন। হামাসের এ হামলার অজুহাতে ওই দিন থেকেই ফিলিস্তিনের গাজায় নারকীয় তাণ্ডব শুরু করে যায়নবাদী সেনা। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আমেরিকা, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি দু’তরফের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ঠিক হয়েছে, তিন দফায় বন্দি বিনিময় করা হবে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বন্দিবিনিময় করতে চলেছে দুই পক্ষ। প্রথম দফায় মোট ৩৩ জনকে মুক্ত করার কথা হামাসের। এ সময়ের মধ্যে ১৫ জিম্মি ও কয়েক’শ ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ছয় সপ্তাহের ধাপে হামাস ৩৩ জন নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও আহত বন্দিকে মুক্তি দেবে, যেখানে প্রতি বেসামরিক জিম্মির জন্য ইসরাইল ৩০ জন বন্দি এবং প্রতি সেনার জন্য ৫০ জন বন্দি মুক্তি দেবে।
Yarden is finally back home.🇮🇱
While in the hands of his family, his wife and children are still held captive in Gaza. pic.twitter.com/mEr27RneJD
— Israel Defense Forces (@IDF) February 1, 2025
তবে বন্দিবিনিময়ের বাইরে ইসরাইলের হামলায় আহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য গাজা ছাড়ার অনুমতিও দিতে পারে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। অনুমতি পেলে তাঁরা রাফাহ ক্রসিং পেরিয়ে মিসরে যাবেন। যুদ্ধ চলাকালে গাজা থেকে বাসিন্দাদের বাইরে বের হওয়ার একমাত্র পথ ছিল এটি। তবে এই পথও মে মাসে বন্ধ করে দেয় ইসরাইল।
এই ক্রসিং আবারও খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বেসামরিক মিশনকে মোতায়েন করা হয়েছে। প্রথম দফায় হামাস-ইসরায়েল ছয় সপ্তাহ মেয়াদি এ যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত ক্রসিংটি খুলে দেওয়া।
যুদ্ধবিরতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শর্তের মধ্যে আছে ৩৩ জন জিম্মি ও প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরে নিজেদের বাড়িঘরে ফেরা ও বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া।