পুবের কলম প্রতিবেদক: আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে-দুবাই যেন সেই আবহেই ক্রিকেট রাজার আবহে রাজকীয় ক্রিকেট উপভোগ করল রবিবাসরীয় দুবাইয়ে। বিরাট মরুতে কোহলি যেন সেই মরুদ্যান, যা চোখকে প্রসন্ন করে। দূর থেকে মনকে ভরিয়ে তোলে অনাবিল আনন্দে। রাজা বিরাট নিজে যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ, আর সেই যুদ্ধজয় ভারতের। এর থেকে সুখকর আর কিই বা হতে পারে। ফের একবার বিরাট খেললেন, আর ভারত অনায়াসে হারিয়ে দিল পাকিস্তানকে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেই ছিটকে গেল পাকিস্তান। আর সেমিফাইনাল নিশ্চিত হল ভারতের। আর রেকর্ড? সে তো যেন তৈরিই হয় বিরাট কোহলির জন্য। ৫১ নম্বর ওয়ানডে সেঞ্চুরি, দ্রুততম ১৪০০০ রান, ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাচের রেকর্ড সবই এখন রাজা বিরাটের দখলে। মাত্র ১৫ রান করলেই তিনি পৌঁছে যেতেন একদিনের ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের ক্লাবে। এদিন হ্যারিস রউফকে চোখ জুড়নো কভার ড্রাইভে চার মেরে নিজের ওয়ানডে কেরিয়ারের ১৪০০০ রান পূরণ করে ফেললেন বিরাট। শচীন যেখানে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৪০০০ রান পূরণ করতে নিয়েছিলেন ৩৫০টি ওয়ানডে ইনিংস, সেখানে বিরাট নিলেন মাত্র ২৮৭টি ওয়ানডে ইনিংস। সাঙ্গাকারা ১৪০০০ রানে পৌঁছতে নিয়েছিলেন ৪৭৮টি ইনিংস। বিরাট সবাইকে ছাপিয়ে প্রমাণ করলেন, একদিনের ক্রিকেটে তিনিই রাজা।
এদিন যখন টসে হারলেন রোহিত শর্মা, অনেকেই হায় হায় করে উঠেছিলেন। শামিও তাঁর বোলিংয়ে খুব একটা মন কাড়তে পারলেন না। কিন্তু হর্ষিত রানা, কুলদীপ যাদব এবং সর্বোপরি হার্দিক পান্ডিয়া পাকিস্তানের ব্যাটিংকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখলেন আড়াইশো রানে মধ্যে। সাম্প্রতিক কালে একটা প্রবাদ খুব প্রচলিত, বাবর রিজওয়ান রান পেলে ভারতের মতো বড় দলের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বড় রান তোলা বা জেতা খুব মুশকিল। তা সে যতই পাক বোলিংয়ে শাহীন শাহ আফ্রিদি, হ্যারিস রউফের মতো বোলার থাকুন না কেন। ব্যর্থ বাবর। রিজওয়ান ৪৬ রানে ফেরার পরেই পাকিস্তানের কপাল লিখন হয়ে গিয়েছিল। সাউদ শাকিল ৬২ রান না করলে পাকিস্তান এদিন দুশো পেরোতো কিনা সন্দেহ ছিল। সেটাও অবশ্য পেরোলো ভারতীয় ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের দৌলতে। এরই মধ্যে বিরাট কোহলি আবার ভারতীয়দের মধ্যে ক্যাচের রেকর্ড গড়লেন। মুহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে পেরিয়ে তিনি এখন ভারতের সর্বোচ্চ ক্যাচ সংগ্রাহক। আজহারউদ্দিনের ক্যাচের সংখ্যা ১৫৬টি। পাকিস্তান ইনিংসের ৪৭তম ইনিংসে এদিন নাসিম শাহের ক্যাচ ধরে বিরাট ভারতীয় হিসেবে সর্বোচ্চ ক্যাচ ধরার মালিক হলেন। হার্দিক ও কুলদীপ ম্যাজিকে পাকিস্তান সীমাবদ্ধ রইল ২৪১ রানে।
রোহিত শর্মা ফিরে যাওয়ার পরেও গিল খেললেন নিজের স্টাইলে। ৪৬ রানে তিনি ফেরার পর বিরাট যেন আরও দায়িত্বশীল হয়ে গেলেন। বোঝালেন পাকিস্তানের মতো বড় মঞ্চ যেন তাঁর জন্যই তৈরি। তাঁর এক একটা শট যেন রাজকীয় অসি চালনার এক একটি শিল্প। কখনও চোখ ধাঁধানো কভার ড্রাইভ, কখনও দুর্দান্ত সব পুল, আবার কখনও বা কব্জির মোচড়ে দৃষ্টিন¨ন ড্রাইভ। এরই মধ্যে দ্রুত হাফ সেঞ্চুরিতে শ্রেয়স আইয়ার যেন রাজা বিরাটের প্রধান সেনাপতি হিসেবে সঙ্গ দিলেন। ৫৬ রানে ইমাম উল হকের অবিশ্বাস্য ক্যাচে ফিরলেন শ্রেয়স। শেষ পর্যন্ত আবরারকে বাউন্ডারি মেরে নিজের ৫১ নম্বর ওয়ানডে সেঞ্চুরি ও ভারতের জয় এনে দিয়ে বিরাট বোঝালেন বড় মঞ্চে তিনিই রাজা।