২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু পরিবর্তন প্রচারে দেশের প্রধান মুখ হিনা সাইফি, চেনেন কি একে?

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ৬ অক্টোবর ২০২১, বুধবার
  • / 20

পুবের কলম প্রতিবেদক­ অর্থাভাবে একসময় লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বলেছিল পরিবার। শুধু পরিবার নয়– গ্রামের পড়শিরাও ওই একই পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু সেই মেয়ে আজ পরিবার সহ গোটা গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আজ সে জাতিসংঘের হয়ে ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচারের প্রধান মুখ।

উত্তরপ্রদেশের মীরাটের সিসোলা গ্রামের তরুণী হিনা সাইফি। এই সিসোলা গ্রামে নিম্নবিত্ত পিছিয়ে পড়া মানুষজনের বসবাস। মূলত গ্রামের বাচ্চবাচ্চা ছেলে-মেয়েরা ফুটবল তৈরির কারখানায় কাজ করে পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে। সেরকমই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল একটি পরিবারের মেয়ে হিনা সাইফি। অষ্টাদশী হিনা যখন অষ্টম শ্রেণির পাঠ শেষ করলো– সেসময় তাঁর পরিবার ও পাড়াপড়শিরা তাকে লেখাপড়া ছেড়ে কাজে যোগ দিয়ে সংসারের হাল ধরতে বলেছিল। কিন্তু হিনা সাইফির মা ফরিদা– তাঁর মনে জেদ ছিল মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবে। আর পাঁচটা পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মতো তাঁর বাচ্চা যেন শিশু শ্রমিক না হয়। তাই তার মা পরিবারের কথাকে উপেক্ষা করে পার্শ্ববতী পাতৌলতি এক আত্মীয়ের বাড়িতে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়ে দেন হিনাকে। সেখান থেকেই সে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে গ্রামে ফিরে আসে।

এরপর লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ফের বাধা পেলেও হিনার মনে জেদ চেপেছিল সে লেখাপড়া শিখবে। আর সেই কাজে তাকে সাহস জুগিয়েছে তার জন্মদাত্রী মা। মায়ের সাহসকে ভর করে সে ফের স্কুলে ভর্তি হয়। পাশাপাশি পরিবারকে অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগিতা দিতে সে ফুটবল তৈরির কাজেও লেগে পড়ে। প্রতি মাসে ১৫০০-২০০০ টাকার মাহিনায় সে এই কাজে যোগ দেয়। এইভাবেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে হিনা সাইফি এখন কলেজ ছাত্রী।

কিন্তু কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় হিনাকে। পরিবারের বক্তব্য ছিল– হিনাকে কলেজে পড়ানোর মতো সামর্থ্য নেই তাদের। এরফলে তার এক বছর নষ্টও হয়। কিন্তু সেসময় হিনার পাশে এসে দাঁড়ায় একটি এনজিও সংস্থার কর্মী মুকেশ কুমার। মুকেশবাবুই হিনাকে মীরাটের একটি বেসরকারি কলেজে স্বল্প বেতনে ভর্তি করে দেয়। এখন সে ওই কলেজে বিবিএ নিয়ে পড়াশোনা করছে।

জানা গেছে– স্কুলে পড়ার সময় হিনা পরিবেশ সচেতনতায় এলাকায় কাজ করতেন। তার স্কুল বন্ধুদের নিয়ে হিনা মানুষজনকে পরিবেশগত ভাবে সচেতনতার পাঠ দিতেন। এদিকে পড়াশোনার পাশাপাশি হিনা যুক্ত হয়ে পড়ে মুকেশবাবুর ওই এনজিওতে। গত এপ্রিল মাসে ওই এনজিও-র মাধ্যামে সে লখনৌতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।

সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বক্তব্য রেখে নজর কাড়েন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী সানিয়া আনোয়ারের। সানিয়াই জলবায়ু পরিবর্তনে ভারতে প্রচার অভিযানের মুখ হিসাবে হিনা সাইফির নাম প্রস্তাব করে জাতিসংঘে।

সেই প্রস্তাব মতো– বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ ঘোষণা করে হিনা সাইফিই ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান মুখ হিসাবে কাজ করবে। উল্লেখ্য– জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে মানুষজনকে সতর্ক করতে যুব সম্প্রদায়কে কাজে লাগাতে চাইছে। তারই একটা নমুনা হিনা সাইফি। আর দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষজনকে সচেতনতার প্রচার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়ে খুশি হিনা সাইফি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

জলবায়ু পরিবর্তন প্রচারে দেশের প্রধান মুখ হিনা সাইফি, চেনেন কি একে?

আপডেট : ৬ অক্টোবর ২০২১, বুধবার

পুবের কলম প্রতিবেদক­ অর্থাভাবে একসময় লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বলেছিল পরিবার। শুধু পরিবার নয়– গ্রামের পড়শিরাও ওই একই পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু সেই মেয়ে আজ পরিবার সহ গোটা গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আজ সে জাতিসংঘের হয়ে ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচারের প্রধান মুখ।

উত্তরপ্রদেশের মীরাটের সিসোলা গ্রামের তরুণী হিনা সাইফি। এই সিসোলা গ্রামে নিম্নবিত্ত পিছিয়ে পড়া মানুষজনের বসবাস। মূলত গ্রামের বাচ্চবাচ্চা ছেলে-মেয়েরা ফুটবল তৈরির কারখানায় কাজ করে পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে। সেরকমই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল একটি পরিবারের মেয়ে হিনা সাইফি। অষ্টাদশী হিনা যখন অষ্টম শ্রেণির পাঠ শেষ করলো– সেসময় তাঁর পরিবার ও পাড়াপড়শিরা তাকে লেখাপড়া ছেড়ে কাজে যোগ দিয়ে সংসারের হাল ধরতে বলেছিল। কিন্তু হিনা সাইফির মা ফরিদা– তাঁর মনে জেদ ছিল মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবে। আর পাঁচটা পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মতো তাঁর বাচ্চা যেন শিশু শ্রমিক না হয়। তাই তার মা পরিবারের কথাকে উপেক্ষা করে পার্শ্ববতী পাতৌলতি এক আত্মীয়ের বাড়িতে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়ে দেন হিনাকে। সেখান থেকেই সে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে গ্রামে ফিরে আসে।

এরপর লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ফের বাধা পেলেও হিনার মনে জেদ চেপেছিল সে লেখাপড়া শিখবে। আর সেই কাজে তাকে সাহস জুগিয়েছে তার জন্মদাত্রী মা। মায়ের সাহসকে ভর করে সে ফের স্কুলে ভর্তি হয়। পাশাপাশি পরিবারকে অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগিতা দিতে সে ফুটবল তৈরির কাজেও লেগে পড়ে। প্রতি মাসে ১৫০০-২০০০ টাকার মাহিনায় সে এই কাজে যোগ দেয়। এইভাবেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে হিনা সাইফি এখন কলেজ ছাত্রী।

কিন্তু কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় হিনাকে। পরিবারের বক্তব্য ছিল– হিনাকে কলেজে পড়ানোর মতো সামর্থ্য নেই তাদের। এরফলে তার এক বছর নষ্টও হয়। কিন্তু সেসময় হিনার পাশে এসে দাঁড়ায় একটি এনজিও সংস্থার কর্মী মুকেশ কুমার। মুকেশবাবুই হিনাকে মীরাটের একটি বেসরকারি কলেজে স্বল্প বেতনে ভর্তি করে দেয়। এখন সে ওই কলেজে বিবিএ নিয়ে পড়াশোনা করছে।

জানা গেছে– স্কুলে পড়ার সময় হিনা পরিবেশ সচেতনতায় এলাকায় কাজ করতেন। তার স্কুল বন্ধুদের নিয়ে হিনা মানুষজনকে পরিবেশগত ভাবে সচেতনতার পাঠ দিতেন। এদিকে পড়াশোনার পাশাপাশি হিনা যুক্ত হয়ে পড়ে মুকেশবাবুর ওই এনজিওতে। গত এপ্রিল মাসে ওই এনজিও-র মাধ্যামে সে লখনৌতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।

সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বক্তব্য রেখে নজর কাড়েন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী সানিয়া আনোয়ারের। সানিয়াই জলবায়ু পরিবর্তনে ভারতে প্রচার অভিযানের মুখ হিসাবে হিনা সাইফির নাম প্রস্তাব করে জাতিসংঘে।

সেই প্রস্তাব মতো– বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ ঘোষণা করে হিনা সাইফিই ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান মুখ হিসাবে কাজ করবে। উল্লেখ্য– জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে মানুষজনকে সতর্ক করতে যুব সম্প্রদায়কে কাজে লাগাতে চাইছে। তারই একটা নমুনা হিনা সাইফি। আর দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষজনকে সচেতনতার প্রচার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়ে খুশি হিনা সাইফি।