১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধোঁয়াশাভরা এনআরসিকেই নাগরিকত্বের নির্ধারক বলছেন হিমন্ত

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, সোমবার
  • / 11

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ এনআরসি-তে নাম অন্তর্ভুক্তিই অসমে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হবে। স্পষ্ট বক্তব্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন তিনি। গরুখুটি বা চর অঞ্চলে উচ্ছেদ হওয়া বহু মানুষের হাতেই রয়েছে আধার কার্ড– রেশন কার্ড– তারপরও কেন তারা উচ্ছেদের শিকার? এই প্রশ্নের জবাবে হিমন্ত বলেন– আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। একজন বিদেশিও আধার কার্ড পেতে পারেন। তাই আধার কোনও মতেই নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না। এরপরই অসমের মু্খ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন–  অসমে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেবে এনআরসি। সুপ্রিম কোর্টের তদারকিতে নাগরিকপঞ্জির রূপায়ণ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

কিন্তু কোন পর্যায়ে রয়েছে এনআরসি? কয়েক বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম হেনস্থার মধ্যে ফেলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয়েছে– তাকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় সে-রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই এনআরসি থেকে অসমে বসবাসকারী ১৯ লক্ষাধিক মানুষের নাম বাদ গিয়েছে– যাদের অধিকাংশই বাঙালি হিন্দু।

এ দিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার হিন্দুদের নাগরিত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতির ঢাক পিটিয়ে সংসদে পাশ করিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। আবার অসমের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে– সেই বাঙালি হিন্দুদেরই নির্বিচারে বিদেশি বলে চরম হেনস্থা করা হচ্ছে। বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকারের এমন দ্বিচারিতা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার মধ্যে কেন এতো ফারাক? অসমে এনআরসি-র রাজ্য সমন্বয়ক হিতেশ দেবশর্মা আরও একবার স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন– ২০১৯-এর ৩১ আগস্ট প্রকাশিত নাগরিকপঞ্চি চূড়ান্ত নয়। এনআরসি-র ধোঁয়াশা নিয়ে দেবশর্মার সঙ্গে দেখা করে জানতে চান অসমের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।

হিতেশ কমলাক্ষকে জানান– দু’বছর আগে এনআরসি-র পরিপূরক তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৩-এর নাগরিকত্ব বিধি অনুযায়ী– চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের একমাত্র এক্তিয়ার আছে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া বা আরজিআই-এর। এনআরসি সমন্বয়কের মতে– ২০১৯-এ যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে বিস্তর ত্রুটি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি যেসব ত্রুটি নাকি দেখিয়ে দিয়েছেন।

অসমের মু্খ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে এনআরসি সমন্বয়কও বলছেন– সন্দেহভাজন বহু বিদেশির নাম রয়ে গিয়েছে প্রকাশিত তালিকায়। সেই জন্য এর পুনর্যাচাই চেয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারও চাইছে পুনর্যাচাই বা রিভেরিফিকেশন। তবে সরকার চায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে কুড়ি এবং অন্যান্য জেলায় ১০ শতাংশ নাম পুনরায় যাচাই করা হোক। এনআরসি সমন্বয়ক হিতেশ জানিয়ে দিয়েছেন– এরকম আংশিক পুনর্যাচাইয়ে তাঁর মত নেই। প্রকাশিত তালিকায় অনেক অসংগঠিত রয়েছে। এমনকী সন্দেজনকদের নাম ওআই বা অরিজিনাল ইনহ্যাভিট্যান্ট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এমন অনেক তথ্যই ছড়িয়ে আছে সেই তালিকায়। অসম কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থকে ২০০৩-এর নাগরিকত্বের বিধিও দেখান হিতেশ। সেখানে উল্লেখ রয়েছে–  ভুল তথ্য পেশ করে এনআরসিতে নাম ওঠানোর শাস্তি হিসাবে ৫ বছরের জেল– ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দু’টোরই বিধান দেওয়া আছে। দেবশর্মার কথায়–  ২০১৯-এ প্রকাশিত তালিকায় সম্পূর্ণ রিভেরিফিকেশন হলেই বোঝা যাবে অসংগতির মাত্রাটা কতটা গুরুতর। রাজ্য সমন্বয়কের এমন মন্তব্যে– অনেকেই মনে করছেন– রিভেরিফিকেশন হলে বাঙালিদের আরও খানিকটা হয়রানির মধ্যে পড়তে হতে পারে। এবং বাদ যেতে পারে আরও অসংখ্য মানুষের নাম।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ধোঁয়াশাভরা এনআরসিকেই নাগরিকত্বের নির্ধারক বলছেন হিমন্ত

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, সোমবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ এনআরসি-তে নাম অন্তর্ভুক্তিই অসমে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হবে। স্পষ্ট বক্তব্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন তিনি। গরুখুটি বা চর অঞ্চলে উচ্ছেদ হওয়া বহু মানুষের হাতেই রয়েছে আধার কার্ড– রেশন কার্ড– তারপরও কেন তারা উচ্ছেদের শিকার? এই প্রশ্নের জবাবে হিমন্ত বলেন– আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। একজন বিদেশিও আধার কার্ড পেতে পারেন। তাই আধার কোনও মতেই নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না। এরপরই অসমের মু্খ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন–  অসমে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেবে এনআরসি। সুপ্রিম কোর্টের তদারকিতে নাগরিকপঞ্জির রূপায়ণ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

কিন্তু কোন পর্যায়ে রয়েছে এনআরসি? কয়েক বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম হেনস্থার মধ্যে ফেলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয়েছে– তাকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় সে-রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই এনআরসি থেকে অসমে বসবাসকারী ১৯ লক্ষাধিক মানুষের নাম বাদ গিয়েছে– যাদের অধিকাংশই বাঙালি হিন্দু।

এ দিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার হিন্দুদের নাগরিত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতির ঢাক পিটিয়ে সংসদে পাশ করিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। আবার অসমের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে– সেই বাঙালি হিন্দুদেরই নির্বিচারে বিদেশি বলে চরম হেনস্থা করা হচ্ছে। বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকারের এমন দ্বিচারিতা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার মধ্যে কেন এতো ফারাক? অসমে এনআরসি-র রাজ্য সমন্বয়ক হিতেশ দেবশর্মা আরও একবার স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন– ২০১৯-এর ৩১ আগস্ট প্রকাশিত নাগরিকপঞ্চি চূড়ান্ত নয়। এনআরসি-র ধোঁয়াশা নিয়ে দেবশর্মার সঙ্গে দেখা করে জানতে চান অসমের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।

হিতেশ কমলাক্ষকে জানান– দু’বছর আগে এনআরসি-র পরিপূরক তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৩-এর নাগরিকত্ব বিধি অনুযায়ী– চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের একমাত্র এক্তিয়ার আছে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া বা আরজিআই-এর। এনআরসি সমন্বয়কের মতে– ২০১৯-এ যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে বিস্তর ত্রুটি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি যেসব ত্রুটি নাকি দেখিয়ে দিয়েছেন।

অসমের মু্খ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে এনআরসি সমন্বয়কও বলছেন– সন্দেহভাজন বহু বিদেশির নাম রয়ে গিয়েছে প্রকাশিত তালিকায়। সেই জন্য এর পুনর্যাচাই চেয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারও চাইছে পুনর্যাচাই বা রিভেরিফিকেশন। তবে সরকার চায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে কুড়ি এবং অন্যান্য জেলায় ১০ শতাংশ নাম পুনরায় যাচাই করা হোক। এনআরসি সমন্বয়ক হিতেশ জানিয়ে দিয়েছেন– এরকম আংশিক পুনর্যাচাইয়ে তাঁর মত নেই। প্রকাশিত তালিকায় অনেক অসংগঠিত রয়েছে। এমনকী সন্দেজনকদের নাম ওআই বা অরিজিনাল ইনহ্যাভিট্যান্ট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এমন অনেক তথ্যই ছড়িয়ে আছে সেই তালিকায়। অসম কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থকে ২০০৩-এর নাগরিকত্বের বিধিও দেখান হিতেশ। সেখানে উল্লেখ রয়েছে–  ভুল তথ্য পেশ করে এনআরসিতে নাম ওঠানোর শাস্তি হিসাবে ৫ বছরের জেল– ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দু’টোরই বিধান দেওয়া আছে। দেবশর্মার কথায়–  ২০১৯-এ প্রকাশিত তালিকায় সম্পূর্ণ রিভেরিফিকেশন হলেই বোঝা যাবে অসংগতির মাত্রাটা কতটা গুরুতর। রাজ্য সমন্বয়কের এমন মন্তব্যে– অনেকেই মনে করছেন– রিভেরিফিকেশন হলে বাঙালিদের আরও খানিকটা হয়রানির মধ্যে পড়তে হতে পারে। এবং বাদ যেতে পারে আরও অসংখ্য মানুষের নাম।