মুফতি মেনকঃ এক. কাউকে সাহায্য করুন যদিও আপনি জানেন যে, আপনি বিনিময়ে কিছুই পাবেন না। সত্য হল যে, কেউ সাহায্য করতে পারে যখন তাদের জন্য কিছু পাওয়ার থাকে। কিন্তু যখন লাভ করার কিছু নেই তখন কেউ সাহায্য করে সেটি হয় একটি সুন্দর হৃদয়ের প্রতিফলন। এটা প্রকৃত আন্তরিকতা প্রদর্শন করে। আপনি যদি এমন কাউকে জানেন, তবে আপনি নিশ্চয়ই ধন্য।
দুই. আপনি যখন একটি ভালো কাজ করেছেন তখন অহংকারে আচ্ছন্ন হবেন না। এটি করতে পেরেছেন, কারণ সর্বশক্তিমান এটির সুযোগ দিয়েছেন এবং আপনাকে এটি করার দিকে পরিচালনা করেছেন। এটি নিয়ে বড়াই করবেন না এবং আপনার অর্জিত সমস্ত ভালো কিছু নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, যদি এটি তাঁর জন্য না হ’ত তবে এর কিছুই ঘটত না।
তিন. অন্যরা আপনার সম্পর্কে যা বলে তা উপেক্ষা করতে শিখুন। তারা যতই সত্যকে বিকৃত করার চেষ্টা করুক না কেন- সর্বশক্তিমান জানেন আপনার অন্তরে কী আছে। তিনি আপনার উদ্দেশ্য জানেন। তিনি জানেন এর ফলাফল কি হবে। সুতরাং, বিরক্ত হবেন না এবং মানুষকে তাদের কথা বলতে দিন। শেষ পর্যন্ত একমাত্র তিনিই সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপূর্ণ।
পুনশ্চ
এক. আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হলে বা কোনও সংকটের সম্মুখীন হলে লোকেরা সাধারণত তাদের আসল রং দেখাবে। মনে রাখবেন, সুন্দর আবহাওয়ার বন্ধুদের অভাব নেই। ভালো সময়ে তারা আপনার চারপাশে থাকবে। কষ্টের সময় না-আসা পর্যন্ত তাদের আসল প্রকৃতি কখনওই দেখানো বা প্রকাশ হয় না। বৈরি সময়েই আপনি প্রকৃত বন্ধুদের চিনতে পারবেন।
দুই. সর্বশক্তিমানের কাছে সম্ভব নয় বলে কিছু থাকা অসম্ভব। সুতরাং, প্রার্থনা করতে থাকুন। কারণ তিনি নিশ্চিত করবেন যে, যখন দরজা খোলা হবে, তখন আপনি অবশ্যই এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তিনি জানেন, কখন আপনি প্রস্তুত থাকবেন; ঠিক সেই সময়েই তিনি তা দেবেন। তাই মন খারাপ করবেন না। শুধু তাঁর কাছে চাইতে থাকুন!
তিন. আপনি এই মুহূর্তে যে আবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়ে থাকুন না কেন, মনে রাখবেন, সবচেয়ে অন্ধকার রাতগুলি উজ্জ্বল নক্ষত্র তৈরি করে। শীঘ্রই সর্বশক্তিমানের অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদ আপনার উপর আসবে। আপনার সুন্দর ধৈর্যের জন্য আপনাকে পুরস্কৃত করা হবে। শক্ত করে ধরে থাকুন। হাল ছাড়ার ঔদ্যত্ব দেখাবেন না।
চার. প্রিয়জন হারানোর বিষয়টি সহ্য করা কখনই সহজ হয় না; হঠাৎ হোক অথবা ধীরে ধীরে বিদায় নিক সবটাই হৃদয়বিদারক। শোক আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এই কারণেই সর্বশক্তিমানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা খুবই জরুরি। কেবলমাত্র তিনিই আপনার হৃদয়ের ব্যথা উপশম করতে এবং এই সময়ে আপনাকে সান্ত্বনা দিতে পারেন। তাঁর কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করুন।
পাঁচ. উপলব্ধি করুন যে আপনার সাফল্য কিছু লোককে বিরক্ত করবে। প্রকৃতপক্ষে, যারা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়- এটি তাদের আহত করবে। তারা আপনার খ্যাতি নষ্ট করতে অযাচিৎভাবে চেষ্টা করবে এবং আপনার সম্পর্কে অসত্য কথাবার্তা ছড়িয়ে দেবে। তাদের এসব কাজ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না। আপনার উপর তাদের প্রকৃত কোনও ক্ষমতা নেই। সর্বশক্তিমান তা দেখবেন!
দ্রষ্টব্য
‘আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা লড়াই কর না আল্লাহ্র পথে এবং অসহায় নর-নারী ও শিশুদের পক্ষে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই জনপদ যার অধিকারী অত্যাচারী, তা থেকে নিষ্কৃতি দান করুন। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবক ঠিক করে দিন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭৫)
রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসলো, তো আল্লাহ্র জন্যই ভালোবাসলো, কাউকে ঘৃণা করল তো আল্লাহ্র জন্যই ঘৃণা করল, কাউকে কিছু দিল তো আল্লাহ্র জন্যই দিল এবং কাউকে দেওয়া বন্ধ করল তো আল্লাহ্র জন্যই দেওয়া বন্ধ করল, তবে সে তার ঈমানকে পূর্ণ করল।’ (মিশকাত শরিফ)