১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমি তো কাউকে আম্মা বলা থেকে আটকাতে পারি না’, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বার্তা মমতার

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার
  • / 15

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার দেশপ্রিয় পার্কের মঞ্চ থেকে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষেই সওয়াল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভাষণ দিতে গিয়ে বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ৷ বলেন, ‘‘আমরা ক্রমশ বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য – এসর থেকে সরে আসছি ৷’’ তিনি স্বামী বিবেকানন্দের উদাহরণ টানেন ৷ স্বামীজি বাংলা ভাষা সম্পর্কে কী বলেছিলেন সেকথাও উল্লেখ করেন ৷ তাঁর কথায়, কলকাতার ভাষার সঙ্গে অন্যান্য জায়গার ভাষা মিশে যাওয়াকেই বাংলা ভাষা বলেছিলেন স্বামীজি ৷

এর পর তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু আমরা দেখছি, বহু কারণে নানা সাম্প্রদায়িকতার ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে ৷ যে শব্দগুলো কখনও  আমরা বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দগুলো আজকে বাংলা ভাষায়  ঢুকছে ৷ আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি ব্যবহার করি না ৷ আমরা কোনোদিন কখনও দাওয়াত দিই না ৷ সুতরাং ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা ৷ এই ভাষায় কোনও সাম্প্রদায়িকতা নেই ৷ সেটাই আমরা বজায় রাখব ৷’’শুভাপ্রসন্ন যখন এই কথা বলছেন, তখন মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ পরে তিনি ভাষণ দিতে উঠে শুভাপ্রসন্নর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়াটারকে (জল) কেউ পানি বলে এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে ৷ মাকে আম্মা বলে, এটা মেনে নিতে হবে ৷ ওরা দাওয়াত বলে অতিথি সেবাকে ৷ মেনে নিতে হবে৷ আমি মাতৃভাষাকে তো বদলাতে পারি না ৷’’ এদিনভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী  শুভাপ্রসন্নের  বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ৷ মঙ্গলবার তাঁকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘ওয়াটারকে (জল) কেউ পানি বলে এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে ৷ মাকে আম্মা বলে, এটা মেনে নিতে হবে৷ একই সঙ্গে তিনি বলেন আমি তো কাউকে আম্মা বলা থেকে আটকাতে পারি না’’তার কথায়,যত বেশি বাংলা কথায় বাংলা শব্দ বৃদ্ধি পাবে, তত বেশি বাংলা ভাষাটা আরও সমৃদ্ধ হবে। আমি যদি হৃদয়টাকে ছোট করে রাখি, তাহলে তো হৃদয় আর কোনওদিনই বড় হবে না। মূল ঐতিহ্য ঠিক রেখেই যত বেশি দেওয়া নেওয়া হবে, আমি ভাষাটাকে বাড়াব। তিনি বলেন, মা বললে, সবাই জানে। মা আর মাদার কমন শব্দ। জল  কিংবা ওয়াটারও কমন শব্দ। কিন্তু ওয়াটারকে কেউ কেউ পানি বলে, এটা  মেনে নিতে হবে আপনাকে। মাকে কেউ আম্মা বলে, এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। আপনাকে তো মা বলতে কেউ বারণ করেনি। কেউ  দাওয়াত বলে অতিথি সেবাকে, এটা বাংলাদেশের ভাষা। আর বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এপারে এসেছেন, তাঁরা সযত্নে গ্রহণ করেছেন। আমি তো কারোর মাতৃভূমিকে বদলাতে পারি না। যেটা শিখে এসেছে, সেটা সে বদলাবে কীভাবে?

নতুন প্রজন্মের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন আপনারা ইংরেজি চর্চা করুন। তবে খাওয়ার টেবিলে বাবা-মায়ের সঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলুন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,এখন অনেকে বাংলা জানলেও বাংলায় কথা বলেন না। এখনকার ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে পড়াশুনা বেশি করে আমি মানছি। অন্য ভাষা শিখুন তাতে আপত্তি নেই। বরং ভালো করে শিখুন। কিন্তু, যখন বাড়িতে আমরা খেতে বসি তখন অন্তত বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলায় কথা বলা উচিত। অন্য ভাষা শিখুন কিন্তু, বাংলাকে ভুলে নয়। এখন অবাঙালীরাও আমাদের থেকে বেশি বাংলা বলে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার বলেন, সবসময় সবার উপরে রাখা উচিত নিজের মাতৃভাষাকে। আমাদের বাংলায় অনেক বর্ণ, ধর্ম শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন। তাঁর ভাষাটা আমি যদি বুঝতে পারি, তাহলে আমার ভাষাকেও তাঁকে বুঝতে হবে। আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে এটা দরকার। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই আসল।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘আমি তো কাউকে আম্মা বলা থেকে আটকাতে পারি না’, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বার্তা মমতার

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার দেশপ্রিয় পার্কের মঞ্চ থেকে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষেই সওয়াল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভাষণ দিতে গিয়ে বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ৷ বলেন, ‘‘আমরা ক্রমশ বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য – এসর থেকে সরে আসছি ৷’’ তিনি স্বামী বিবেকানন্দের উদাহরণ টানেন ৷ স্বামীজি বাংলা ভাষা সম্পর্কে কী বলেছিলেন সেকথাও উল্লেখ করেন ৷ তাঁর কথায়, কলকাতার ভাষার সঙ্গে অন্যান্য জায়গার ভাষা মিশে যাওয়াকেই বাংলা ভাষা বলেছিলেন স্বামীজি ৷

এর পর তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু আমরা দেখছি, বহু কারণে নানা সাম্প্রদায়িকতার ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে ৷ যে শব্দগুলো কখনও  আমরা বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দগুলো আজকে বাংলা ভাষায়  ঢুকছে ৷ আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি ব্যবহার করি না ৷ আমরা কোনোদিন কখনও দাওয়াত দিই না ৷ সুতরাং ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা ৷ এই ভাষায় কোনও সাম্প্রদায়িকতা নেই ৷ সেটাই আমরা বজায় রাখব ৷’’শুভাপ্রসন্ন যখন এই কথা বলছেন, তখন মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ পরে তিনি ভাষণ দিতে উঠে শুভাপ্রসন্নর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়াটারকে (জল) কেউ পানি বলে এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে ৷ মাকে আম্মা বলে, এটা মেনে নিতে হবে ৷ ওরা দাওয়াত বলে অতিথি সেবাকে ৷ মেনে নিতে হবে৷ আমি মাতৃভাষাকে তো বদলাতে পারি না ৷’’ এদিনভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী  শুভাপ্রসন্নের  বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ৷ মঙ্গলবার তাঁকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘ওয়াটারকে (জল) কেউ পানি বলে এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে ৷ মাকে আম্মা বলে, এটা মেনে নিতে হবে৷ একই সঙ্গে তিনি বলেন আমি তো কাউকে আম্মা বলা থেকে আটকাতে পারি না’’তার কথায়,যত বেশি বাংলা কথায় বাংলা শব্দ বৃদ্ধি পাবে, তত বেশি বাংলা ভাষাটা আরও সমৃদ্ধ হবে। আমি যদি হৃদয়টাকে ছোট করে রাখি, তাহলে তো হৃদয় আর কোনওদিনই বড় হবে না। মূল ঐতিহ্য ঠিক রেখেই যত বেশি দেওয়া নেওয়া হবে, আমি ভাষাটাকে বাড়াব। তিনি বলেন, মা বললে, সবাই জানে। মা আর মাদার কমন শব্দ। জল  কিংবা ওয়াটারও কমন শব্দ। কিন্তু ওয়াটারকে কেউ কেউ পানি বলে, এটা  মেনে নিতে হবে আপনাকে। মাকে কেউ আম্মা বলে, এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। আপনাকে তো মা বলতে কেউ বারণ করেনি। কেউ  দাওয়াত বলে অতিথি সেবাকে, এটা বাংলাদেশের ভাষা। আর বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এপারে এসেছেন, তাঁরা সযত্নে গ্রহণ করেছেন। আমি তো কারোর মাতৃভূমিকে বদলাতে পারি না। যেটা শিখে এসেছে, সেটা সে বদলাবে কীভাবে?

নতুন প্রজন্মের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন আপনারা ইংরেজি চর্চা করুন। তবে খাওয়ার টেবিলে বাবা-মায়ের সঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলুন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,এখন অনেকে বাংলা জানলেও বাংলায় কথা বলেন না। এখনকার ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে পড়াশুনা বেশি করে আমি মানছি। অন্য ভাষা শিখুন তাতে আপত্তি নেই। বরং ভালো করে শিখুন। কিন্তু, যখন বাড়িতে আমরা খেতে বসি তখন অন্তত বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলায় কথা বলা উচিত। অন্য ভাষা শিখুন কিন্তু, বাংলাকে ভুলে নয়। এখন অবাঙালীরাও আমাদের থেকে বেশি বাংলা বলে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার বলেন, সবসময় সবার উপরে রাখা উচিত নিজের মাতৃভাষাকে। আমাদের বাংলায় অনেক বর্ণ, ধর্ম শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন। তাঁর ভাষাটা আমি যদি বুঝতে পারি, তাহলে আমার ভাষাকেও তাঁকে বুঝতে হবে। আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে এটা দরকার। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই আসল।