হিমন্তের উগ্র ভাষণ কলকাতায় সাড়া জাগাতে ব্যর্থ

- আপডেট : ৪ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 15
পুবের কলম প্রতিবেদক: মুসলিম ও খ্রিস্টান বিদ্বেষ এবং তাদের নানাভাবে হয়রানি করার প্রতিযোগিতায় ইউপি-র মুখ্যমন্ত্রীকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি কংগ্রেস সদস্য ও আলফার সমর্থক থেকে সরাসরি চলে যান আরএসএস-এ। আর এখানে এসেই তিনি হাতিয়ার করেছেন গেরুয়া মহলের বহু পরীক্ষিত ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারকে।
অসমের পর মণিপুর, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে তাঁর ভাঙা ভাঙা হিন্দির ভাষণ তেমন কোনও কাজে আসেনি। ঝাড়খণ্ডে জিতেছেন হেমন্ত সোরেন। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বিজেপিকে বিজয় এনে দিতে পারেনি। কিন্তু তাতে স্তব্ধ হওয়ার পাত্র আরএসএস-এর ঝান্ডাধারী হিমন্ত নন। তিনি এবার এসে হাজির হয়েছেন ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার দ্বীপ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে। তাও আবার খোদ রাজধানী কলকাতায়।
কলকাতায় এসেছিলেন মোহন ভাগবত। তাই হিমন্ত ও অন্যান্য গেরুয়া নেতাদের যাতায়াত বেড়েছে। হিমন্ত কলকাতায় এসে কী বলবেন, তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। কারণ, বিভিন্ন দিক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিজেপির ডবল ইঞ্জিনগুলিকে কুপোকাত করে এগিয়ে চলেছে। তাই হিমন্ত এখানে এসেই বলেছেন, রাহুল গান্ধি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু ধর্মকে বিনাশ করতে চাইছেন। কিন্তু এ কথা সবাই মেনে নেবে না বুঝে হিমন্ত টেনে নিয়ে এসেছেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে। আওরঙ্গজেব নাকি হিন্দু ধর্মকে বিনাশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তাই মমতা, রাহুলও পারবেন না। হিন্দু ধর্ম অবিনশ্বর।
আওরঙ্গজেবের বহু সেনাপতি ছিলেন হিন্দু। তিনি হিন্দু মন্দিরকে স্থায়ী অনুদান দিয়েছেন, দিয়েছেন পাট্টাও। এমনকী অসমে সুদূর অসমের কামাখ্যা ম¨িরকেও আওরঙ্গজেব অনুদান দিয়েছেন। সব ভুলে হিমন্ত আওরঙ্গজেবকে প্রবল আক্রমণ করলেন। অবশ্য আওরঙ্গজেব ইন্তেকাল করেছেন প্রায় ৩০০ বছর আগে। কাজেই তাঁকে গালাগালি করলে আওরঙ্গজেবের অসুবিধা নেই। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার পাশে দাঁড়ানো মমতা ও রাহুলকে তিনি আক্রমণ করলেন। পশ্চিমবঙ্গে গো-জবাই নিষিদ্ধ নয়, এটাও হিমন্তের রাগের কারণ। হিমন্ত এরপর না থেমে বামেদেরকেও আক্রমণ করেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কৃষ্ণের অবতার বলে বর্ণনা করেন। বলেন যে, কৃষ্ণের অবতার হিসেবে মোদি ভারতবর্ষে এসেছেন। এসেই রাম মন্দির গড়লেন। তিন তালাক প্রথা বাতিল করলেন। ওয়াকফের বারোটা বাজা আসন্ন। সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি আইন হবেই। এরপর তিনি অবশ্য মুসসিমদের প্রতি একটু সদয় হন। বলেন, কোনও মুসলিম কিন্তু ভারতের (হিন্দু) ইতিহাসকে বিকৃত করেননি। বিকৃত করেছেন হি¨ুরাই। এরপর তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে হিন্দু ধর্মের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে। তাহলে এ দেশের সভ্যতা, সংßৃñতি সবকিছু সুরক্ষিত থাকবে।
কলকাতায় এই ধরনের উগ্র ভাষণ দিলেও খুব এটা ডাল গলাতে হিমন্ত পারেননি। তাই তিনি দ্রুত এই ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য ত্যাগ করেন।