রোগী-পরিজন ও ডাক্তারদের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করতে চাই: আইএমএ-এর রাজ্য সভাপতি ডা. আবুল কাশেম

- আপডেট : ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার
- / 6
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। চালু হয়েছে স্বাস্থ্যস্বাথী, গড়ে উঠেছে আরও হাসপাতাল। মেডিক্যালের পড়ুয়াদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন এবং চিকিৎসক-রোগীর পরিজন সম্পর্ক দৃঢ় করাই একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে জানালেন, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) রাজ্য সভাপতি প্রাক্তন বিধায়ক ডা. আবুল কাশেম। তিনি পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য। ইউনানি কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বেলোনা নার্সিং হোম এবং আর. ফ্লেমিং হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা-ডিরেক্টর হিসেবে যুক্ত তিনি। ডায়মন্ডহারবার রোগী কল্যাণ কমিটির সদস্য পদের পাশাপাশি মঞ্জুসা-ওয়েস্ট বেঙ্গল হ্যান্ডিক্রাফট ডেভালপমেন্ট করপোরেশন-এর ডিরেক্টর সহ বিভিন্ন সংস্থার পদে নিযুক্ত। পুবের কলম প্রতিবেদক সেখ কুতুবউদ্দিনকে তাঁর একগুচ্ছ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন।
পশ্চিমবঙ্গে আইএমএ- কী ধরনের কাজ করছে। সভাপতি হিসেবে আগামীতে আপনার লক্ষ্য কী?
প্রথমে চিকিৎসক-রোগীপরিজন সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে। বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও রোগী-পরিজন সম্পর্ক তিক্ত হয়। চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলব, রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার জন্য পরিজনরা মানসিকভাবে চিন্তিত থাকেন, তাদের মাথার ঠিক থাকে না। চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটু বিলম্ব হলেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠেন পরিজনরা।
সেদিকে যাতে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা লক্ষ্য রাখেন, তার জন্য আবেদন রইল। পাশাপাশি চিকিৎসকদের উপর আক্রমণ কখনই উচিত নয়। অবশ্যই আক্রমণ হলে প্রতিরোধ করবে অ্যাসোসিয়েশন। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া আইএমএ’র সঙ্গে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
আরও কী কী করণীয় রয়েছে?
চিকিৎসকদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি আইএমএ-এর সদস্য সংখ্যা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন আইএমএ-এর সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৪০ শতাংশ। সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করার ‘টার্গেট’ রয়েছে। ইতিমধ্যে সেই কাজও শুরু হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে আইএমএ-এর নেতৃত্বদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।
চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে আপনার কী পরামর্শ?
চিকিৎসকরা পরিষেবা দিচ্ছেন। কিন্তু রোগীদের প্রতি সহানুভূতি না দেখানোর অভিযোগ অনেক সময় ওঠে। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, ন্যাচোরোপ্যাথি প্রভৃতি চিকিৎসা পরিষেবার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ডাক্তার যে-কোনও প্যাথিতেই চিকিৎসা পরিষেবা দিন না কেন, প্রথম হচ্ছে ‘সিমপ্যাথি’।
সম্প্রতি পুরীতে আইএমএ’র কনফারেন্সে গিয়েছিলেন। পুরীর চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে এ রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের কী পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন?
পুরীতে আইএমএ’র কনফারেন্স ছিল, বাংলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভালো পারফরমেন্সের জন্য এফসিজিপি সম্মান দেওয়া হয়েছে।
তবে আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক গুণ ভালো হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পুরীতে রাস্তাঘাট ভালো।
এই রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী স্কীম নিয়ে কিছু বলুন।
এই রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী স্কীম খুবই ভালো। তবে বহু হাসপাতালে স্বাস্থ্যস্কীমের টাকা পেতে সমস্যা হচ্ছে। প্রাইভেট হাসপাতাল রোগীদের অনেক সময় ‘রিফিউজ’ করছে। এটা বড় সমস্যা। এই নিয়ে সরকারের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে, একই সঙ্গে যাতে আয়ুষ্মান ভারতকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আগামী দিনে আয়ুষ্মান ভারত পশ্চিমবঙ্গেও চালু হবে। দারিদ্র-সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষরা এই সুবিধা পাবে।
তবে রাজ্যের ১১ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা পাচ্ছে। এই ব্যবস্থা ভারতের কোথাও নেই। ইংল্যান্ড ও আরব দেশে স্বাস্থ্য পুরোপুরি সরকার দেখে। পুরোপুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে ৯০ শতাংশ সফল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। আগামী দিনে যাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সার্বিক সহায়তা করা যায়, তার পুরোপুরি সহযোগিতা করবে রাজ্যের আইএমএ-এর প্রতিনিধিরা।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের হাল-হকিকত সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
এখন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ২০১১ সালের আগে স্বাস্থ্য ক্ষেত্র ছিল বেহাল। সরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের অনীহা ছিল। এখন সরকারি হাসপাতালগুলি হয়েছে ঝাঁ চকচকে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে। সাধারণ মানুষ ন্যূনতম চিকিৎসাটুকু পাচ্ছেন।